নিজস্ব প্রতিবেদক | মাইক হাতে বাইসাকেল চালিয়ে নিজের ভোটের প্রচারণা নিজেই চালিয়েছিলেন তিনি। তার কোন কর্মী ছিল না। গ্রামের নিরীহ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক আর জেলেরাই তার ভোটের প্রচারণা চালিয়েছিল। বিপুল ভোটেও ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই বহুল পরিচিত চেয়ারম্যানের আগের ধারণা রাতারাতি পাল্টে দিন । নিজে হয়ে যান সত্যিকারের জনবান্ধব চেয়ারম্যান। তার হাতে সবসময় একটি ব্যাগ, আর ইউনিয়ন পরিষদের সিল ও প্যাড থাকতো।
চেয়ারম্যান অফিস যেন হাতে হাতে। গ্রামের মানুষকে কষ্ট করে ইউনিয়ন আসতে হয়নি। রাস্তাঘাট, হাটবাজার যে যখন যেখানে পেয়েছে চেয়ারম্যানের নিকট নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ করে নিয়েছিল নিমিষেই।
অল্প দিনের মধ্যে তার কাজে প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে ইউনিয়ন থেকে পুরো উপজেলায়। সকল মানুষের মুখে মুখে ছিল চেয়ারম্যানের প্রশংসা। কিন্ত এমন জনবান্ধব নীতি ও সেবার কারণে অল্প দিনের মধ্যে পরিষদেরই কয়েকজন সদস্যের রোষানলে পড়েছিলেন সেই যুবক চেয়ারম্যান। নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে অবশেষে ষড়যন্ত্রে সফলও হলেন তারা।
এমন আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন চর ফলকন গ্রামের বৃদ্ধ আবদুস শহিদ। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ বহুদিন যাবত প্রিয় সেই চেয়ারম্যানকে এলাকায় দেখিনা। শুনেছি চেয়ারম্যান বহু কষ্টে আছেন। ভালো মানুষের কোন মূল্য নেই। এরপর রহমানের দীর্ঘ একটি আক্ষেপ …..
বৃদ্ধ আবদুস শহিদের বর্ণনার সেই ব্যক্তির নাম এএনএম আশরাফ উদ্দিন । তিনি ২০১১ থেকে ২০১৬ সময় পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। সততা আর দক্ষতার জন্য ২০১৫ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পল্লীচিকিৎসক ও সাংবাদিকতা ছিল তার প্রধান পেশা। পাশাপাশি মেঘনা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি।
২০১০ সালে জাতি সংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার প্রধান এ্যাড স্পাইকার্স এর হাত থেকে চ্যানেল আই কৃষি সাংবাদিকতা বিষয়ক পুরষ্কার গ্রহন করেছিলেন।
স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সততার সাথে চেয়ারম্যন দায়িত্বপালনের জন্য খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সাধারণ মানুষ ভালোবেসে তাঁকে গরিবের বন্ধু বলে ডাকতো।
সততা ও জনপ্রিয়তার কারণে বানোয়াট মামলার শিকার
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সেই সৎ ও জনপ্রিয় এবং শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ উদ্দিন এক বানোয়াট ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে এখন ফেরারী।একমাত্র ছেলে আশ্রয় নিয়েছে নানার বাড়ি। সংসারের অভাব সইতে না পেরে স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। মামলার গ্লানি টানছেন গত প্রায় ১০ বছর যাবত। এর মাঝে সাবেক চেয়ারম্যান ছেলের দুঃচিন্তায় স্ট্রোক করে বিনা চিকিৎসায় বাবা ও মা মারা গেছেন। নিরুপায় হয়ে একটি ছোট এনজিওতে চাকুরী নিয়ে চলছে সেই চেয়ারম্যানের জীবন।
দুদকের সেই মামলার চুড়ান্ত রায়ের ধার্য্যের দিন ৮ সেপ্টেম্বর তিনি দীর্ঘদিনের কষ্টের কথা তুলে ধরে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
সাবেক চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, আজ ৪৩ কার্যদিবসে নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালতে হাজির হই। এর আগে ১৮ আগষ্ট ২০২৫ তারিখে রায়ের দিন ধার্য্য ছিল। কিছুক্ষণ পরে ফেসবুক ওয়ালে তিনি লিখেন আবারো রায়ের নতুন তারিখ ধার্য্য হলো। নতুন তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
আদালতে হাজিরা দিতে বরগুনা থেকে নোয়াখালী আসা ও যাওয়ায় ১ হাজার কি.মি. পথ ২ রাত না ঘুমিয়ে ৪০ ঘন্টা একটানা জার্নি। খরচ ৯ হাজার ৫ শত টাকা। এভাবে ইতিপূর্বে ৪৩ কার্যদিবসে প্রতি হাজিরায় অবর্ননীয় কষ্ট ।সাথে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতো।
ভিন্ন আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ও মিথ্যা মামলায় এবং তার ফেরারি জীবনের নানা বীভৎস দিক তুলে ধরেন।
যে কারণ দেখিয়ে মামলা হয়
আশরাফ বলেন, আমি পল্লীচিকিৎসার পাশাপাশি সাংবাকিতা করতাম। এর মাঝে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় নিজেদের উদ্যোগে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। স্থানীয়রা বলেছিল জিওব্যাগের জন্য অর্থ সহায়তা দিবে। কিছু লোক কিছু অর্থ সহায়তাও দেন। তাদের আশ্বাসে আমি নদীতে বাঁধের কাজ শুরু করি। নগদে বাকিতে কাজ শুরু করি। বাকি টাকার একমাত্র জিম্মাদার হই আমি। নদীতে জিও ব্যাগের কাজ শুরু হয়। তবে জোয়ারের তীব্র চাপে কয়েক মাসের মধ্যে বাধঁ ভেঙ্গে যায়। এরপর অনেকে প্রতিশ্রুত টাকা আর দেয়নি। এরপর বাকি সব টাকার দায় পড়ে আমার ওপর । ঋণ নিয়ে এবং নিজের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বিক্রি
বিভিন্ন কোম্পানীর অবশিষ্ট দেনা পরিশোধ করতে থাকি। কিন্ত বিপুল ঋণ থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
এরমাঝে ২০১১ সালে স্থানীয় মানুষ আমাকে অনেকটা জোর করেই চেয়াম্যান পদে দাড়ঁ করিয়ে দেয়। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ৫নং চর ফলকন ইউনিয়নের ৬৩০ জন জেলের মাঝে ৩০ কেজি হারে ৪ মাসের ৭৫.৬ মে.টন.ভিজিএফ বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসক।
তৎকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৯জন ইউপি সদস্য, ৩ জন নারী সদস্য এবং ২টা জেলে সমিতিসহ মোট ৮টি জেলে তালিকা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট জমা পড়ে।
জমাপড়া তালিকাগুলো নিয়ে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি তারিখে ইউনিয়ন পরিষদের অনুষ্ঠিত ভিজিএফ কমিটির সভা শেষে মৎস্য অফিসে একটি প্রাথমিক তালিকা জমা দেয়া হয়। ভিন্ন ভিন্ন লোক ও সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন তালিকা করায় প্রাথমিক জেলে তালিকায় একজন জেলের নাম একাধিক তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়। পরে ২৮ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত উপজেলা কমিটির সভায় উক্ত কমিটির সভাপতি এবং তৎকালীন ইউএনও এর নির্দেশে রেজুলেশনের মাধ্যমে জেলেদের প্রাথমিক তালিকা সংশোধন করা হয়। শেষে ২য় তালিকা ধরে ট্যাগ অফিসার, মৎস্য কর্মকর্তার প্রতিনিধি, সচিব, ইউপি সদস্যগণের উপস্থিতিতে ৬শ ৩০ জন জেলের মাঝে ৭৫.৬ টন চাল বিতরণ করা হয়।
সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ বলেন, চাল বিতরণ হওয়ার শেষে তৎকালীন পরিষদের ইউপি সদস্য ইব্রাহীম খলিল পরিষদের জেলেদের প্রাথমিক তালিকার ফটোকপি সংগ্রহ করে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সহযোগিতায় প্রাথমিক তালিকার একজন জেলের নাম একাধিক বার হয়েছে বলে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দোকানপাটে মিথ্যা কথা বলতে থাকে। এটা নিয়ে তার সাথে আমার তর্কাতর্কি হয়।
শেষে ইউপি সদস্য খলিল ক্ষুব্দ হয়ে জেলেদের ভিজিএফ চাউল আত্নসাত হয়েছে অভিযোগ দেখিয়ে মর্মে স্থানীয় থানার ওসি, সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা, এনএসআই, স্থানীয় সরকার সচিব ও দুদকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পরপর ২৬টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একটি ঘটনায় ওই ইউপি সদস্যের ২৬টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কমলনগর থানার ওসি, উপজেলা প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ১২টি তদন্ত সম্পন্ন হয়। কোন তদন্তে্ই ভিজিএফ চাউল আত্নসাত হয়েছে মর্মে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সকল তদন্তে চেয়ারম্যান নিরপরাধ প্রমাণিত হয়।
চেয়ারম্যান আশরাফ বলেন, স্থানীয়ভাবে আর কোন ইস্যু দাঁড় করাতে না পেরে সেই ইউপি সদস্য ২য় বারের ন্যায় দুদকে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ২য় অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে দুদকের অনুসন্ধ্যানকারী কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্ত কর্মকর্তা আমার তদন্ত না করে উল্টো আমার নিকট ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি কোন অন্যায় না করে দুদক কে ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এতে দুদক কর্মকর্তা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এবং ভিজিএফের চাল বিতরণের ৪ বছর পর ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে আমার বিরুদ্ধে কমলনগর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।
নিম্ন আদালতে জামিন অযোগ্য দুদকে মামলা দায়েরের ৪ মাস পর আমি নিরবেই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাই।। শুরু হয় আমার ফেরারী জীবন।
ফেরারী জীবনের মুখোমুখি
আশরাফ বলেন, মাথার উপর পাহাড়সম নদীবাঁধের ঋণ, দুদকের মামলা, সামান্য বেতনে চাকরি করা শ্বশুরের ঘাড়ে পড়ে স্ত্রী ও সন্তান। আমিও সেখানে আশ্রয় নিলাম ।
আমি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় প্রচন্ড অর্থ কষ্টে পড়ি। বহু বেলা না খেয়ে একটা চাকুরীরর জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। এর মাঝে ২০১৭ সালের দুদকের মামলায় ২য় তদন্ত কর্মকর্তা আমার মামলা হাতে নিলো। সেই তদন্ত কর্মকর্তাও ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে বসেন। বিনিময়ে মামলা থেকে মুক্তি দিবেন। কিন্ত যেখানে আমি বলি না খেয়ে থাকি সেখানে কিভাবে তাকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিই ? আমার পক্ষে ১ টাকাও দেয়া সম্ভব হয়নি।
অবশেষে ঘুষ দিতে না পারায় আমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষীবিহীন, আত্নসাতের দলিল ছাড়া একটি চার্জসীট আদালতে জমা দেন দুদকের সেই কর্মকর্তা । পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ৩৫জন লোককে স্বাক্ষী দেখিয়ে সম্পূরক চার্জসীট দাখিল করেন তিনি।
আদালতে আত্নসমর্পন করে জামিন নেয়ার জন্য যে বিপুল পরিমাণ টাকার প্রয়োজন ছিল তা খরচ করা আমার ছোট ভাই, শ্বশুর আত্নীয়স্বজন কারোর পক্ষে ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না। মানসিক চাপ, গভীর হতাশায় আমি জটিল ব্রেইন ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে অধ্যাপক ডা. আবু নাঈমের অধীন চিকিৎসাধীন আছি।
অসুস্থতা, আর্থিক পরিস্থিতির কারণে আদালতে আত্নসমর্পন করতে পারছিলাম না। কারন দুদকের মামলায় সাধারণত নিন্ম আদালতে জামিন হয় না। উচ্চ আদালতেও দীর্ঘ সময় লাগে।
এমন জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে, খেয়ে না খেয়ে চাকরি খুঁজতে ছিলাম। ২০১৭ সালের মে মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনে একটি ফ্যাক্টিরিতে চাকরি পেলাম। ফ্যাক্টরিতে টিকতে না পেরে সে চাকুরী ছেড়ে ১০ হাজার টাকা বেতনে কিন্ডার গার্টেন স্কুলে চাকরি নিলাম। সেখানেও ৩ মাস চাকরি করার পর একটি এনজিও যোগদান করলাম।
চাকুরির এলাকা ছিল লক্ষ্মীপুর থেকে ৫শ ৯ কিলোমিটার দূরের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়। সে চাকুরী করে আমার বিপুল পরিমাণ ঋণে প্রায় ৬০ ভাগ পরিশোধ করতে পারলাম।
সংসার তছনছ
আমার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা করে ২০১৮ সালে বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ ছুট্টু ডাক্তার এবং ২০২১ সালেমা সৈয়দা খাতুন বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
অবশেষে ফেরারী জীবন থেকে ফিরতে ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী আদালতে আত্নসমর্পণ করলে আদালত আমাকে জেলে পাঠায়। ৩৪ দিন হাজত বাসের পর জামিনে মুক্ত হই। বরগুনা ফিরে দেখি আমার এনজিও এর চাকুরীটি আর নেই। বরগুনা থেকে খালি হাতে শ্বশুর বাড়ি ফিরে আসি। একদিকে আমার মাথার ওপর বিপুল ঋণ, দুদকের মামলা আবার হাতে কোন কাজ নেই। এমতাবস্থায় স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলের ভরনপোষণ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভম ছিল না। এমন অনিশ্চিত ও অন্ধকার জীবন দেখে স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
মিথ্যা মামলায় অনিশ্চিত জীবন
আগের এনজিওতে চাকুরী চলে যাওয়ার পর নতুন করে ছোট আরেকটি এনজিওতে সামান্য বেতনে আবারো একটি চাকুরী নিই। কিন্ত যে বেতন পাই তা মামলার হাজিরা দিতে বরগুনা থেকে নোয়াখালী আসতেই শেষ হয়ে যায়। মামলায় ৪৪ বার হাজিরা দিতে হয়েছে। একমাত্র ছেলে আফসানের থাকার মতো কোন জায়গা নেই। আফসানকে পড়াতে পারছি না। খরচ চালাতে পারছিনা। মামলার রায় কি হবে ? ঋণ পরিশোধ করবো কিভাবে ? বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ঔষধ খেয়েও ঘুম হয় না। আল্লাহর বিশেষ রহমত কামনা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই।
একজন নিরীহ মানুষের যার দল নাই, টাকা নাই, পেশী শক্তি নাই; আছে শুধু জনগণের আস্থা, বিশ্বাস আর সমর্থন। আমার মতো নিরীহ লোকের জনপ্রতিনিধি বা ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন ছিল একটি আত্নঘাতি। কারণ সমাজকর্মে, ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি তারা আমার জন্য আফসোস করতে পারে, আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে কিন্ত প্রকাশ্যে কোন প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ নেই। এমনটি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান আশরাফ।
মামলার আইনজীবি কি বলছেন ?
মামলার আইনজীবি বলেন, মামলার দাখিলকৃত চার্জসীটে কোন স্বাক্ষী ছিল না। কিন্ত পরবর্তীতে ৩৫ স্বাক্ষী বানিয়ে সম্পূরক অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। সাক্ষীরা অনেকেই জেলে ছিল না। ভিজিএফ চাউল আত্মসাৎ হয়েছে মর্মে কোন স্বাক্ষী আদালতে স্বাক্ষ্য দেননি। রাস্ট্রপক্ষ কোন দলিল দাখিল করতে পারেনি। সাবেক উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কাশেম, পিআইও মনিরুল হক ফারুক রেজা আদালতে বলেছেন দুদক কর্মকর্তা তদন্দকালে যে তালিকা তাদের দেখিয়েছেন উক্ত তালিকার সাথে মৎস্য অফিস ও পিআইও অফিসে সংরক্ষিত তালিকার মিল নেই। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত দুলাল বলেছেন, দুদকের কোন তদন্ত কর্মকর্তার সাথে তার দেখা হয়নি, কোন কথাও হয়নি। তদন্তে দেয়া জবানবন্দি তার না।
মামলার আইনজীবি আশাবাদী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ ন্যায়বিচার পাবেন এবং সাজানো মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাবেন।
চেয়ারম্যান বলেন, একজন নিরীহ মানুষের যার দল নাই, টাকা নাই, পেশী শক্তি নাই; আছে শুধু জনগণের আস্থা, বিশ্বাস আর সমর্থন। আমার মতো নিরীহ লোকের জনপ্রতিনিধি বা ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন ছিল একটি আত্নঘাতি। এ মামলাটি কোন অদৃশ্য কারণে চলছে আমি জানিনা। আমি জানিনা আমার অপরাধ কি ?
নিরীহ চেয়ারম্যানের এ অবস্থায় স্থানীয়রা কি ভাবছেন ?
স্থানীয় মালেক মাঝি, শহীদ, মহিন মিকার খুব স্পষ্টই জানান, চর ফলকন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ খুবই সাধারণ একজন মানুষ। মেঘনার ভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দূনীর্তিমুক্ত সমাজ গঠনে এ চেয়ারম্যানের ভূমিকার জন্য তিনি সবার নিকট ব্যাপক জনপ্রিয় হন। কিন্ত সমাজের দূনীর্তিবাজ ও দুষ্ট মানুষের রোষানলে পড়ে একজন সাধারণ ও সৎ মানুষের জীবন আজ খুবই এলোমেলো।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, আশরাফ চেয়ারম্যানের সাথে ঘটে যাওয়া বানোয়াট মামলার এ ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরো মিথ্যা বিষয় যখন অসংখ্য অফিসে অফিসে ঘুরে তখন সে মিথ্যাটি সত্যের মতো মনে হয়। এ যেন আইয়েমে জাহেলিয়াতের যুগ ।
1Share