সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জনসমাগম এড়াতে অনেক স্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির জানাযা এখন আগের মতো স্বাভাবিক আকারে হতে দেখিনি। এলাকা থেকে একেবারেই অদৃশ্য হয়ে গেছে শোকসংবাদ প্রচারের মাইকিং। মসজিদের মাইকেও কেউ শোকসংবাদ দিচ্ছেনা। সব যেন অন্যরকম দৃশ্য।
মহামারি করোনা ভাইরাসের উৎকন্ঠ সময়ে শোকসংবাদ প্রচার ও প্রকাশ সর্ম্পকে জানতে চাইলে এমনই জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং যুবলীগ আহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী।
বাপ্পী আরো জানিয়েছেন, একজন জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে বিগত সময়ে প্রতি সপ্তাহে অনন্ত পাঁচ ছয় জন মৃত ব্যক্তির জানাযায় অংশ নেয়ার আনুরোধ পেতাম বা শোকসংবাদ শুনতাম। কিন্ত এখন মারা গেলেও কেউ বলাবলি করে না। মনে হচ্ছে, মানুষের মৃত্যু একেবারেই কমে গেছে ! আসলে তা না, মৃত্যু হচ্ছে, তবে মাইকিং হচ্ছে না।
একই উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের মদিনাতুল উলুম কওমী মাদরাসা ও এতিমখানার পরিচালক মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, আগে মাদরাসা এলাকাসহ আশপাশের অনন্ত ১০-১২টি গ্রামে কেউ মারা গেলে আমাদের মাদরাসায় ফোন করে দোয়া করার অনুরোধ জানাতো। কেউ কেউ জানাযায় অংশ নেয়ার অনুরোধ করতো। অনেক দূরের মৃত্যুর সংবাদও পেতাম। এভাবে প্রতিদিনই ২/৩ জনের শোকসংবাদ আমার নিকট আসতো। কিন্ত গত পনের দিনে কোন শোকসংবাদ পাইনি।
তিনি আরো জানান, শুনতেছি এখন মানুষ যেকোন মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই আগে জানতে চেষ্টা করে মৃত ব্যক্তি কি করোনায় মারা গেছেন? সেজন্যই হয়তো করোনা আতংকে শোকসংবাদ আগের মতো আর প্রচার হচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুর জেলার পেশাদার ঘোষক মো. চাঁন গাজী বলেন, সপ্তাহে অন্তত ৮-১০টা শোকসংবাদ আমি মাইকিং করে জানিয়ে দিতাম। এতে কেউ কেউ জানাযায় অংশ নিতো, তবে বেশির মানুষ জানতো যে, তার প্রতিবেশি কোন একজন মানুষ মারা গেছে। শোকসংবাদ প্রচার করে আমাদের ভালো আয় রোজগার হতো। কিন্তু কয়েক দিন একেবারেই ঘরে বসে আছি। শোকসংবাদ প্রচারের জন্য আমাদের ডাক নেই। সত্যিই অবিশ্বাস্য অসময় কাটছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর মনসা দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মাকছুদেরর রহমান আলাপকালে জানান, মৃত্যু নির্ধারিত চিরন্তন সত্য। মৃত্যু স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক যে কোন ভাবে হচ্ছে এবং হবেই। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশিদের কাছে মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে তার জন্য দোয়ার আহবান জানানো এবং জানাযা অনুষ্ঠানের সময়সূচি প্রচার করা বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে দীর্ঘকালের একটি রীতি।
তবে করোনা ভাইরাসের আতংকে ইদানিং গ্রাম ও শহরে কোথাও শোকসংবাদ জানিয়ে প্রচার করা মাইকিং আর চোখে পড়ছে না। এমনকি মসজিদের মাইক থেকেও এ রকম কোন সংবাদ আসছে না।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম সংবাদের পর থেকে কেউ মারা গেলে এখন পাড়া মহল্লায় আগের মতো মাইকিং করে শোকসংবাদ প্রচার একেবারেই থেমে গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানায়, যে কোন মৃত্যুর সংবাদ পেলেই মানুষ এখন প্রথমে জিজ্ঞাসা করে মৃত ব্যক্তি কি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা? তাই যেকোন স্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ কেউ যেন করোনা রোগী মৃত্যু বানিয়ে গুজব ছড়িয়ে দিতে না পারেন, সেজন্য অনেকে ভয়ে এখন মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করছে না। তবে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুও থেমে নেই। প্রতিদিনই কেউ না কেউতো দুনিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যমতে মতে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির মাটি দেয়া হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত নিয়মে। সেখানে স্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির দাফনের মতো লোকসমাগম নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে গত ১৯ মার্চ ওয়াজ মাহফিল, তীর্থযাত্রাসহ সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।আবার ইসলামিক ফাউন্ডেশ ২২ মার্চ পবিত্র শবে মেহরাজে বাড়িতে ইবাদত করার আহবান জানিয়েছিল।
এখন মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য স্বাভাবিক মৃত ব্যক্তির জানাযা ইত্যাদি আগের নিয়মেই হচ্ছে। তবে এরকম সব ক্ষেত্রেই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রত এবং বেশি জনসমাগম এড়িয়ে চলার তাগাদা রয়েছে।
0Share