নিজস্ব প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর | লক্ষ্মীপুরের হাজিরপাড়া ইউনিয়নের মুসলিমাবাদ গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে ও সাবেক ইউনিয়ন যুবদল সদস্য আবদুল মান্নান চুট্টো । যিনি স্থানীয়ভাবে “আবদুল মান্নান বিএনপি” নামেও পরিচিত। এক সময় দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৬ সালে বিএনপির মিছিলে যোগদানের অপরাধে আওয়ামীলীগের কর্মীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার শরীরে রয়েছে ৪২ কোপের দাগ। বিএনপির জন্য জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে মিছিলে যোগদান করলেও আজ তাকে দেখারও কেউ নেই।
মান্নানের বড় ভাই মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকার শানারপাড়ে বিএনপি আয়োজিত একটি কর্মসূচি থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়।
তার শরীরে রয়েছে ৪২টি কোপের দাগ। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে, পরে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার ইউরোপ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে তিনি তিন মাস লাইফ সাপোর্টে ও ছয় মাস হাসপাতালে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন। চিকিৎসায় তখন প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, একসময় যুবদলের সক্রিয় সদস্য থাকলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও হামলার কারণে দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন মান্নান। ঢাকার শানারপাড় এলাকায় ভাইদের সঙ্গে থাকাকালীন তিনি হেলপার ও পরে ড্রাইভিং পেশায় যুক্ত হন। একইসঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েই চলাফেরা করতেন ।
ভয়াবহ ওই হামলার পর তার জীবন নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। বিছানায় বসেই দিন কাটান। খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য এখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথমদিকে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান পাশে থাকলেও পরবর্তীতে স্ত্রী অন্যত্র চলে যান এবং সন্তানের দায়িত্বও আর নেননি। এখন গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি ও এক চাচাতো ভাইকে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে তার দেখাশোনার জন্য রাখতে হচ্ছে। মান্নান এখনো নিজে খাবারও খেতে পারেন না, হাতে তুলে দিতে হয়।
মান্নানের বড় ভাই মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমরা ঢাকায় থাকি বলে সবসময় তার পাশে থাকতে পারি না। আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তার অবস্থা খুবই করুণ। দলের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলে মিছিলে যোগ দিয়েছিল। আজ সেই দলের কোনো নেতাকর্মী তাকে দেখতে আসে না।”
স্থানীয়রা জানান, একসময় তিনি ছিলেন এলাকার তরুণদের প্রেরণা। কিন্তু আজ রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দলের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো সহায়তা আসেনি।
দলের পক্ষ থেকে সহানুভূতি বা সহায়তা না পাওয়ায় মান্নানের পরিবার গভীর হতাশায় ভুগছে। এই রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আজও মামলা হয়নি বলে পরিবার জানায়।
স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী জানয়েছেন, একসময় যিনি ছিলেন দলের একনিষ্ঠ সৈনিক, সেই আবদুল মান্নান চুট্টো এখন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে পরিত্যক্ত ও অসহায় জীবনযাপন করছে। এটি দলের জন্যও এক বিব্রতকর বাস্তবতার প্রতীক।



0Share