একটি টিনসেট মসজিদের ভেতরে তার কাটার বেড়া দিয়ে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গণি হেডমাস্টার সড়কে নুর মিয়া বাইতুল জান্নাহ জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। এতে দুপুরে যোহরের নামাজে ভোগান্তির স্বীকার হন মুসল্লিরা। তার কাটার বেড়ার কারণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেননি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলে বিকেল ৪ টার দিকে তার কাটার বেড়া সরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার ঘটনাস্থল পৌঁছে লোকজন দিয়ে বেড়াটি সরিয়ে দিয়েছেন। বেড়া দেওয়ার ঘটনায় জেলা পরিষদের কেউই সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে জেলা পরিষদ কলোনী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩৯ বছর আগে নুর মোহাম্মদ পন্ডিত নামে এক ব্যক্তি জেলা পরিষদ কলোনী জামে মসজিদকে সাড়ে ৪ শতাংশ জমি দান করেন। এ জমি থেকে আয় করে কলোনী মসজিদের বিভিন্ন খুটিনাটি জিনিস ক্রয় করার বিষয় উল্লেখ করা হয়। প্রায় ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। এরমধ্যে গণি হেডমাস্টার সড়কে গণবসতি সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই থেকে তিনশত পরিবারের জন্য কাছাকাছি কোন মসজিদ নেই। এতে স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে প্রায় ৭ মাস আগে ওই জমির সামনেই প্রয়াত নুর মোহাম্মদ পন্ডিতের নামে ‘নুর মিয়া বাইতুল জান্নাহ’ টিনসেট মসজিদটি নির্মাণ করেন।
এ মসজিদে জুমআর নামাজে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি হয়। তখন বাইরের রাস্তাতে ত্রিপল বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এ নতুন মসজিদের ভেতরে জেলা পরিষদের কলোনী মসজিদের ১ শতাংশ জমি পড়েছে। এনিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে জেলা পরিষদের নির্দেশনার কথা বলে মসজিদের ভেতর দিয়ে তার কাটার বেড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়।
জমিদাতা নুর মোহাম্মদ পন্ডিতের নাতি সিরাজুল ইসলাম সোহেল জানান, বসতি বেড়ে যাওয়ায় লোকজনও বেড়েছে। কিন্তু আশপাশে কোন মসজিদ নেই। এ রোড থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে পশ্চিমে জেলা পরিষদ কলোনী মসজিদ এবং পূর্বেও ৩০০ মিটার দূরে আরও একটি মসজিদ রয়েছে। দূরের মসজিদগুলোতে সবসময় নামাজ পড়তে যাওয়া সম্ভব হয় না। এতে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তার দাদার জমিতেই একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এতে জেলা পরিষদের কলোনী জামে মসজিদের ১ শতাংশ জমিও রয়েছে। ওই জমিও তার দাদা ওই জেলা পরিষদের মসজিদটির জন্য দান করেছিলেন। হঠাৎ করে তার কাটার বেড়া দিয়ে মুসল্লিদের বিপাকে ফেলেছে জেলা পরিষদ।
লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) জহিরুল আলম বলেন, কে বা কারা মসজিদের ভেতরে তার কাটার বেড়া লাগিয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি জেলা পরিষদ কলোনী জামে মসজিদের নামে জমিটি দান করেছেন। সম্প্রতি ওই জমিতে একটি টিনসেট মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বসে মীমাংসা করার কথা ছিল। আমাদেরকে বিতর্কিত করার জন্য একটি চক্র মসজিদের ভেতরে তার কাটা দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে বের করা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তার কাটার বেড়া সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
0Share