কাজল কায়েস, জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক: রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা ও শৈরশৈই গ্রাম দুটি ছিল সবুজে ঘেরা, যা পশুপাখির কলকাকলিতে থাকত মুখরিত। কিন্তু কয়েক বছরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সাতটি ইটভাটার প্রভাবে গ্রাম দুটি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় ২২টি ইটভাটার মধ্যে ১৪টিই অবৈধ। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ ইটভাটা নিয়ে তাঁর কিছুই করার নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে ওঠায় তাদের কষ্টের শেষ নেই। এসব ভাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। প্রভাবশালী ভাটা মালিকদের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতেও ভয় পায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের বিধান নেই। কিন্তু কয়েক বছরে উপজেলার ভোটাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে চারটি আর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের শৈরশৈই গ্রামে তিনটি ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, পুরনো টায়ার ও রাবার।
গ্রামবাসীর ভাষ্য মতে, সাত-আট বছর আগে দেহলা গ্রামে প্রভাবশালী আমির হোসেন ওরফে ডিপজল একটি ইটভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেন। তখন গ্রামের লোকজন বাধা দিলে একপর্যায়ে তিনি সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা নিয়ে এমবিএফ ব্রিকস নামের ভাটার কাজ শেষ করেন। এরপর তাঁর দেখাদেখি আরো তিনটি ভাটা গড়ে ওঠে। পাশের শৈরশৈই গ্রামেও তিনটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।
সূত্র মতে, ইটভাটাগুলোতে কয়লা পোড়ানোর কথা থাকলেও রামগঞ্জে তা মানা হচ্ছে না। সেখানে কাঠ, পুরনো টায়ার ও রাবার পোড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া ইট তৈরির জন্য দালালদের মাধ্যমে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে আসা হয়। তারা জমির মালিকদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাটি কেটে নিয়ে আশপাশের কৃষিজমি জলাশয়ে পরিণত করছে। ভাটার ইট ও মাটি ট্রাক্টরযোগে আনা-নেওয়ার কারণে উপজেলার সড়কগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
দেহলা গ্রামের কৃষক মনু মিয়া বলেন, ইটভাটা করতে নিয়ম বলে কিছু নেই। নিয়ম থাকলে দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা হয় কিভাবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ইটভাটাগুলো চলছে। জাতীয় ও স্থানীয় প্রায় সব কর্মসূচির নামে ভাটা মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়। সে কারণেই প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে।
নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আকবর হোসেন বলেন, ‘টাকার কাছে সব ম্যানেজ। তিনটি ইটভাটার কারণে সব রাস্তা ভেঙে গেছে। পরিবেশে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রশাসন এসব অভিযোগ কানেই তুলছে না।’ এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে শৈরশৈই গ্রামের রাবেয়া ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আবুল খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানতে চান, তাঁর ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী কারা? এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘ইটভাটার তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থাকে। অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে আমার করার কিছু নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক অভিযান চালানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. গোলাম ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগবালাই দেখা দেয়। এ ছাড়া পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
0Share