নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অবসর প্রাপ্ত) আবদুল মান্নানের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। দুই মাসের জন্য তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী এবং রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান, সহযোগিতা করেন আইনজীবী মোহাম্মদ জামিল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান।
আদালত জানায়, সংবিধানের-৩৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে আবদুল মান্নানের চলাফেরার অধিকার লঙ্ঘনকে কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন বিভাগের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় করা ফৌজদারি মামলা থাকায় সাবেক এমপি আবদুল মান্নানের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হচ্ছিল না। বিদেশে যেতে তাকে বাধা দেওয়া হয়। এরই জেরে গত বুধবার একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা হাইকোর্টের আদেশে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়। রোববার অন্য একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিত তার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে আদালত আদেশ দেয়। দুটি রিটই করেন আবদুল মান্নানের মেয়ে তাজরিনা মান্নান।
এদিকে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মেজর মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি কমলনগর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ৩১শ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর তীর রক্ষাবাঁধের মেঘা প্রকল্প পাশ করিয়ে আনেন। বর্তমানে প্রকল্পটির কাজ চলমান রয়েছে। তবে আওয়ামীলীগের সাথে দূরত্বের কারণে ২০২৪ সালে তিনি মনোনয়ন পাননি। উল্টো আওয়ামীলীগের রোষানলে পড়েন এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
মেজর মান্নান বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারা বাংলাদেশ গঠিত হলে তিনি বিকল্পধারায় যোগদান করেন। বর্তমানে দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
মেজর মান্নান সেনাবাহিনীর চাকুরী শেষে ১৯৮০’র দশকে পোশাক কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বিশেষ সাফল্য লাভ করেন। বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স ইনটারনেট সার্ভিস প্রদানে তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স, সানম্যান গ্রুপ এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিনান্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স লিমিটেড, এক সময়ের জনপ্রিয় পানীয় বাবল আপ , এয়ারলাইন্স ও ওষুধ ব্যবসায় তার বিনিয়োগ রয়েছে।
মেজর মান্নান ১৯৪২ সালে সাবেক নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। বর্তমানে তার বসবাস নোয়াখালী জেলার সোনাপুরের শুল্যকিয়া ইউনিয়নের ইসহাকপুর গ্রামে। তার বাবা ইসহাক মিয়া এক সময়ের প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন।



0Share