নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নুরুল আমিন মাস্টারের জানাযা শেষে সমাহিত করা হয়েছে। মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (১৮ মে) সকালে উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ মদিনাতুল উলুম কওমি মাদরাসা মাঠে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার পূর্বে তার কফিনে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।
জানাযায় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার কয়েক হাজার মুসল্লী উপস্থিত হন। এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব) আবদুল মান্নান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু, সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, প্রবাসী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ মিথুন সেলিম, লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভুইঁয়া, রামগতি পৌর মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু, কমলনগর উপজেলার সদস্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ, আওয়ামলীলীগ নেতা ইস্কান্দার মির্জা, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও কমলনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম, লক্ষ্মীপুর জজকোর্টের পিপি জসিম উদ্দিন, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মাহবুবুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট রাসেল মাহমুদ ভূইঁয়া মান্না, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ভুলু, কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নিজাম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল আমিন রাজু, চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় কৃষকদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফখরুল আলম নাহিদ, তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা আশরাফুজ্জামান রাসেল, সাবেক চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন, কমলনগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আহসান উল্লাহ হিরণ এবং কমলনগর ও রামগতি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণ।
শিক্ষক, আওয়ামীলীগ নেতা, চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নরুল আমিন মাস্টার শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে ঢাকার বক্ষব্যধি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি ২ ছেলে ৩ মেয়ে, স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। এ প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জীবনের বেশির ভাগ সময় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১৬ সাল থেকে চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে একাধিক বার দায়িত্ব পালন করেন।
একেএম নুরুল আমিন মাস্টার ছিলেন একজন শিক্ষক, রাজনীতিবিদ এবং চেয়ারম্যান। ২০০৯ সালে তিনি নবগঠিত কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক মনোনীত হন। ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রয়ারি সর্বপ্রথম কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দীতা করেন। ২০২১ সালে তিনি পুনরায় চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তাঁর জন্ম ১৯৫৬ সালের ৩০ জুন সাবেক রামগতি উপজেলার কলাকোপা গ্রামে। তার বাবার নাম ইউনুছ মিয়া। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে তার বাবা চলে আসেন বর্তমান কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামে। ১৯৬৭ সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়েই তার রাজনীতিতে হাতে খড়ি। এরপর ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
১৯৭২ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তিনি রামগতি উপজেলার সাবেক ২ নং চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে টানা ৩৬ বছর এ পদে বহাল ছিলেন। পরে ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে তিনি চাকুরী থেকে সেচ্ছায় অবসর গ্রহন করেন পুরোপুরি রাজনীতিতে যুক্ত হন।
তিনি একজন সহজ সহজ সরল ও নিরহংকার রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার আস্থাভাজন ছিলেন। রাজনীতি এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। মৃত্যুর আগেও তিনি উত্তর চর লরেঞ্চ মদিনাতুল উলুম কওমী মাদরাসা ও মসজিদের সভাপতি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি সম্মাননা ও পেয়েছিলেন।
0Share