সারোয়ার মিরন: রামগতি উপজেলার রাজনীতিতে অতি আলোচিত নাম আজাদ উদ্দিন চৌধুরী। ছিলেন চর গজারিয়া (চর আবদুল্যাহ ইউনিয়ন) এর কথিত ভূমিহীন নেতা। আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের দুই দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। হয়েছেন রামগতি পৌরসভার প্রথম মেয়র। উপজেলা না হলেও আলেকজান্ডার কেন্দ্রিক তার জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বি। মূলত ভালো ব্যবহার আর তুখোড় বক্তৃতার কারনে তার জনপ্রিয়তা ছিলো ব্যাপক।
সাবেক সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবী আলহাজ আবদুর রব চৌধুরীর হাত ধরে তার রাজনৈতিক উত্থান শুরু। ভোটের রাজনীতি পাকাপোক্ত করতে আজাদ উদ্দিনকে তিনি তুলে এনেছেন চর গজারিয়া থেকে। তারই ছায়াতলে থেকে হয়েছেন আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রামগতি পৌরসভার মেয়র।
শুরু থেকে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও দল পাল্টিয়েছেন বর চৌধুরীর সাথে। অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলে বর চৌধুরী দল পরিবর্তনের সাথে সাথে তিনি দল পরিবর্তন করেন। বর চৌধুরীর ভাগনি জামাই বলে জনগনের ব্যাপক অনুকম্পনা ও পেয়েছেন তিনি।
ব্যাপক জনপ্রিয়তা তার জন্য কাল হয়ে ওঠে একসময়। মামলা হামলা আর জেল হয়ে ওঠে তার জন্য নিত্য নৈমিত্যিক বিষয়। তার ভাষ্যমতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন ১৯৯৬ সালে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী আসম আবদুর রব এর হাতে। তার মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বেশির ভাগ সময়ই ছিলেন কারাগারে। মূলত সাবেক এ মন্ত্রীর বাড়াবাড়িতেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এ নেতা। কারাগারের নির্যাতনের করুন কাহিনী শুনে শুনে লোকে তাকে ভালোবাসতে শিখেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর তুমুল জনপ্রিয়তাও তার ব্যাপক পরিচিতির কারন বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
বর্তমান সময়ে ভালো মানুষের খোলস জড়ালেও সেনা শাসিত সরকারের দু‘বছরে ছিলেন পলাতক। তার বিরুদ্ধে ছিলো অর্ধ শতাধিক মামলা। ভোট কেলেংকারিতেও জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে চার নং ওয়ার্ডস্থ আবদুল আখের রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
নিজেকে বরাবরই আওয়ামীলীগের কর্মী দাবি করলেও রামগতি ও কমলনগরের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তার কোন অবস্থান ছিলো না। এমনকি তার সদস্য পদ না থাকা নিয়েও বেশ কয়েকবার প্রশ্ন দেখা দেয়। তার পরেও তিনি নাকি কৌশলে বেশ কয়েকজন আ.লীগ নেতাকে হাত করে দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রনর করেছেন। এতো কিছুর পরেও মূলধারার স্্েরাতে গা ভাসানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মামলা জটিলতায় অংশ নিতে না পারলেও নিজের স্ত্রী রোকেয়া আজাদকে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনেন তিনি। তবে গত রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে নিজে প্রার্থী হয়েও হেরেছেন বিশাল ভোটের ব্যবধানে। তার স্ত্রী রোকেয়া আজাদ রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান হলেও তার প্রভাবই বিভিন্ন সময় বেশি দেখা যায় বলে অভিযোগ পৌরবাসীর।
তার রাজনৈতিক জীবনের শেষান্তে সর্বশেষ পেরেকটি মেরেছেন ব্যবসায়ী কাম শিল্পপতি মোহাম্মদ আবদুল্ল্যাহ (আল মামুন)। অত্যন্ত সুকৌশলে আলহাজ আবদুর রব চৌধুরী ও আজাদ উদ্দিন চৌধুরীর চোখে ধুলা দিয়ে মনোনয়ন নিয়ে আসেন এ ব্যবসায়ী । আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন থেকে আবদুর রব চৌধুরী মূখ ফিরিয়ে নিলেও আজাদ উদ্দিন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে থেকে যান। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ আবদুল্ল্যার কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় যবানিকাপাত ঘটতে যাচ্ছে তার রাজনৈতিক জীবনে ? এই সত্য প্রশ্নটিই এখন এলাকাবাসীর কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তার অভিযোগ রামগতির রাজনীতিতে জাসদ তাকে ব্যাপক নির্যাতন করেছে। হামলা মামলা দিয়ে কোনঠাসা করেছে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। দীর্ঘ দিন বিএনপি‘র রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রব চৌধুরীর সাথে দল ত্যাগ করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অলিখিত ভাবে নাম লেখান। আর এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামীলীগ থেকেও বিতাড়িত হলেন ! এখন কেবল বাকি আছে জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়াটা।
বিএনপি’র রাজনীতিতে পূনরায় জড়ানো আর কোন ভাবেই সম্ভব না। কারণ বিএনপি সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন নিজান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যতোদিন তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত আছেন ততদিন আজাদ উদ্দিনের স্থান রামগতির বিএনপিতে হবেনা। তাছাড়া বিএনপিতে এলেও পূর্বের মতো অবস্থান তৈরি করা কোন ভাবেই সম্ভব হবেনা। জাসদ তথা জেএসডি (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) এর রাজনীতি বর্তমানে পূর্বের মতো জৌলুস নেই। তাছাড়া পূর্বেও নির্যাতনের ব্যাথা বেদনা ভূলে তিনি এ দলে যাবেন কিনা সেটাও ভাববার বিষয়। সুশৃংখল দল হিসেবে জামায়াতে তার অবস্থান কোন কালেই হবেনা বলে অনেকের ধারনা।
অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচন কে কেন্দ্র করে নির্বাচন পূর্ব এবং নির্বাচন কেন্দ্রিক সকল ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষ ও ১৮দল তাকে দুষচ্ছে। কারণ নিরপেক্ষ ভোটার দের ধারণা তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে এই আসনটিও বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল শতভাগ নিশ্চিত। আর তখন এই আসনে এত বিশৃঙ্ঘলা হতো না। ১৮ দলের অনেক নেতার অভিযোগ দশম সংসসদ নির্বাচনে ভোটের দিনের সহিংসতার ঘটনায় শুধু কমলনগরেই (৮/০১/১৪ইং) মামলা হয়েছে ৯টি আসামী ২২শ। এরপর আরো কত কি—–। জনাব আজাদ নির্বাচন না করলে নতুন করে কমলনগর-রামগতিতে হয়তো আওয়ামীলীগের সাথে বিএনপি-জামাতের এত দূরত্ব হতো না। কিন্তু ভোটের আগেতো তার অবস্থান বেশ শক্তই ছিলো অথচ ভোটের দিন দলীয় রাজনীতির কাছে জনাব আজাদের স্বতন্ত্রতা টিকলনা।
রামগতি কমলনগরের পরিবর্তনশীল রাজনীতিতে তার অবস্থান কোথায় হবে নাকি নিরপেক্ষ ভূমিকা হবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে সামনের বেশ কয়েক বছর।
0Share