সানা উল্লাহ সানু: লক্ষ্মীুপর জেলার নাগরিকগণ যার যার অবস্থান অনুসারে নিজের পরিচয়ের সাথে লক্ষ্মীপুর শব্দটি জুড়ে দিতে গর্ববোধ করেন। কিন্তু তাদের গর্ব যাই থাকুক নিজ মাতৃভূমির তিন রকমের ইংরেজি বানান আর লক্ষ্মীপুর কিংবা লাক্সমিপুর উচ্চারণ নিয়ে কম বেশি প্রায় সবাই বিভ্রান্ত। তিন রকমের ইংরেজি বানানের লক্ষ্মীপুর নিয়ে সবাই প্রতিনিয়িত বিভ্রান্তিতে পড়লেও এত দিন এ নিয়ে কেউই কাহারো নিকট কোন প্রশ্ন রাখেননি। অথচ বর্তমান প্রজন্ম তিন টি ইংরেজি বানানের লক্ষ্মীপুর আর উচ্চারণে লাক্সমিপুর বলতে নারাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ব্যক্তিগত ভাবে কিংবা সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং জেলার স্থানীয় সংবাদপত্র সমূহ যে যার মতো করে ইংরেজি বানানে লক্ষ্মীপুর লিখছে। জেলা ব্যাপি লক্ষ্মীপুর শব্দটির প্রচলিত তিনটি ইংরেজি বানান বা প্রতিবর্ণীকরণ হচ্ছে, Lakshmipur, Laxmipur, Luxmipur.
এগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অফিস ব্যবহার করছে Lakshmipur, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লা ব্যবহার করছে Laxmipur এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ব্যবহার করছে Luxmipur . বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে Luxmipur.
কিন্তু একটি মাত্র শব্দ কে তিন রকমে লিখা অথবা লাক্সমিপুর উচ্চারণ করার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নতুন প্রজন্মের কাছে কেহই ব্যাখ্যা করছেন না। ফলে বর্তমান প্রজন্মের অভিযোগ তারা এক শব্দের তিন রকম ইংরেজি লিখার ধরন নিয়ে বিভ্রান্ত।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী সাবিহা সিদ্দিকা শানিন। মায়ের কাছে লক্ষ্মীপুরের ইংরেজি শিখেছে Lakshmipur বানানে । তার মা বানানটির উচ্চারণ শিখিয়েছে লক্ষ্মীপুর। কিন্তু বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা শিখেছিল Laxmipur বানানে। আবার তাদের উচ্চারণ ও লাক্সমিপুর। এ শব্দটি নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ হয়েছিল। শিক্ষিকারা ও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এ প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেন নি। এ নিয়ে শানিনের ক্ষোভ মা আর শিক্ষিকাদের ওপর।
এ বছর জেলাব্যাপী স্কুল কলেজের বিভিন্ন শ্রেনীর অসংখ্য শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করে ও এর সঠিক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। শুধু শিক্ষার্থীই নয় বহু শিক্ষক এমন কি সাংবাদিকরা ও দিতে পারে না এর ব্যাখ্যা।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অফিসের সরকারি গেজেট কমিটির সদস্য সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গাজী গিয়াস বলেন, “২০১৫ সালে সর্ব সম্মতি ক্রমে লক্ষ্মীপুরের ইংরেজি বানান Lakshmipur করার সিদ্ধান্ত হয়েছে । প্রচারণার কারণে এখনো অনেকে অন্যভাবে লিখছে।”
জাতীয় কবিতা পরিষদের লক্ষ্মীপুর সভাপতি কবি ও অংকন শিল্পী এসএম জাহাঙ্গীর বলেন, “লক্ষ্মীপুর শব্দটির ইংরেজি বানান Lakshmipur এবং উচ্চারণ লক্ষ্মীপুর” এটাই সঠিক বানান। এ শব্দটির ভিন্ন কোন ইংরেজি উচ্চারণ ও নেই। তিনি আরো বলেন, যারা লাক্সমিপুর উচ্চারণ করছেন সঠিক নিয়মনীতি না জেনেই করছেন।”
তিন রকমের ইংরেজি লক্ষ্মীপুর বানানের অবসান চেয়ে সাংবাদিক কাজল কায়েস বলেন, “২০১৭ সালের মাতৃভাষা দিবসের আগে লক্ষ্মীপুরবাসি হিসাবে জেলার নামের সঠিক বানান ও উচ্চারণের অবসান চায়।”
লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ প্রমিত বাংলা বানানের রীতি অনুসারে বাংলা থেকে অনুবাদ না করে ইংরেজি লেখার পদ্ধতিটি কে প্রতিবর্ণীকরণ বলা হয়। প্রতিবর্ণীকরণের রীতি অনুসারে ক্ষ (ক+ষ)=ksh, ক্ষ্ম= kshm তাই একে অন্য কোন ভাবে লিখা ও লাক্সমিপুর উচ্চারণের যুক্তি নেই। তাছাড়া ইংরেজি x=ক্ষ লিখার তো কোন বিধান বাংলায় নেই।”
আরো জানা যায়,“ইংরেজি কে দ্রুত বুঝা, উচ্চারণ ও পাঠ করতে বানানের ব্যাপকতা কমানো যায়। তবে সেটা শুধুমাত্র সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে (যেমন, n`gonj) কিন্তু মৌলিকতা নষ্ট করা যায় না। তাই kshm=x লিখা যায় কিনা তার ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র সমূহ ও বাংলা একাডেমি কে দিতে হবে।”
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৭৬৫ সালে বর্তমান দালাল বাজার ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের অধিবাসি রাজা উপাধি প্রাপ্ত জমিদার গৌর কিশোরের স্ত্রী লক্ষ্মীপ্রিয়ার নামানুসারে এখানকার একটি মৌজার নামকরণ করা হয় লক্ষ্মীপুর। রহমতখালী ও মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত থানা কে বর্তমান স্থানে নিয়ে আসা হয়। ১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের মর্যাদা পায়।
সরাসরি ইংরেজদের লেখা এবং বিশ্ব বিখ্যাত বিভিন্ন প্রেস থেকে প্রকাশিত নোয়াখালী জেলার ঐতিহাসিক গেজেটার ১৮০৭, ১৯১১, ১৯৬৪ এ লক্ষ্মীপুর শব্দটি কে s বর্ণ ছাড়া অথাৎ lakhmipur রুপে দেখা যায়।
২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে স্থানীয় অনলাইন সংবাদপত্র লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর লক্ষ্মীপুর শব্দের অভিন্ন ইংরেজি বানান প্রচলনের জন্য প্রচারণা করে আসছে। ওই বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরকারি কাজের সব জায়গায় বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা বানান রীতি অনুসরণের জন্য একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
সবশেষে লক্ষ্মীপুর জেলাবাসির প্রত্যাশা আগামি ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের আগেই লক্ষ্মীপুরবাসি তিনটি ইংরেজি বানানের লক্ষ্মীপুর থেকে মুক্তি পাবে।
0Share