আশরাফ আলী; নোয়াখালীতে ভুলুয়া নদীর গতিপথ রোধ।মিঠা পানির জন্য খাল খনন। আশীর্বাদ নয়;এটি এখন স্থানীয়দের জন্য অভিশাপ।অপরিকল্পিত খাল এখন রাক্ষুসে দানব। গিলে খাচ্ছে ভূমিহীনদের বসতি।কৃত্রিম দূর্যোগে দিশেহারা সুবর্ণচর উপজেলা ও রামগতির টুমচর, চর আফজলের মানুষ।
প্রতিনিয়ত গতিপথ বদলাচ্ছে ভুলুয়া।গেল এক দশক ধরে ভুলুয়া তান্ডবের নিরব সাক্ষী তীরবর্তী হাজারো মানুষ। প্রত্যন্ত এ জনপদে আসে না তেমন কোনো মিডিয়া। মানুষের হাহাকার পৌঁছায় না রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের কানে। উজানে জমিনের ফসল, পুকুরের মাছ ও রাস্তাঘাট ভেসে যায়।থমকে যায় জীবনযাত্রা।ডুবে যায় গবাদিপশুর বিচরনের মাঠও।
টুমচরের শরীফ হোসেন জানান- ‘জোয়ার উঠলে আমরা বাজার-ঘাটে যেতে পারি না। চলাফেরা করতে পারি না।এমনকি পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যাবস্থাও আমাদের থাকে না।’ এখন পর্যন্ত শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে কৃত্রিম এ’ খাল। ভয়ংকর ভাঙ্গনে বদলে যাচ্ছে এলাকার স্বাভাবিক চিত্র। শঙ্কিত রয়েছে তীরবর্তী হাজার হাজার ভাঙ্গন কবলিত পরিবার।
ভুক্তভোগী বয়োবৃদ্ধ কলিম মিয়া জানান- “গাঙ্গে দুইবার বাড়ি হারাইছি।শেষে বালবাচ্চাসহ এখানে আশ্রয় নিছিলাম।এবারো থাকতে পারলাম না!” প্রসঙ্গত ২০১০সালে ভুলুয়া নদীর মাঝখানে বাঁধ নির্মান করে চর উন্নয়ন সংস্থা সিডিএসপি।পাল্টে যায় শ্রোতের অববাহিকা।
উপজেলার ৫-নং চর জুবলি ইউনিয়নের চর জিয়াউদ্দিন বাজার পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।ফলে এখান থেকে চেয়ারম্যান ঘাঁট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার নদী মরে যায়।খাল খনন করে স্রোতের নতুন গতিপথ তৈরি করে দেয়া হয় রামগতির মাছ ঘাঁটের সাথে। এই খাল দানব হয়ে দাঁড়িয়েছে রামগতি ও সুবর্ণচরের মানুষের জন্য। খালের দুই পাড়ের বেড়িবাঁধ হারীয়ে গেছে উত্তাল ডেউয়ে। পলি ধুয়ে ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে মেঘনা গর্ভে।
পাঁচ বছর না যেতে চর উন্নয়ন সংস্থাকে আবারও বেড়িবাঁধ দিতে হয়েছে।২০১৫ সালে দ্বিতীয় বার নির্মাণ করা হয় এ বাঁধটি। সরেজমিনে দেখা যায়, অন্তত ১৭টি পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে নতুন এই বাঁধে। খলিল চেয়ারম্যান বাজার, প্রজেক্ট ও স্লুইসগেট পয়েন্টে ভাঙ্গন তীব্রতা দেখা গেছে।
দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিলিন হয়ে যেতে পারে এটিও। স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্তার উদ্দিন শাহীন বলেন- “আমরা সিডিএসপি অফিসে জানিয়েছি।তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সু- নির্দিষ্ট কোনো কিছু দেখছি না।” আ’লীগ নেতা আবুল কালাম শফি জানান- ‘আমি এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে ব্যাপারটি জানিয়েছি।’
দুই পাড়ে বাঁধের পরিকল্পিত সংস্কার, স্রোত নিয়ন্ত্রণে স্লুইসগেট নির্মাণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাথরের ব্লক ডালাই করার দাবি তীরবর্তী দু’ উপজেলার বাসিন্দাদের।
0Share