লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর প্রতিবেদন: দেশের বিভিন্ন নদী বন্দর ও আবহাওয়া অফিস সব মিলে মোট ২৭টি অফিসে বসছে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। যার মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর সেকান্তর গ্রামে অবস্থিত আবহাওয়া কেন্দ্রে একটি পর্যবেক্ষণাগার বসবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
২৭টি নৌ ও আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিতে পূর্ণাঙ্গ ও পুরাতন নদীবন্দরের ১৩টিতে বসানো হচ্ছে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। বর্তমানে ৮টি নদীবন্দরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণাগার রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রের এ তথ্য জানাগেছে।
জানা যায় নদীবন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার না থাকায় নৌবন্দরগুলোতে চলাচলরত নৌযানসহ স্থানীয় অধিবাসী ও জেলেদের কালবৈশাখী, টর্নেডো, বজ্রপাতসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সঠিক ও লিড-টাইম পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন নৌযান এবং অনেক যাত্রীর প্রাণহানি ও মালামালের ক্ষতি হচ্ছে। তাই দুর্ঘটনারোধে সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্র ও ডরমেটরি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজসহ পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোকে ঢাকা ঝড়সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং চালু করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের ১৩টি নদীবন্দরে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের যে ১৪টি পুরাতন ও পূর্ণাঙ্গ নৌবন্দরে আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণাগার নেই সেগুলো হচ্ছে, লক্ষীপুরের রামগতি, চাঁদপুরের চাঁদপুর সদর, বরিশাল সদর, হিজলা, পিরোজপুরের কাউখালী, পটুয়াখালী সদর, মনপুরা, খুলনার কয়রা ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী, নরসিংদী সদর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নৌপথে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রঝড় ও টর্নেডো সম্পর্কে সঠিক ও আগাম পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে নৌ-দুর্ঘটনারোধ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে নৌযানগুলোতে যাত্রীদের প্রাণহানি এবং মালামালের ক্ষয়ক্ষতি কমবে। নদীবন্দর এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ, জেলেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়ার যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে নদীবন্দর এবং নৌপথে আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে আবহাওয়া অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়বে।’
লক্ষ্মীপুরের রামগতি আবহাওয়া কেন্দ্র: ২০০৮-০৯ অর্থবছরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের চর সেকান্তর গ্রামে দেড় একর জমি অধিগ্রহন করে নির্মাণ করা হয় রামগতি আবহওয়া কেন্দ্র। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় অভ্যন্তীরন নৌ-চলাচল স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের জন্য কেন্দ্রটি র্নিমান করে।
এখানে ২টি ভবন রয়েছে। যার একটি মূল অফিস এবং অন্যটি কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকার জন্য ডরমেটরি। রয়েছে আবহওয়া এন্টেনা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কিন্তু নির্মানের পর থেকেই এটি কখনো সচল হয়নি। জেলাবাসি জানে এ অফিসে কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নেই।
অথচ সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে খোঁজ নিলে জানা যায়, গত ২ বছর থেকে রামগতি আবহাওয়া আফিসের পক্ষ থেকে ৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরকারি বেতন গ্রহন করছেন। যার মধ্যে কর্মকর্তা পদে রয়েছেন সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার ১ জন , বেলুন মেকার ১জন এবং ২ জন আনসার সদস্য।
এ অফিসের প্রধান কর্মকর্তা সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার মোঃ সোহরাব হোসেন মোবাইল ফোনে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরকে জানান, ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসের ১ তারিখ থেকে তারা এ অফিসে কাজ করছেন।
0Share