সৌদি আরবে কর্মস্থলে মারা যাওয়ার সাড়ে ৫ মাস অতিক্রম হলেও জায়েদ (২৬) নামে এক যুবকের মরদেহ এখনো দেশে আনা হয়নি। এতে জায়েদের অসুস্থ বাবা ইউসুফ ওরফে আশ্বাদ মিয়াসহ পরিবারের লোকজন মরদেহটি লক্ষ্মীপুরে আনার জন্য আহজারি করছেন।
এদিকে একইদিন একই ঘটনায় কুমিল্লার বাসিন্দা নজরুল হকও মারা যান। আবেদনের পর একাধিকবার সময় দিলেও সংশ্লিষ্ট দফতর তাদের মরদেহ দেশে আনতে পারেনি।
লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নন্দীগ্রামের জমাদ্দার বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, জায়েদ শ্রমিক ভিসায় ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি চাকরির উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে যান। তার পাসপোর্ট নাম্বার- বিএম ০৮৭৯৪৫৮। এরআগে তিনি ঢাকায় একটি ব্যাগের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর তাদের মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
পরিবারের লোকজন জানায়, সৌদিতে জায়েদ একটি পানি সাপ্লায়ের কোম্পানিতে কাজ করতেন। গত ২৩ মে জেদ্দা শহরের ম্যানহলে কাজ করতে যান জায়েদ ও তার সহকর্মী নজরুল। প্রথমে নজরুল ম্যানহলে নামেন। এতে অক্সিজেন সংকটে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। ম্যানহলের ভেতর থেকে নজরুল বাঁচার জন্য জায়েদের সহযোগীতা চান। এতে নজরুল তাকে বাঁচানোর জন্য ম্যানহলে ঢোকেন। সেখানে তিনি নিজেও অক্সিজেনের অভাবে মারা যান। সময় পার হলেও দু’জনের কেউই ম্যানহল থেকে বের হচ্ছেন না। পরে সেখান থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মরদেহ প্রায় সাড়ে ৫ মাস ধরে সেখানে জার্মান হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষিত রয়েছে।
জায়েদের ভাই ওমান প্রবাসী আবদুল আউয়াল বলেন, জায়েদের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার কোম্পানী ও সেখানে আমাদের পরিচিত লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মরদেহ ফ্রিজে রাখা আছে বলে তারা জানিয়েছে। পরবর্তীতে মরদেহ দেশে আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে (অ্যাম্বাসি) যোগাযোগ করেছি। কিন্ত তারা আমাদের কোন কথা কর্ণপাত করেনি। এখনো আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনা হচ্ছে না। আমার অসুস্থ্য বাবাসহ মা ও বোন সবাই প্রতিদিন তার জন্য কান্না করছেন। মরদেহটি দেশে এনে দাফন করা পর্যন্ত তাদের কান্না থামবে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমার ভাইয়ের মরদেহটি যেন দ্রুত দেশে এনে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নোমান হোসেন দুলাল বলেন, মরদেহ দেশে আনার জন্য আমরা সকল কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছি। ওই কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সৌদিতে বাংলাদেশী দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জায়েদের মরদেহ এখনো দেশে আনা হয়নি। তার মরদেহ দ্রুত দেশে আনতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের যুগ্ম-সচিব শোয়াইব আহমাদ খান মোবাইলফোনে বলেন, মরদেহ আনার জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। ২ অক্টোবর আমরা সৌদি আরবের জেদ্দায় কনস্যুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশ কাউন্সেলরের (শ্রম) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। সেখান থেকে তারা চিঠি ফেরত পাঠিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী দুই মাস পর আবার চিঠি পাঠাতে হবে। তবে আমরা এরআগেই চিঠি পাঠিয়ে মরদেগুলো দেশে আনার জন্য চেষ্টা করবো।
প্রসঙ্গত, নিহত অপর যুবক নজরুল হক কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দরবেশপুর ইউনিয়নের আশাদিয়া গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর- বিএন ০৬৭২৫৯৯।
0Share