সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
লক্ষ্মীপুর-২ আসনে পাপুল অধ্যায়ের সূচনা ও সমাপ্তি যেভাবে

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে পাপুল অধ্যায়ের সূচনা ও সমাপ্তি যেভাবে

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে পাপুল অধ্যায়ের সূচনা ও সমাপ্তি যেভাবে

ইভিএমের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোট গণনা শেষে সোমবার (২১ জুন) আওয়ামীলীগের প্রার্থী এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন  ১ লাখ ২২ হাজার ৫শ’ ৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র  প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয়পার্টির শেখ মোহাম্মদ ফায়েজ উল্যা শিপন লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১৮শ’ ৮৬ ভোট।

এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে সংসদ সচিবলায় তার সদস্য পদ বাতিল করে এবং নির্বাচন কমিশন এ আসনে ভোট গ্রহনের আয়োজন করে। কিন্ত দেশ-বিদেশে আলোচিত কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এ আসনে যেভাবে প্রবেশ করে ও বের হয় তা নিয়ে বিস্তারিত।

২০১৬ সালের আগেও কাজী শাহীদ পাপলু লক্ষ্মীপুরের রাজনীতিতে একেবারেই পরিচিত ছিলেন না। তিনি দীর্ঘদিন কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি রায়পুরের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এসে লক্ষ্মীপুর জেলার  সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সেই মত বিনিময় সভায় তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করাসহ মানব সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দেন। কিন্ত তার পরে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়।

২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিনব্যাপী রায়পুর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সকল ইউপি সদস্য, সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ও সকল ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি সাথে মতবিনিময় সভা করেন কাজী শহীদ পাপুল। সেই সভায় তিনি প্রথমবারের মত আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এলাকার উন্নয়নের জন্য সমর্থন চান। এ জন্য  সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনায় পেয়ে নির্বাচিত হলে রায়পুর উন্নয়নের কাজ নিবেদিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এই মতবিনিময় সভায় পাপলুর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, কন্যা মারওয়াহ ইসলাম সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর তিনি দল বিদলে দুই হাতে দেদার বিলিয়েছেন টাকা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান পাপুল। পরে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির তৎকালীন এমপি মোহম্মদ নোমান ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে হঠাৎ আত্মগোপনে চলে যান তিনি। ২১ ডিসেম্বর তারিখে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। তারপর  ওই বছর ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত মোহাম্মদ নোমানকে এলাকায় দেখা যায়নি। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট হয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেন কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুল। এর কিছুদিন পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও স্বতন্ত্র কোটায় মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

কয়েকদিন বেশ ভালোই চলছিল। কিন্ত ২০২০ সালের (১৪ ফেব্রুয়ারি) তারিখে বাংলা দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রথম পাতায় লাল ব্যানারের একটি নিউজটির শিরোনাম ছিল, মানবপাচারে ১৪০০ কোটি টাকার কারবার; কুয়েত থেকে লাপাত্তা বাংলাদেশি এমপি। 

তার সূত্র ধরেই পরে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় তার নামে অসংখ্য নিউজ প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রথম তার পরিবার ওই সকল বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অস্বীকার করেছিল।

পরে ২০২০ সালের ৬ জুন তারিখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তাকে গ্রেফতার করে।

পাপুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল জারাহকে বরখাস্ত করা হয় সে বছরের ৩০ জুন তারিখে।

এদিকে বাংলাদেশে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পাপুলকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাপুল ও তার কোম্পানির ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। বাংলাদেশেও তার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে পাপুল প্রশ্নে জাতীয় সংসদে আলোচনা করেছিলেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাপুলের বিচার শুরু হয়। শুনানি ও যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন শেষে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি তারিখে কুয়েতের আদালত কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলকে ৪ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে। এর মাধ্যমে দন্ডপ্রাপ্ত পাপুলের মর্যাদা হয় বিদেশের মাটিতে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়া প্রথম বাংলাদেশী সংসদ সদস্য।

ফলে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সচিবালয় পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

যার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গত ৪ মার্চ নির্বাচনী তফসিল প্রকাশ করে ১১ এপ্রিল উপ-নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে সোমবার(২১ জুন) নির্ধারণ করা হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন  ১ লাখ ২২ হাজার ৫শ’ ৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে পাপুল পেয়েছিলেন, আপেল প্রতীকে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ ভোট ।

এভাবে ২১ জুন তারিখে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে পাপুল অধ্যায়ের আপাতত সমাপ্তি ঘটে। তবে সাধারণ মানুষের কথা রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। পাপুল আবার হয়তো ভিন্ন মোড়কে রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন।

জন্ম পরিচয়:  কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের জন্ম রায়পুর উপজেলায়। বাবা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ১৯৮৯ সালের দিকে তিনি  কুয়েতে যান। পরে কুয়েতে তিনি গড়ে তোলেন বড় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ।

লক্ষ্মীপুরের রাজনীতি আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুর২৪ এ সংবাদ: লক্ষ্মীপুরের সেই যুবদল নেতার খোঁজ নিলো এ্যানি ও কেন্দ্রীয় যুবদল

দলের জন্য ৪২ কোপের ক্ষত শরীর নিয়ে মানবেতর জীবন চুট্টোর: খোঁজ নেয়নি দল

লক্ষ্মীপুরের ৫৬ জন বিএনপি নেতা গুম খুনের শিকার হয়েছে : আযম খান 

লক্ষ্মীপুরে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

১০ বছর পর কমলনগর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন

জনগণের জন্য কাজ করুন; জনগণই নেতা বানাবে : বিথীকা

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com