নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে নিখোঁজের একদিন পর কাঠের বাক্সে মিলেছে ৯ বছর বয়সী এক শিশুর লাশ। বুধবার ভোর রাত ৩টার দিকে নগরের বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের ১০০ গজের মধ্যে আরাকান সড়কের একটি তিনতলা বাণিজ্যিক ভবনের পরিত্যক্ত সিঁড়িতে কাঠের বাক্সে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ওই ভবনটির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় শিশুটি। নিহত শিশু সালমা আক্তার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বিবিরহাট এলাকার মো. সোলাইমানের মেয়ে। তার বাবা চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে ‘যমুনা পরিবহনের’ টিকিট বিক্রেতা। সোলাইমান স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন আরাকান সড়কের শাহ আমানত সোসাইটির এক নম্বর সড়কের এক নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায়। সালমা বহদ্দারহাট আতাতুল ক্যাডেট মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। মো. সোলাইমান কে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে মাদ্রাসা থেকে বাসায় ফিরে সালমা। ইফতারের খালি বক্স আনতে তাকে বহদ্দারহাট মোড়ে টিকিট কাউন্টারে তার কাছে পাঠান শিশুটির মা। বাসা থেকে কাউন্টারের দূরুত্ব ৩০০ গজের মতো। ২টার মধ্যেও মেয়ে বাবার কাছে না যাওয়ায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এরপর সন্ধান চেয়ে আশপাশের এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যায় পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন। এরপর পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। যে ভবন থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ফুটেজে ওই ভবনে সালমাকে ঢুকতে দেখা গেছে। তবে ওই দিন রাতে স্বজনরা খোঁজাখুজি করলেও তখন শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। শিশুটির মামা মো. মহিউদ্দিন কে বলেন, ‘বুধবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ভবনটির সামনে দাঁড়ালে নাকে দুর্গন্ধ এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সালমার বাবাকে জানাই। এরপর কয়েকজন মিলে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে ভবনটির তৃতীয় তলার সিঁড়িতে ময়লার স্তূপের ভেতর কাঠের একটি বাক্সে সালমার লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরের বহদ্দারহাট মোড় থেকে ১০০ গজ দক্ষিণে আরাকান সড়ক লাগোয়া তিনতলা একটি বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটির মালিক নুরুল হক। নিচতলায় ‘তৃপ্তি ফ্যাশন’ নামে একটি টেইলার্স ও ‘জুয়াং করপোরেশন’ নামে একটি পাইপ ফিটিংসসহ তিনটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দুই ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় দাঁতের চিকিৎসকের চেম্বার ও গুদাম। তৃতীয় তলায় জুয়াং করপোরেশনের গুদাম ও একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার। জুয়াং করপোরেশনের মালিক মো. জুলফিকার আলী কে বলেন, ‘ভবনটির উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি সিঁড়ি রয়েছে। দক্ষিণ পাশের সিঁড়িটি কেউ ব্যবহার করে না। সেখানে ময়লার স্তূপ হয়ে আছে। তৃতীয় তলায় আমাদের গুদাম আছে। কিন্তু ওই সিঁড়ির দিকে কেউ যায় না।’ বহদ্দারহাট-বাদুরতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ১২টা ২১ মিনিটের দিকে হলুদ গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা ২৫-৩০ বছর বয়সী একটা ছেলে তাড়াহুড়ো করে ভবনটিতে প্রবেশ করছে। এর পেছন পেছন শিশুটিকে স্বেচ্ছায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ছেলেটিকে শনাক্ত করা গেলে কি হয়েছিল বিষয়টি খোলাসা হবে।’ শিশুটির বাবা মো. সোলাইমান বলেন, ‘কারো সঙ্গে আমার কোন শত্রুতা নেই। কেন, কারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে বুঝতে পারছি না। তবে বুধবার ভবনটিতে প্রবেশ করতে চাইলে নিচতলার টেইলার্স মালিক আমাদের ঢুকতে বাধা দিয়েছিল। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। থানায় মামলা করেছি। আমি আমার নিষ্পাপ মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’ এ প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর কে বলেন, ‘পচন ধরায় শিশুটির শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কি-না, তা বুঝা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যেদিন নিখোঁজ হয়েছে সেদিনই শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটি খুনের আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি-না, সেটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে। তবে শিশুটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে টেইলার্স মালিক নীলু দাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শিশুটি স্বেচ্ছায় ভবনটিতে প্রবেশ করছে। শিশুটির বহদ্দারহাট মোড়ে বাবার কাছে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে না গিয়ে কেন ভবনটিতে গেল, তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
0Share