সানা উল্লাহ সানু: লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাট রহমতখালী খালের ওপর নির্মিত দুইটি রেগুলেটর ( সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা) এর ২৮টি গেটের মধ্যে ২৩টি বন্ধ। গেট বন্ধ থাকায় জোয়ারের পানি আশপাশের খালে পৌঁছে না। পানি না থাকায় কৃষকরা ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেনা। রোপন করা যাচ্ছে না ধানের চারা। যে কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক। তাছাড়া, বিকল্প বৈদ্যুতিক জেনারেটর না থাকায় জোয়ার-ভাটার সময় রেগুলেটরের সচল থাকা ৫টি গেট ও যথাসময়ে খোলা ও বন্ধ করা যায় না। কৃষকদের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও উদাসীনতায় এমন অব্যস্থাপনায় চলছে শুধু লক্ষ্মীপুরই বরঞ্চ বৃহত্তম নোয়াখালীর এ বৃহৎ রেগুলেটরের কার্যক্রম।
রেগুলেটরের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে জেলার কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রাম ও পাশ্ববর্তী সদর উপজেলা ভবনীগঞ্জের চর উভূতি গ্রামের ৫শতাধিক ইরি-বরো চাষী। কৃষক পানির অভাবে জমিতে লাঙল দিতে পারছে না। যে কারণে চলতি ইরি-বরো মৌসুমের মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে ধানের চার রোপনের কথা থাকলেও এখন ফাল্গুনের দুই সপ্তাহ শেষেও চারা রোপন করা যায়নি। এছাড়া, সয়াবিন ও শাক সবজিতেও সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট রেগুলেটর pic.twitter.com/f42Wfj7NTS
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) February 26, 2017
সরেজমিনে (২৫ ফেব্রুয়ারি) গিয়ে দেখা যায়, উত্তর চর লরেঞ্চ, ভবানীগঞ্জের চর উভূতি গ্রামের মুছার খালে পানি নেই। শুকিয়ে আছে খাল। বোরো রোপন করতে পারছে না কৃষক। কেউ-কেউ বিকল্প উপায়ে পুকুর ও দীঘি থেকে পানি নিয়ে চারা রোপনের চেষ্টা করছেন।
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) February 26, 2017
ওই দিন সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট মেঘনা নদী সংলগ্ন রহমতখালী খালের ওপর নেভিগেশন লকসহ ১৪ভেন্টের দুইটি রেগুলেটর রয়েছে। এতে মোট ২৮টি গেট আছে। মুল রেগুলেটরের ১৪গেটের মধ্যে ৫টি জোয়ারের সময় খুলে দেয়া ছিল। বাকী ৯টি গেটের মধ্যে একটির চেইন বিকল; ৮টি বৈদ্যুতিক লাইন ও মোটরের ত্রুটির কারণে বন্ধ।
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) February 26, 2017
পুরাতন রেগুলেটরের ১৪টি গেটই বন্ধ। এর মধ্যে তিনটি ভেঙ্গে আছে। যে কারণে ভাটার সময় মুল রেগুলেটরের সচল গেটগুলো বন্ধ করলেও পানি ফের নদীতে ঢুকে পড়ে। এতে নদীর জোয়ারের পানি আশেপাশের খালে পৌঁছতে পারে না।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুইটি রেগুলেটরের জন্য কোনো গেট অপারেটর নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের একজন এমএলএস দীর্ঘদিন থেকে গেট অপারেটরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার একার পক্ষে জোয়ার আসলে গেট খোলা ও ভাটার সময় বন্ধ করা সম্ভব হয় না।
কৃষকরা জানায়, বোরো মৌসুমে অমাবশ্যা ও পুর্ণিমার আগে-পরে ৪ থেকে ৫ দিন জোয়ার আসে। ওই জোয়ারের পানি খালে ঢুকলে সে পানি পাম্প দিয়ে ক্ষেতে দেয়া হয়।। কিন্তু সবগুলো গেট খোলা না থাকায় অনেকগুলো সংযোগ খালে পানি পৌঁছে না।
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) February 26, 2017
মজু চৌধুরীরহাট রহমতখালী খালের ওই রেগুলেটরের পানির ওপর নির্ভশীল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর, কালির চর, চর উভুতি, ভবানীগঞ্জ, জকসিন, মিরিকপুর, উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া, তেওয়ারীগঞ্জ, কুশাখালীসহ জেলার পূর্বাঞ্চল এবং কমলনগর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষক নিদিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও বোরো আবাদ করতে পারছে না। যারা ভিন্ন উপায়ে রোপন করেছেন তারাও সেচ না দিতে পেরে বিপাকে রয়েছেন।
— lakshmipur24.com (@lakshmipur24) February 26, 2017
স্থানীয়রা জানায়, রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে নদীতে জোয়ার শেষ হয়। এর আগে ভোর ৫টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। সকাল ৯টার পর বিদ্যুৎ আসে। বিদ্যুত না থাকায় রেগুলেটরের গেট বন্ধ করা যায়নি। বন্ধ করার জন্য বিদ্যুতের বিকল্প জেনারেটরও নেই; যে কারণে ভাটায় সব পানি ফের নদীতে ঢুকে পড়ে। এতে কৃষকরা সেচের জন্য খালে কাঙ্খিত পানি পায়নি। এসব কারণে ব্যহত হচ্ছে বোরো আবাদ।
কমলনগরের উত্তর লরেন্স কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও সেচ মালিক- আবদুল গণি জানান, পানি না পেয়ে কৃষকরা হাহাকার করছে। পানির অভাব না মিটলে কৃষকরা লোকসানের মুুখে পড়বে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share