সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বুধবার , ১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জামায়াত নেতার মৃত্যু | লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান;সংবাদ সম্মেলন

জামায়াত নেতার মৃত্যু | লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান;সংবাদ সম্মেলন

জামায়াত নেতার মৃত্যু | লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান;সংবাদ সম্মেলন

নিজস্বন প্রতিনিধি : প্রতিপক্ষের হামলায় লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও কর্মসূচী করেছে জেলা জামায়াত ও বিএনপি।

মঙ্গলবার ( ১০ জুন) সকালে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা জামায়াত । লিখিত বক্তব্যে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ফারুক হোসাইন নুর নবী বলেন, গত ৫ জুন তারিখ বেলা ১১ টা ৩০ ঘটিকায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে মো. রিয়াজ, রনি, কামাল, সোহাগ, জহির, রকি, বাবুল, সোহেগ বেছা, বাবুল, সাহেদ, সুমন, স্বপন আহমেদসহ আরো অজ্ঞাত ১৫-২০জন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতা ও স্থানীয় ইমাম কাউছার আহমেদ মিলন (৬০) কে জখম করে।

তিনি আরো বলেন, জামায়াত নেতা কাউছারের অবস্থা খারাপ দেখে স্বজনরা তাকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা করান। পরে খুনীরা হাসপাতালের আশপাশে এসে হুমকি দেয়। এতে ভীত হয়ে কাউছার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্ত পরে কাউছারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারো তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ৮ জুন রাতে নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা (৩৮৬/২০২৫) দায়ের করেন।  যাতে বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামীরা সবাই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আদিলপুর ও রাজিবপুর এলাকার বাসিন্দা।

জামায়াতের জেলা সেক্রেটারী ফারুক হোসাইন নুরনবী আরো জানান, উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ৯ জুন তারিখে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী দাবি করেন যে, জামায়াত তাদের কথা রাখেনি। কিন্ত জামায়াত কি কথা রাখেনি তা তিনি পরিষ্কার করেননি। প্রকৃতপক্ষে জামাতায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে যে কথা হয়েছে তা হলো নিহত কাউছার আহমেদের পরিবারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে খুনী ও অভিযুক্তদের বিএনপির দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনকরা হলে হস্তক্ষেপ করবেন না। বরঞ্চ সহযোগিতা করবেন। যা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েও জনসাধারণের সামনে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্ত ঘটনার দীর্ঘ সময় পরেও বিএনপির নেতৃত্ব বৃন্দ নিহতের পরিবার এবং জামায়াত নেতাদের সাথে আলোচনা করেননি এবং খুনীদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি বলে অভিযোগ করেন ফারুক হোসাইন নুরনবী। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে খুনীদের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে ভিন্নপন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি দাবি করেন, এ হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান ।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর(উত্তর) জামায়াতের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এআর হাফিজ ‍উল্লাহ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মহসিন কবির মুরাদ প্রমুখ।এদিকে একই  ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জকসিন বাজারে বিক্ষোভ করে স্থানীয় জামায়াত।

লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান জামায়াত নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এতে লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান লিটন, সদর (পূর্ব) উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান হারুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন রনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি সংবাদ সম্মেলন ডেকে একটি সামাজিক সমস্যাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। সোমবার (৯ জুন) সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধূরী এ্যানী বলেন, ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, জামায়াত বিষয়টিকে নোংরা রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছে। একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে জামায়াত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে, যা নিন্দনীয়। পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় জামায়াত নেতা কাউছার আহম্মদ মিলনের (৬০) মৃত্যুর ঘটনা রাজনৈতিকভাবে টেনে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সহবস্থানের আহবান জানিয়েছে বিএনপি নেতারা। কারণ মাদক ও একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি বা জড়িতদের আইনগতভাবে বিচার হতে পারে।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আমরা জামায়াতকে অনুরোধ জানিয়েছি ঘটনাটি যেন রাজনৈতিকভাবে না নেওয়া হয়। নিহত কাউছারের ভাই আরজু ছিলো যুবলীগের কর্মী। আরজু মাদক ও তার ছেলে চুরির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। সামাজিক এ অবক্ষয়ের এলাকাভিত্তিক মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন জড়িত। এটি সম্পূর্ণ এলাকার ঘটনা, রাজনৈতিক কোনো ঘটনা নয়। জামায়াতের নেতারা আমাদেরকে কথা দিয়েছেন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। অথবা ১-২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করবেন। কিন্তু তারা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তারা কথা দিয়ে কথা রাখেননি।’

উল্লেখ্য, নিহত কাউছার আহমেদ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার রাজিবপুর এলাকার মৃত মমিন উল্লাহর ছেলে ও স্থানীয় জামায়াতের একটি ইউনিটের সভাপতি এবং একটি মসজিদের ইমামের দায়িত্বে  ছিলেন।

বৃহস্পতিবার( ৫জুন) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার  বাংঙ্গা খাঁ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিবপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনি নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় জামায়াত দাবি করে, বিএনপি সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় একটি ঘটনা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়।

নিহতের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে একই এলাকার রিয়াজ হোসেন বাবলু ও সোহাগদের সঙ্গে মারামারি হয় জামায়াত নেতা কাউছারের ভাই আলতাফ হোসেন আরজুর। ঘটনার সময় কাউছারসহ তার পরিবারের চারজন আহত হন। পরে তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। এরপর বিকেলে কাউছার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় মারা যান। স্বজনদের দাবি, রিয়াজসহ অন্যদের মারধরের কারণে কাউছার মারা গেছেন।

স্থানীয়রা জানান, কাউছারের ভাতিজা দেড় মাস আগে এলাকায় একটি টিউবওয়েল চুরি করে। সে ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে টুকামিয়ার পুল এলাকায় রিয়াজ তাকে আটক করেন। খবর পেয়ে আরজু গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। সেসময় উভয়ের মধ্যে মারামারি হয়। পরে উভয়পক্ষ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরে রিয়াজরা এ ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর কাউছার মারা যান।

অভিযুক্ত রিয়াজ বলেন, আরজুর ছেলে মসজিদের টিউবওয়েল চুরি করে পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে আটক করলে আরজু আমাকে মারধর করে। এ ঘটনায় আরজুর সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছে। নিহত কাউছারের সঙ্গে আমাদের কোনো কিছুই হয়নি। সন্ধ্যায় তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে শুনেছি।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, নিহতের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে কী কারণে তিনি মারা গেছেন তা বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, কাউছারের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

তবে স্থানীয়রা বলছে জামায়াতের একজন কর্মী নিহতের ঘটনায় গত কয়েক দিন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বাকযুদ্ধে লক্ষ্মীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। 

লক্ষ্মীপুরের রাজনীতি আরও সংবাদ

হাজিরহাট উপকূল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি তামিম সম্পাদক শিপন

ওয়ার্ড থেকে জেলা; তৃণমূলের ভোটেই এবার নির্বাচিত হবে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির কমিটি

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ

শেখ হাসিনাকে সুযোগ দিলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার: এ্যানি

লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদকে কারণ দর্শানো নোটিশ

লক্ষ্মীপুরে যুবদলের ১১ শাখার নতুন কমিটি

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com