নিজস্বপ্রতিনিধি: নেতাদের পদত্যাগ ও মৃত্যুর কারণে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে বলে রবিবার দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য আজ প্রকাশিত হল।
গত ১১ বছরে জেলা কমিটির সম্মেলন না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। দলের লোকজন জানান, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম। অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সভাপতি ও সাংসদ এ কে এম শাহাজান কামাল এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র আবু তাহের। দীর্ঘদিন থেকে দলের ওই দুটি অংশ পৃথক দুটি কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। তবে এতে দলটির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।
দল থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর শহরের নছির আহমদ মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলন শেষে এম আলাউদ্দিনকে সভাপতি ও মিজানুর রহিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি কমলনগর উপজেলা ছাড়া অপর চারটি উপজেলায় ১১ বছরেও সম্মেলন করতে পারেনি। গত বছরের জুলাই মাসে জেলা কমিটির ৪৬ জন সদস্য পদত্যাগ করেন। জেলা কমিটির সহসভাপতি মো. শাহাজান মাস্টার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন নিজাম, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ কালু আহম্মেদ এবং সদস্য আবু তাহের পাটোয়ারী মারা গেছেন। এ ছাড়া সাত-আটজন নেতা দীর্ঘদিন থেকে জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। এতে দলীয় কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে।
দল থেকে আরও জানা যায়, গত ২৩ জুন দলের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জেলা কমিটির মাত্র পাঁচজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। দলীয় বিভক্তির কারণে বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি।
লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চরম সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এত দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। দলকে শক্তিশালী করার জন্য সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন এখন সময়ের দাবি।
জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল আলম বলেন, ’৯০ সাল থেকে শহরের তমিজ মার্কেটে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় কার্যক্রম চলে আসছে। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শহরের উত্তর এলাকায় কক্ষ ভাড়া নিয়ে দলের আরেকটি কার্যালয় বানিয়েছেন। গত দুই বছর ধরে পনেরই আগস্টের শোকসভা ও কাঙালিভোজ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়নি। সাংসদ এ কে এম শাহাজান কামাল ও লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র আবু তাহেরের নেতৃত্বে ওই সভা ও কাঙালিভোজ হয়। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য লক্ষ্মীপুরে যে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তাতে জেলা কমিটির নেতাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন দাবি করেন, লক্ষ্মীপুরে দলের সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। দলে কোনো বিভক্তি নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মেয়র আবু তাহের বলেন, জেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা পদত্যাগ করায় দলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের ভোটে জেলা কমিটির নেতা নির্বাচিত হলে লক্ষ্মীপুরে দল শক্তিশালী হবে।
সাংসদ এ কে এম শাহাজান কামাল সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
0Share