সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর রবিবার , ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১২ নভেম্বরকে জাতীয় দূর্যোগ দিবস ঘোষনা করা হউক

১২ নভেম্বরকে জাতীয় দূর্যোগ দিবস ঘোষনা করা হউক

১২ নভেম্বরকে জাতীয় দূর্যোগ দিবস ঘোষনা করা হউক

12-novemberআ হ ম ফয়সল :: ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে উপকূলীয় এলাকায় ঘটেগেছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাস। সেই ভয়াল কালো রাতে উপকূলীয় হাতিয়া, রামগতি, চর আব্দুল্লাহ, সন্দীপ, ঢালচর, চর জব্বার, তজুমুদ্দিন, চর কচ্ছপিয়া, চর পাতিলা, কুকরী কুমড়ী, মনপুরা, চরফ্যাশন, দৌলতখাঁন, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছাস তেড়ে আসে। তখন ছিল রমজান মাস। তখনকার দেশী বিদেশী প্রচার মাধ্যমে এই ধবংসযজ্ঞের বর্ণনা ছিল ‘মানুষের মৃতদেহগুলি কচুরী পানার ঝুপের মত সমুদ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে’।

১২ নভেম্বর রাতের ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি বেগ ছিল ঘন্টায় ২২২ কিলোমিটার (১৩৮ মাইল)। চারিদিকে লাশ-আর-লাশ, লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ৩-১০ ফুটের জলোচ্ছাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ লোকের প্রাণহানীর ঘটনার ঠিক দুই দিন পর পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির কর্তা ব্যক্তিরা এতদঞ্চলে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করে। পরবর্তীতে সরকারী হিসেবে লোকজনের ক্ষতি-৪৭ লাখ, ঘর বাড়ি বিনষ্ট বা ধ্বংস ৪ লাখ, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির মৃত্যু ৭ লাখ ৮ হাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধবংস হয়েছে তিন হাজার পাঁচশ’টি। বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াল ধবংসযজ্ঞের পূর্ণাঙ্গ দলিল বা এ বিষয়ক কোন পুস্তিকা আজও প্রকাশিত হয়নি।

সেই দিনের ভয়াবহ দুর্যোগের কথা মনে পড়লে আজও এলাকার সাধারন মানুষের মন ও পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। আঁতকে উঠে উপকূলীয় এলাকার মানুষগুলো। সে দিনের স্মৃতি এখনো জ্বল জ্বল হয়ে আছে স্বজন হারানোদের মধ্যে।

এদেরই একজন লক্ষ্মীপুরের রামগতির হাট এলাকার ছিদ্দিকা খাতুন (৮০)। ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে তার মা, বাবা, স্বামী আর চার ছেলে মেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। ওই জলোচ্ছ্বাসে তিনি নিজেও ভেসে যান। দু’দিন পানিতে ভেসে থাকার পর হোসেন সর্দার নামে এক ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে। তার পর থেকে এ বাড়ি সে বাড়ি ঝি’র কাজ করে কেটে গেছে ৪০ বছর। এখন আর ঝি’র কাজ শরীরে সয় না। ভিক্ষা করে দিন চলে তার। আইলায় ছিদ্দিকার খোপড়ি ঘরটা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। যে কলোনিতে থাকতেন তিনি, সেটাও গিলে খেয়েছে আইলার ঢেউ।

৭০ এর ১২ নভেম্বর পরবর্তি উদ্ধার ও ত্রান তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন লক্ষ্মীপরের রামগতি উপজেলার বাসিন্দা এএইচএম নোমান। তার কাছ থেকে জেনেছি সে দিনের ভয়াবহতার কথা। এ ঘটনার পর তিনি  ‘ধ্বংস থেকে সৃষ্টি’র শ্লোাগান নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতীগ্রস্থ এলাকা হচ্ছে চর আব্দুল্লাহ ইউনিয়ন। মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এ ইউনিটি ছিল প্রায় নারী-শিশু শূন্য। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি যারা বেঁচে ছিলেন তারা আর নদীর পারে থাকতে চাচ্ছিলেন না। ভীত সন্ত্রস্থ, আবার দূর্যোগ কখন তাদের হানা দেয়।

চর আব্দুলাহ’র বাসিন্দা ইয়াসিন ভূঁঞা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সহকারী সচিব গভর্ণর হাউজে চাকুরীরত। তার বাবা-দাদীসহ বাড়ির প্রায় সবাই ভেসে গেছেন পানির তোড়ে। হাজী আলী হোসেনের ষোড়শী মেয়ে ঢেউয়ের টানে কিভাবে হাত থেকে ছিটকে চলে গেল ইত্যাদি হাজারো বিভৎস বাস্তবতা। সিএসপি আব্দুর রব চৌধুরীর চর কোলাকোপার ১১৩ জন আত্মীয়-স্বজনকে জলোচ্ছ্বাসের কালো রাতে ভাসিয়ে নিয়ে গেল, তারা আর দিনের আলো দেখলো না। সে দিনের হাজারো নির্মম ঘটনার সাক্ষি দেশের দক্ষিণ উপকূল।

প্রতি বছর ১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করে। এর মধ্যে ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর জেলা সমিতি, ঢাকাস্থ রামগতি উপজেলা সমিতি, ঢাকাস্থ মনপুরা সমিতি, ঢাকাস্থ পাথরঘাটা সমিতি, ঢাকাস্থ ভোলা সমিতি, লালমোহন ফাউন্ডেশন, ঢাকাস্থ দৌলতখাঁন সমিতি, বেসরকারী সংস্থ ডরপ এর নাম উল্লেখ করার মত। এ ধরনের সংগঠনগুলো মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানী ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারনমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা রাষ্ট্রিয় ভাবে স্মরণ করা হয় না।

এ জন্য আমি মনে করি ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বরের প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাসের ফলে ১০ লাখ লোকের প্রাণহানীর ঘটানাকে চির স্মরনীয় করে রাখতে ১২ নভেম্বরকে ‘জাতীয় দূর্যোগ দিবস’ ঘোষনা করা হউক। এটি ঘোষনা করা হলে যে শুধু তাদেরকে স্মরণ করা হবে তাই নয়, দিবসটি উদযাপন করতে গিয়ে সকলের মধ্যে দূর্যোগ প্রতিরোধের সচেতনতাও তৈরী হবে।

E-mail: ahmfoysoul@yahoo.com

 

 

মতামত | সাক্ষাৎকার আরও সংবাদ

কৃত্রিম ভুলুয়া এখন রামগতি ও সুবর্ণচরের দানব

শতবর্ষী টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

রিপোজটরি সাইট গিটহাবে বাংলাদেশী ডেভেলোপার আরমান হাকিম সাগরের কান্ট্রিবিউশন

নিবন্ধনের জন্য প্রথমদিকে আবেদিত নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন পেতে আর কত বছর?

স্বামীকে গলাকেটে হত্যা | ঘটনার এপিঠ-ওপিঠ

ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বাংলাদেশেও জেন্ড সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com