খামারের পাশে সরু খালের মতো গর্তে জমা করে রাখা হয়েছে মুরগির বিষ্ঠা। আর পঁচা বিষ্ঠায় কিলবিল করছে পোকামাকড়। বিষ্ঠার উৎকট গন্ধ্যে খামারের আশপাশে দাঁড়ানোই কষ্টকর; সেখানে খুব কাছেই বাধ্য হয়েই বসবাস করছে একটি পরিবার। একটু অদূরে রয়েছে আরো ১১ পরিবার। সব পরিবারে শিশুসহ প্রায় শখানেক মানুষের বসবাস।
খামারের পাশ দিয়ে যাতায়াত করছে গ্রামের বহু মানুষ। রয়েছে একটি মসজিদও। কিন্তু বিষ্ঠার উৎকট গন্ধে সবার পেটের নাড়ী ভুঁড়ি বের হওয়ার মতো হয়। এমন বন্ধি দশা থেকে মুক্তি চেয়ে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, স্যানেটারী ইন্সপেক্টর এবং গ্রাম্য আদালতে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। গত ৫ বছর ধরে চলে আসছে এ অবস্থা।
কিন্ত এমন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায় শতাধিক গ্রামবাসী ও তাদের শিশুরা। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বেলাল ভূইঁয়া নামের একব্যক্তি ও তার ভূইঁয়া পোল্ট্রি খামারের বিরুদ্ধে এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার মতো এমন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। খামারের পঁচা বিষ্ঠা এবং পোকামাকড় মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে সেগুলো পুরো এলাকা ছড়িয়ে পড়বে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি বাড়ির সামনে বেলালের পোলট্রি খামার। খামারের পাশেই একটি মসজিদ আছে। খামারের উত্তর ও পশ্চিম পাশে সরু নালার পানিতে পোকা মাকড় কিলবিল করছে।
পলিথিনের হালকা কাপড় দিয়ে বিষ্ঠা ঢেকে রাখা হয়েছে। কিন্ত বিষ্ঠা থেকে অনবরত দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। খামারের বিষ্ঠার তীব্র দুর্গন্ধে দুই বাড়ি ১২ পরিবারের বাসিন্দাদের বসবাস করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। এসময় ২ শিশু তাদের কষ্টের কথা জানিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছে। কয়েকজন মুসুল্লি জানিয়ে তাদের মসজিদে নামাজ আদায় ব্যাহত হচ্ছে। কয়েক বছর থেকে তারা এমন দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমন পরিস্থিতিতে বাড়িঘরে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
তাই প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জাবের উদ্দিন নামে এক ভূক্তভোগী বলেন, আমি গত বছর ইউনিয়ন পরিষদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যান খামারের মালিক বেলালকে খামার সরিয়ে নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে রায় দিয়েছেন। কিন্তু সে কোন কর্নপাত করেনি।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের দু’পক্ষকে ডেকেছেন। এলাকাবাসীর যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য খামারের মালিককে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এদিকে ভূক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানেটারী ইন্সপেক্টর মো. রিয়াজ উদ্দিন সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। গত ২৪ এপ্রিল তার দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বেলালের খামারের মুরগীর বর্জ্য পাশ্ববর্তী একটি গর্তে অরক্ষিতভাবে ফেলা হচ্ছে।
এতে আশেপাশের বাড়িঘরের লোকজন ও শিশুরা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে স্থানীয়ভাবে তদন্তে জানা গেছে। বেলালের খামারে দূষিত হচ্ছে বলে সরেজমিন তদন্তে উঠে আসে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, খামারের মালিক বেলাল যাতে পরিবেশ এবং এলাকাবাসীর ক্ষতি না করে খামার পরিচালনা করে, তাকে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী চাচ্ছে এলাকায় যাতে এমন ভিতিকর নোংরা কোন প্রতিষ্ঠান না থাকে। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের নিকট উপর্যুক্ত সমাধান আশা করছেন।
0Share