কারাগার থেকে আদালতে নেয়ার পথে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সশরীরে হাজিরার পরিবর্তে বন্দিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা একটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের সুপারিশসহ বেশ কিছু মতামত আইন মন্ত্রণালয় দিয়েছে বলে জানিয়েছে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ।
বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এই ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজনে প্রকল্প প্রস্তাবও এসেছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি মামলায় হাজিরার জন্য গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে তিন জঙ্গিকে ময়মনসিংহের আদালতে নেয়ার পথে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা হয়। এক কনস্টেবলকে হত্যা করে ওই তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
আসামি ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার পর এই উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও সুপারিশের অনুলিপিটি সংবাদ মাধ্যমটির হাতে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (কারা) সালমা বেগমও আদালত থেকে জেলখানায় বন্দিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছিল। তারা কিছু সুপারিশ দিয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব দেশের বাইরে অবস্থান করছেন জানিয়ে সালমা বলেন, তারা দেশে ফিরলেই বিষয়টি তোলা হবে।
আদালত থেকে কারাগারে ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান এই উপ-সচিব।
গত ১৭ এপ্রিল আদালত থেকে কারাবন্দিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স চালু করার বিষয়ে মতামত নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, বিচারাধীন মামলার আসামিকে জেল থেকে আদালতে উপস্থিত করায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয় এবং আসামির পালানোর ঝুঁকিও থাকে।
এছাড়া জেল থেকে আদালতে আসামিদের পরিবহন এবং পুলিশ পাহারার ব্যয়ের কথাও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
তবে আদালত ও জেলখানার মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স চালু করতে সংশ্লিষ্ট দুটি আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছ।
আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রচলিত ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুযায়ী আসামিকে প্রতি তারিখেই আদালতে উপস্থিত হতে হয়।
“বিশেষ করে চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আসামির শারীরিক উপস্থিতি আইন অনুসারে অপরিহার্য।”
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারা অনুসারে পরীক্ষা করার বিধান রয়েছে উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয় বলছে, এর ব্যত্যয় হলে সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া দূষিত (vitaited) হয়ে যায়।
প্রথা অনুযায়ী, আসামির সঙ্গে আলোচনা করে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের কৌশল নির্ধারণ করে থাকেন আইনজীবী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা চালু হলে আইনজীবীকে জেলখানায় গিয়ে আসামির সঙ্গে দেখা করতে হব।
এছাড়া আসামিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন কারা কর্তৃপক্ষের জন্য অতিরিক্ত প্রশাসনিক চাপের কারণ হবে বলেও মনে করছে আইন মন্ত্রণালয়।
সর্বোপরি আদালত ও জেলখানার মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতি চালু করতে ‘জেলকোড প্রিজনারস্ অ্যাক্ট ১৯০০’ ও ‘প্রিজনস অ্যাক্ট ১৮৯৪’ সংশোধন করতে হবে।
এই দুটি আইনের সংশোধনী না করে ওই পদ্ধতি চালু হলে তা আইনসম্মত হবে না বলে মত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কাজলা টেকনোলজিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনে নয় কোটি ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে।
“এই কোম্পানির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার যোগাযোগ রয়েছে,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ওই কর্মকর্তা।
0Share