পিলখানায় সেদিন হাজার হাজার জওয়ান বিদ্রোহের পক্ষে, তাঁরা খুঁজে খুঁজে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করছেন নৃশংসভাবে। ওই অবস্থায় কোনো কোনো বিডিআর সদস্য হয়তো বিদ্রোহ সমর্থন করেননি, কিন্তু সাহস করেননি এগিয়ে যাবারও। কিন্তু একজন ছিলেন ব্যতিক্রম, তিনি হলেন বিডিআরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম। তিনি বিদ্রোহ প্রতিরোধ এবং সেনাবাহিনীর অফিসারদের বাঁচাতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে শহীদের মর্যাদাও দিয়েছে।
নুরুল ইসলামের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় দরবারে যোগ দিতে দেরি হয়ে যাবে- এই আশঙ্কায় নুরুল ইসলাম সকালে নাশতা না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে যান। ছোট মেয়ে ইতি ডেকেও থামাতে পারেনি বাবাকে। ওটাই ছিল বাবাকে শেষ দেখা মেয়ের। নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত অন্যান্যদের মত তার বাবার লাশ গণকবর থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। পরে ঐ বছরের ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের রাগতি উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামের বাড়িতে তার বাবার লাশ দাফন করা হয়।
দরবার হলে জওয়ানেরা বিদ্রোহ শুরু করার পর অনেকে যেখানে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন, সেখানে কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম এগিয়ে যান সশস্ত্র জওয়ানদের প্রতিরোধ করতে। বিদ্রোহে বাধা দেওয়ায় বিদ্রোহীরা মশারির লোহার স্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে তারপর ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা এই বিডিআরের কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরকে। পরবর্তী সময়ে তদন্তে বেরিয়ে আসে নুরুল ইসলামের এই বীরত্বের কথা। বিদ্রোহের ছয় মাস পর একমাত্র বিডিআর সদস্য কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা পান।
২০০৯ সালের ২০ আগস্ট নুরুল ইসলামের কবরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয় এবং পরবর্তীতে বিজিবির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদকে ভূষিত করে। নিষ্ঠাবান এই সুবেদার মেজর কর্মজীবনে ৪ বার ডিজি পদক পেয়েছেন, পাশাপাশি অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সরকারি খরচে পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করান। শহীদদের ছেলে স্বপ্ন নিয়ের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বাবার জন্য দেশবাসীর কাছেও দোয়া চান। একইভাবে আর যেনো কোনো বিদ্রোহে কারও ছেলে-মেয়ে-মায়ের বুক খালি না হয় সে প্রত্যাশাও করেন তিনি। পাশাপাশি বিডিআর বিদ্রোহের বিচার দ্রুত কার্যকর চানও তিনি।
0Share