বিয়ের ২৫ দিন পর পরকীয়া জড়িয়ে স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে হত্যার দায়ে ৫ বছর পর স্বামী মোঃ শাহজাহানের আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর আদালত।
বুধবার (২০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। জেলা জজ আদালতের সরকারী কৌঁশুলী (পিপি) অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২২ আগষ্ট আসামী মো. শাহ জাহান তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের মাথায় আঘাত করে এবং পুকুরের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে। আদালতে তার দেওয়া জবানবন্দি এবং স্বাক্ষ প্রমানের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার ঘটনার ৫ বছর পর এ মামলার রায় প্রদান করা হয়।
মামলার বাদি নিহত ফাতেমা বেগমের ভাই মো. মহিউদ্দিন (৩৫)। দণ্ডপ্রাপ্ত শাহ জাহান নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের বাউগ্যা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। ভিকটিম ফাতেমা পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর আলগী গ্রামের আলী আকাব্বরের মেয়ে।
আদালত ও মামলা সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই পারিবারিকভাবে শাহ জাহানের সাথে ফাতেমা আক্তারের বিয়ে হয়। এরপর থেকে যৌতুকের দাবিতে তার স্বামী তাকে নির্যাতন করতো। এরই মধ্যে প্রতিবেশী এক মেয়ের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে শাহ জাহানের। তাই ফাতেমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
বিয়ের কয়েকদিন পর ২১ আগষ্ট শাহ জাহানকে নিয়ে ফাতেমা রামগতির চর আফজাল গ্রামে তার বোন রাশেদা বেগমের বাড়িতে অতিথি হিসেবে যায়। ওইদিন রাতে তারা সেখানে অবস্থান করে। সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে দুইজনে বাড়ির কাছের একটি পুকুরে গোসল করতে যায়। দীর্ঘ সময়েও তারা ঘরে ফিরে না যাওয়ায় বাড়ির লোকজন তাদের খুঁজতে থাকে। তবে পুকুর পাড়ে তাদের কাপড় রাখা ছিল। সকাল ৯ টার দিকে পুকুরের পানিতে ফাতেমা আক্তারের মৃতদেহ ভেসে উঠে। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। তবে ফাতেমার স্বামী শাহ জাহানের কোন খোঁজ ছিল না।
সূত্র আরও জানায়, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ফাতেমার মাথায় আঘাত ও পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জনানো হয়। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর ফাতেমার ভাই মো. মহিউদ্দিন ফাতেমার স্বামী শাহ জাহানসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামী করে রামগতি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১১ নভেম্বর চট্রগ্রাম থেকে শাহ জাহানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
এছাড়া তার স্বীকারেক্তি অনুযায়ী শাহ জাহানের পরকীয়া প্রেমিকের ভাই রায়হানকেও গ্রেফতার করা হয়। তবে তদন্তে তার দোষ প্রমানিত হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল রামগতি থানার উপপরিদর্শক আবদুল হাই আসামী শাহ জাহানকে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে রায়হানকে নির্দোষ উল্লেখ করা হয়।
আদালত স্বাক্ষ প্রমানের ভিত্তিতে শাহ জাহানের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেন। রায়ের সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল। গ্রেফতারের পর থেকে সে কারাগারে বন্দি আছে।
0Share