সানা উল্লাহ সানু | চাঁদপুরের দক্ষিণ সীমানা ও লক্ষ্মীপুরের উত্তর সীমনা চর ভৈরবী থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর এবং ভোলা জেলার মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে ব্যাপক হারে জাগছে অসংখ্য ভাসমান ও ডুবোচর। এদের সংখ্যা ১৬টি। চরের কারণে আটকে যাচ্ছে উপকূলের জীবন ও অর্থনীতি।
এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরের চার পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে থাকছে, চরে আটকে যাচ্ছে মেঘনাপাড়ের জীবন ও অর্থনীতি ।
মেঘনাপাড়ের ২০-২৫ জন বাসিন্দা, ফেরী ও লঞ্চচালক, জেলে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়,
চরের কারণে নদীর গভীরতা কমে স্বাভাবিক জোয়ারেও পানি উপকূলে উঠে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে বহু জনপথ, ভাঙ্গছে নদীর তীর। পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। বিঘ্ন ঘটছে লঞ্চ, ফেরী এবং সাধারণ নৌকা চলাচলে । ভাসমান ও ডুবোচরের কারণে এবং নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় গন্তব্য পরিবর্তন করছে ইলিশ। এ অবস্থায় চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যাবে না।
এসময় স্থানীয়রা জানায়, গত ৫-৭ বছরের মধ্যে চাঁদপুর সীমানা থেকে একেবারে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত মেঘনা নদীর বিশাল এলাকায় অসংখ্য চর দৃশ্যমান হয়েছে এবং আরো অজস্র ডুবোচর তৈরি হয়েছে। নদীতে চরের কারণে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জেলে সাজু মাঝি, মো. হোসেন এবং কমলনগর উপজেলার জেলে সিরাজ। এ তিন জেলে মেঘনায় প্রায় ৪০ বছর যাবত মাছ ধরেন। তারা জানান, মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর অংশে প্রচুর চর পড়ছে। এতে লক্ষ্মীপুরের অর্থনীতিতে নানা প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছে। চরের বর্ণনা দিতে গিয়ে জেলেরা জানায়, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের উত্তর সীমানা চর ভৈরবী থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ একটি চর দৃশ্যমান হয়েছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার প্রস্থের এ চরটির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে।
এছাড়া কমলনগর সীমান্তে মাতব্বরহাট সংলগ্ন এলাকায়, নাসিরগঞ্জ, পাটারিহাট, লুধুয়া, বালুর চর এলাকায় একটি করে চর জাগছে। রামগতির আলেকজান্ডার বাজারের দক্ষিণে ৩টি এবং রামগতি বাজার সংলগ্ন ২টিসহ লক্ষ্মীপুর জেলার ৭৬ কিলোমিটার মেঘনা এলাকায় গত ৫-৭ বছরের মধ্যে ১০টি চর দৃশ্যমান হয়েছে। এ চরগুলোর বেশিরভাগই এখন চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে রামগতি থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্তও চর রয়েছে।
জেলে সাজু মাঝি জানায়, দৃশ্যমান এ চরগুলো ছাড়াও কমলনগরের মতিরহাট থেকে রামগতির টাংকি বাজার পর্যন্ত অন্তত আরো ৬টি বড় বড় ডুবোচর রয়েছে । যেগুলো বর্ষায় দেখা না গেলেও শীত মৌসুমে ভাটার সময় দেখা যায়। পুরো মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর সীমানায় এখন অসংখ্য চর।
জেলেদের দাবী এ চরের কারণে শুধু যে মাছ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে বিষয়টি তা না। চরের কারণে শীতের জোয়ারেও মেঘনার পানি উপরে উঠছে, প্লাবিত হচ্ছে উপকূল এবং ভাঙ্গছে নদীর তীর। পানিতে বাড়ছে লবণ। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাস। আবার নৌযান চলাচলেও তৈরি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত থাকছে পরের পর্বে।
0Share