নোয়াখাইল্লা আঞ্চলিক ভাষার নাম শুনলেই অনেকে হয়তো ভেবে থাকেন, এটা নোয়াখালী জেলার মানুষের স্থানীয় কথ্য ভাষা। ভাষা জ্ঞান এবং সংস্কৃতি সর্ম্পকে যাদের ধারণা কম তারা হয়তো এক বাক্যে এটা ভেবে থাকতে পারেন। আসলে বিষয়টি তা নয়। বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী) অঞ্চলের লোকেরা বাংলা ভাষার স্থানীয় যে ভাষায় কথা বলে তাকে নোয়াখাইল্লা আঞ্চলিক ভাষা বা নোয়াখালীয় উপভাষা বা নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা বলে। এ উপভাষাটির বয়স আনুমানিক এক হাজার বছর। নোয়াখাইল্লা আঞ্চলিক ভাষা বাংলাদেশের বাংলা-অসমিয়া ভাষা ।
এটা শুধুমাত্র নোয়াখালীর জেলার মানুষের দ্বারা কথিত হয় না ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর সেই সাথে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ অংশের কুমিল্লা, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা, সন্দ্বীপ এবং চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার লোকেরাও এ ভাষায় কথা বলে।
অন্যদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতীয় নাগরিকরাও নোয়াখালীর উপভাষায় কথা বলে। এটি লিঙ্গুয়া ফ্র্যাঙ্কা হিসাবে ব্যবহৃত হয়দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার ভারতীয়দের মধ্যে। এছাড়া নোয়াখালীর ভাষা ভারতের গোমতি জেলা এবং ত্রিপুরার সিপাহিজালা জেলায়ও ব্যাপকভাবে বলা হয়। নোয়াখাইলার উপভাষা আদিবাসী ত্রিপুরী উপজাতি এবং চাকমা, মোগ (মারমা), রেয়াং ইত্যাদি উপজাতিরা বোঝে থাকে।
ভারতে ছোট ছোট কয়েকটি এলাকায়ও নোয়াখাইল্লা ভাষা ব্যবহৃত হয়। যেগুলো হচ্ছে, বেলোনিয়া, মনুরমুখ, সাবুমর, শান্তিরবাজার, জোলিবাড়ি, বৈখোড়া, কাঠালিয়া, বারপাথারি, ত্রিশনা, চন্দ্রপুর, গার্জি, হৃষ্যমুখ, সাতচাঁদ, কারবুক, নাটুনবাজার, বীরচন্দ্র মনু, রাজনগর ইত্যাদি।
নোয়াখাইলার উপভাষায় কোনও স্বীকৃত ব্যাকরণ রেকর্ডিং নেই। জনসাধারণ, আদালতে বা আইনসভায় অস্তিত্বমান বাংলার মতো নোয়াখাইলী উপভাষার কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যবহার নেই।
এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের ভাষা হিসাবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত, অভিজাত, রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী নোয়াখালীর সমজাতীয়তা বহন করে বা নোয়াখালীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনার সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়ে সাধারণত তাদের বিস্তৃত যোগাযোগের জন্য বাংলার প্রমিত রূপকে পছন্দ করে।
তারা কেবল বৃহত্তর নোয়াখালীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে এই কথোপকথনটিকে তাদের যোগাযোগের ব্যক্তিগত মাধ্যম হিসাবে রাখেন। এই উপভাষাটি বাংলাদেশে খুব বিখ্যাত। এই উপভাষায় অনেকগুলি বাংলাদেশী নাটক রচিত হয়, তাই এটি শিখতে ব্যস্ত বাংলাদেশী অভিনেত্রী অভিনেত্রী।
অঞ্চল ভেদে নোয়াখালীর ভাষার অনেক শব্দ,উচ্চারন ও আলাদা হয়ে থাকে । ফেনী, গ্রেটার নোয়াখালীর মেইন ল্যান্ড , চরাঞ্চল এলাকায় ভাষা পুরোপুরি এক রকম নয় ।
বাংলাদেশের আঞ্চলিক সংবাদপত্র হিসেবে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর (lakshmipur24.com) সর্ব প্রথম নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা তথা নোয়াখাইল্লা ভাষায় সংবাদ প্রচার শুরু করে। নোয়াখাইল্লা ভাষা প্রথম আঞ্চলিক সংবাদের নাম, ‘‘হাতদিনের লক্কুরা’’। লক্ষ্মীপুর জেলার গত সাত দিনের ঘটনা নিয়ে প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছে বিনোদন সাংবাদিক আলা উদ্দিন সাজু এবং অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করছেন সানা উল্লাহ সানু।
এখন শুধু লক্ষ্মীপুর জেলাই নয় বৃহত্তম নোয়াখালী নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর পুরোপুরি সংবাদ প্রচার শুরু করেছে।
লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইট ছাড়াও ইউটিউব চ্যানেল Youtube.com/@lakshmipur24 এবং ফেসবুক পেইজে facebook.com/lakshmipur24 লাইক দিয়ে আপনার এলাকার ভাষায় সংবাদ পেতে থাকুন।
ইউটিউবে দেখুন:
ফেসবুকে দেখুন:
নোয়াখাইল্লা আঞ্চলিক ভাষা বা বৃহত্তর নোয়াখালীর (নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী) কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হই:
ছোট পাতিল = হাইল্যা , বড় পাতিল = ড্যাগ , কলসি = ঠিল্লা , বেগুন = বাইয়ুন , লম্বা বেগুন = সিন্নুত বাইয়ুন , টমেটো = খর বাইয়ুন ,কাঁঠাল = কাঁডল, দরিয়া = দইজ্জা, কচুরি পানা= হেনা , ছোট বাচ্চা = লেদা ছুটকিয়া, লাতুরা ,বেবী চিকেন = ডেঁই মরগ , চাউলের গুড়ি = ছাইলের গুঁয়া, ডিমের পিঠা = আন্ডার তপতি , পাকের ঘর = রসি গর , একটা = এইজ্ঞা , টাকা= টেঁয়া, শুটকি মাছ = হুরি মাস, কাদা= লোদ, গাড়ি= গাঁই, কুমড়া= কোম্বা, পেপে= ককিয়া, পেয়ারা= গোব্বা, খয়ে যাওয়া শলার ঝাড়ু= ঠুন্ডা হিসা, কেরোসিন তেল= কেরাইস তেল , সরিষার তেল = হইরেত তেল , ছোট চিংড়ি = লইড্ডা ইসা , বাড়ির মূল ফটক = দজ্জার মাথায় , আমের আঠা= আইন্না লাসা, বিচি কলা= আইড্ডা কেলা , নাক ডাকা= ঘোংরা, চাচা= কাগু, ফুফু = হু’আম্মা, পুকুর= হইর, পালক= হইর, ফকির= হইর , খেসারীর ডাল= বাইলার ডাল, টয়লেট= ডেঙ্গা, টাট্টি, তেতুল= তেঁতই, কালো জাম = কাজ্জম , কাঁথা= মালসি , বাটি= খোরা, পা= বইর , কপাল= কোয়াল , ঘাড়= গেঁডি, হাটূ= আঁডু ,আদর= ননাই , আসকারা = হসলি , ফকিরনি= হইন্নি , পুর্বের বাড়ি= হুর বাইত, দক্ষিন বাড়ি= দইনের বাইত, পুর্ব দিক= হুব মুই, পশ্চিম দিক= হইছমের মুই , সীমানা= আঁড়া, নীচু ধান ক্ষেত = ডোগি , মৃগেল মাছ= মিরকা মাস, রুই মাছ= রুইত মাস, বাছুর= ডিঁয়া, আপনে= আন্নে , তর্ক করা= সোয়া করা , ভোরে =বেইন্না, পাখি = হইখ, বড়শি= ব’রি, কলা পাতা = কেলা হাত্তা, লাকড়ি= দারুয়া, কুপি = ছেরাগ , ঘরের আঙ্গিনা= গোদ্দুয়ার ।
0Share