সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বুধবার , ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উপকূলীয় অঞ্চলে গ্রাম্য সালিশে অনিহা !

উপকূলীয় অঞ্চলে গ্রাম্য সালিশে অনিহা !

0
Share

উপকূলীয় অঞ্চলে গ্রাম্য সালিশে অনিহা ! প্রতিকী ছবি

গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমবেশি সালিশি ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান গ্রাম আদালতে। ছোটখাটো ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারির ঘটনাও মীমাংসা হয় এ আদালতে সালিশের মাধ্যমে। লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চল রামগতির বিভিন্ন ইউনিয়নে দিনে দিনে সেই গ্রাম্য সালিশি ব্যবস্থায়ও ঢুকে পড়েছে পক্ষপাতিত্ব, রাজনীতি ও অবৈধ অর্থের লেনদেন। কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতেও চলছে বিচারের নামে প্রহসন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। আর বেড়ে যাচ্ছে অপরাধের মাত্রা। বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা।

প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে গুরুদায়িত্বঃ পদত্যাগ, অপসারণ, মৃত্যুজনিত অথবা অন্য যে কোন কারণে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হইলে কিংবা বিশেষ কারণে অনুপস্থিতি, অসুস্থতাহেতু বা অন্য যে কোন কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানের প্যানেল হইতে অগ্রাধিকারক্রমে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কিছু কিছু ইউনিয়ন প্যানেলের উপর ভর করেই চলছে। চেয়ারম্যানের চেয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানের সীল মোহর জন সাধারণের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে বেশি, এনিয়ে জনমনে প্রশ্ন। 

স্থানীয় মেম্বার ও প্রভাবশালীদের দিয়ে সালিশঃ চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত না খেকে স্থানীয় মেম্বার ও প্রভাবশালীদের দিয়ে সালিশ করানো। এর ফলে সুষ্ঠু বিচার পায় না ভুক্তভোগী। কিছু কিছু ইউনিয়নে সালিশ করানোর জন্য রয়েছে কিছু উপদেষ্টা তাদের কাজই হলো শুধু বিচার করে সংসার চালানো। জমি-জমা সংক্রান্ত কাজে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা, এবার ভুক্তভোগী বিচার পাক আর নাই পাক।

কচ্চপের গতিতে অভিযোগের শুনানীঃ ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিয়ে যদি কোন উচ্চ পর্যায়ের সুপারিশ থাকে তাহলে তড়িৎ গতিতে বিচার নিষ্পত্তি হয়। আর অধিকাংশ জন সাধারণকে এনিয়ে বেগ পেতে হয়।

ভিলেজ পলিটিক্সের জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ : গ্রামে সালিশ আগের তুলনায় অনেকটা ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। ভিলেজ পলিটিক্সের ফাঁদে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। ক্ষমতার দাপটে কোণঠাসা প্রবীণরাও। নিরীহ মানুষ এমন ভোগান্তির শিকার। ভোটারের ভোটের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন।

নিষ্ক্রিয় গ্রাম আদালত : ২০১৬ সালে গ্রাম আদালত কার্যকর হয়। প্রচলিত আদালতে মামলাজট কমাতে এই গ্রাম আদালত গঠন করা হয়। এই আদালত সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে। এই আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে- চুরি, ঝগড়া, প্রতারণা, ভয়ভীতি দেখানো, নারীকে অমর্যাদা করা, পাওনা টাকা আদায়, গবাদিপশুর ক্ষতির মতো বিরোধের নিষ্পত্তি কার্যক্রম। গ্রাম আদালতকে সক্রিয় করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় প্রকল্প নেওয়া হয়। গ্রাম আদালতের প্রধান হলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। সঙ্গে থাকে পাঁচজন ইউপি সদস্যের একটি প্যানেল।

গ্রাম আদালতের সুফলও আছে : ছোটখাটো অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ সুফল যুগে যুগে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সালিশ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সমাজের নানা অসঙ্গতি অন্যায়-অবিচার দূর করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক বিচার ব্যবস্থা মানুষকে অনেক শান্তি স্বস্থি ও নিরাপদ করেছে। আর এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে সমাজহিতৈষী কিছু সালিশ ব্যক্তিদের জন্যে। স্বেচ্ছাসেবামূলক এসব কাজে নিজের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে সালিশিরা নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করতেন। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখন সালিশ বৈঠকে বসার আগে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি কোন না কোনভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। ন্যায় নীতিকে অবজ্ঞা করে পক্ষপাতদুষ্টে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এতে ব্যক্তি সাময়িক উপকৃত হলেও বিচারের বাণি যেন নিভৃতে কাঁদে। মানুষ সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই তাদের জন্য যেমন আইন আদালতের দরজা খোলা রয়েছে ঠিক সেভাবে সালিশ বিচার ব্যবস্থাও পাশে রয়েছে।

থানাতেও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা : আদালতে মামলা চালানোর ভয়ে অনেকেই আদালতে যেতে চান না। পাশাপাশি গ্রামের ‘টাউট বাটপার’ এক শ্রেণির লোকের খপ্পরে পড়ে কেউ কেউ আদালতে না গিয়ে গ্রাম্য সালিশের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়েন।

বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় গ্রাম্য আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। অনেক ক্ষেত্রে সালিশের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করে খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার সর্বনিন্ম স্তর হচ্ছে গ্রাম আদালত। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষ কর্তৃক মনোনীত দুইজন করে মোট চারজন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। ন্যায়বিচার করলে গ্রাম আদালতের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। ছোটখাটো বিরোধ মেটাতে গ্রাম আদালত কার্যকর ভূমিকা পালন এবং নিষ্ক্রিয় আদালতগুলো পুরোপুরি সক্রিয় করতে পারলে মামলাজট কিছুটা হলেও কমবে এবং দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে সাধারণ মানুষ। তবে গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্তগুলো নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত হচ্ছে কি না, তার তদারকি থাকতে হবে। তাহলেই কেবল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

 

মিসু সাহা নিক্কন/22

লক্ষ্মীপুর নিউজ আরও সংবাদ

রামগতিতে দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

সাংবাদিক জিয়া চৌধুরীর বাবা মাহাবুবের রহমান আর বেঁচে নেই

রামগতিতে আদালতের স্থিতাবস্থা মানছেন না অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ

গরমের শুরুতে রামগতিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, ভোগান্তিতে উপকূলের গ্রাহক

রামগতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই

কমলনগরে চার্টার্ড লাইফের মৃত্যু বীমা দাবি চেক হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com