আমিনুল ইসলাম:: প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী আলবার্ট বান্দুরা সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের প্রবক্তা। ১৯৭৭ সালে তাঁর প্রকাশিত ‘সোস্যাল লার্নিং থিউরি’ বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এতে তিনি দাবী করেন ,পরিবেশগত ও মানসিক উভয় ধরণের উপাদানের সমন্বয়ে মানুষের আচরণ প্রভাবিত হয়। তিনি আরো দাবী করেন, মানুষ বিশেষ করে শিশুরা সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি,আচরণ,আবেগীয় প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও পরে অনুকরণের মাধ্যমে নতুন আচরণ শিখে থাকে।অর্থাৎ সামাজিক শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। আলবার্ট বান্দুরা তাঁর তত্ত্বে উল্লেখ করেছেন“মানুষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিখে”। পর্যবেক্ষণমূলক শিক্ষণের ক্ষেত্রে তিন ধরণের মডেলের কথা উল্লেখ করেছেন।তার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতীকী মডেল। টেলিভিশন,চলচ্চিত্র প্রভৃতি গণমাধ্যমে বাস্তব বা কল্পনা নির্ভর নানা চরিত্র উপস্থাপিত হয়। গণমাধ্যমের এই প্রতীকী মডেলদের পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণ করে দর্শক শ্রোতা বিভিন্ন নতুন আচরণ শেখে।
এবার মূল কথায় আসি গত ২৪ মার্চ আরটিভিতে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে ধর্ষণ নিয়ে পূর্ণিমা ও মিশা সওদাগরের কথোপকথন আমাদেরকে হতাশ করে। আমি ওই কথা গুলোর পুণরাবৃত্তি করতে চাই না। তাদের আলাপ শুনে কতগুলো প্রশ্নের উদয় হয়।
১. যদি শিল্পী পরিচালকের মর্জি মাফিক কাজ করেন, তাবে কি শিল্পীর স্বাধীন সত্ত্বা বলে কিছুই নেই?
২.চলচ্চিত্রে ধর্ষণের সিন কি মামুলি বিষয় ?তা নাহলে পরিচালক যতবার বলেছেন তিনি ততবারই রাজি হয়েছেন ।কখনো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করেননি।
৩.পর্দায় যে সকল নায়ক-নায়িকা অভিনয় করেন তারা কি পরিচালকের হাতের ক্রীড়নক মাত্র?
৪. সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে শিল্পীদের কোনো ভূমিকা নেই?
অনুষ্ঠানটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এরপর ১ এপ্রিল একটি গণমাধ্যম কে পূর্ণিমা একটি সাক্ষাৎকার দেন।সাক্ষাৎকারে একপর্যায়ে তিনি বলেন,“আমরা ফিল্মে এসব সিন করি বলেই কি বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? তা তো নয়। সিনেমায়তো রেপ সিন করার পর সেটার বিচার হয়, ভিলেন মার খায়, শাস্তি হয়। সিনেমার রেপ সিন তো মানুষকে প্রভাবিত করেনি। আরও সচেত ন করে।”
মনোবিজ্ঞানী আলবার্ট বান্দুরার তত্ত্ব অনুযায়ী সিনেমা টেলিভিশন দেখে দর্শক-শ্রোতা বিভিন্ন নতুন আচরণ শেখে। অথচ নায়িকা বলছেন ভিন্ন কথা।সিনেমার রেপ সিন নাকি মানুষকে প্রভাবিত করে না? প্রশ্ন হচ্ছে সিনেমার দৃশ্যগুলো যদি মানুষকে প্রভাবিত না করে তাহলে আমরা এ সিনেমাগুলো কেনো দেখি। কি জন্যইবা এসব সিনেমা বানানো হয়? সিনেমা আমাদের প্রভাবিত করে বলেই ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা তৈরী হচ্ছে।তৈরী হচ্ছে মাদক ও যৌতুক বিরোধী সিনেমা। বিনোদনের ছলে শিক্ষা দিতে শিশুদের জন্য তৈরী হচ্ছে মীনা কার্টুন। আমরা এতোদিন যাবৎ বলে আসছি হিন্দি সিরিয়াল গুলো আমাদের আবহমান বাংলার পারিবারিক ঐতিহ্য ধ্বংস করছে।পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি করছে। ডোরেমন কার্টুন আমাদের শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্র গুলো কিরূপ প্রভাব ফেলছে, সেটা নিয়েও ভাবার সময় হয়েছে।
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী আলবার্ট বান্দুরা ১৯২৫ সালের ৪ ডিসেম্বর কানাডায় জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক নিযুক্ত হন। দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি সময় মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
লেখক:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের
শিক্ষার্থী,
,
0Share