প্রতারণা ও মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে সরিয়ে দিল এনআরবিসি ব্যাংক। গত শনিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি এই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পরিচালকদের নামের তালিকা থেকেও তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
কাজী পাপুল লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। প্রতারণা, মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাকে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন তাকে ২১ দিনের জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
সংশ্নিষ্টরা জানান, এমপি পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের অন্যতম। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার সময় তিনি দশ টাকা অভিহিত মূল্যের দুই কোটি শেয়ারের মালিকানা কেনেন। বর্তমানে তার শেয়ার রয়েছে প্রায় দুই কোটি ৩২ লাখ। এটি ব্যাংকটির মোট শেয়ারের সাড়ে ৪ শতাংশ। তাকে পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকটিতে তার শেয়ার থাকবে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরুতে পাপুল পরিচালকের বাইরে কোনো পদে না থাকলেও ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন দায়িত্বে আসেন তিনি। এরপর থেকে তিনি ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
জানা গেছে, কুয়েতে গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পাপুল বা তার স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করে সব ব্যাংকে চিঠি দেয়। বিএফআইইউ তার অর্থ পাচারের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও তার বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ রকম অবস্থায় তাকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
এনআরবিসি ব্যাংকের একজন পরিচালক বলেন, ব্যাংক হলো একটা বিশ্বাসের জায়গা। অন্য ব্যবসা আর ব্যাংক ব্যবসা এক নয়। কুয়েতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশেও তার বিষয়ে খোঁজখবর চলছে। এ রকম একজন ব্যক্তিকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাখা বিপজ্জনক, যে কারণে আপাতত তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্দোষ প্রমাণ হলে তিনি আবার পরিচালক পদে ফিরতে পারবেন।
২০১৩ সালে একযোগে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় প্রবাসীদের উদ্যোগে তিনটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর একটি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী ফরাছত আলী। তবে নানা অনিয়মে সম্পৃক্ততার দায়ে ২০১৭ সালের শেষদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তিনি পর্ষদ থেকে বাদ পড়েন। তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকেও বাদ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
0Share