সাফারি পার্ক: সাফারি পার্ক হচ্ছে এক প্রকারের অভয়ারণ্য। সাফারি পার্ক হচ্ছে সংরক্ষিত এলাকা এবং অভয়ারণ্য। তবে অভয়ারণ্য, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা জঙ্গলকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়। এখানে পশু ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক পরিবেশে হবে, তবে মানুষের মাধ্যমে হবে। ‘সাফারি’ কথাটার অর্থই হলো ‘কোনো দৃশ্যমান বেড়া নয়’, অর্থাৎ সাফারি পার্কে এমনভাবে প্রাকৃতিকভাবে বেড়া তৈরি করা হয়, যা দেখলে বোঝাই যাবে না যে বেড়া রয়েছে। এরকম বেড়া খুব সাধারণ উপাদানেই তৈরি করা হয় এবং তৈরির পর তা গাছপালা, লতাপাতা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।
সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণী থাকবে মুক্ত, দর্শনার্থী থাকবেন সুরক্ষিত। দর্শনার্থীরা প্রাণী দেখতে যাবেন সুরক্ষিত গাড়িতে চড়ে, প্রাকৃতিক রাস্তা দিয়েই। এমনকি বন্যপ্রাণীদের খাবারও দেয়া হবে সুরক্ষিত গাড়িতে করে।
সাফারি পার্কের উদ্দেশ্য
(১) বনের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ।
(২) বাংলাদেশের বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণীকে নিজ আবাসস্থলে এবং আবাসস্থলে বাহিরে অবস্থায় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন ।
(৩) চিত্তবিনোদন, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা ।
(৪) বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী ফলজ, ফডার, ও মিশ্র প্রজাতির বাগান সৃজন ।
(৫) শালবনের বন্যপ্রাণী যেমন বানর, মায়া হরিণ, বেজী, বনরুই, বাঘদাস, বন বিড়াল, খড়গোশ, শিয়াল, খেকশিয়াল ও অজগরসহ বিপন্ন বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি ও সংরক্ষণ করা ।
(৬) বিরল ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন বাঘ, চিতাবাঘ, সাম্বার হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ এবং অন্যান্য তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা ।
(৭) গণ্ডার, এশীয় হাতী, পরিযায়ী পাখী, জলজ পাখী, বনছাগল, সিংহ, শ্লথ বীয়ার, কালো ভাল্লুক, মিঠা পানির কুমির, লোনা পানির কুমির, নীল গাই, জলহস্তী ইত্যাদি বিপন্ন ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণকরন ।
(৮) আহত ও উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর চিকিৎসার নিমিত্তে বন্যপ্রাণীর সেবাশ্রম ও হাসপাতাল স্থাপন
(৯) সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি
নিয়মাবলী
সাফারি পার্কে দর্শনার্থীরা, প্রাণীদের খাবার দিতে পারবেন না। তবে অনেক সাফারি পার্কে প্রাণীদের খাবার দেবার ব্যবস্থা করে দেয় কর্তৃপক্ষ, তবে সেক্ষেত্রে খাবার কিনেও নিতে হবে পার্ক কর্তৃপক্ষের থেকে। কর্তৃপক্ষ হিসেব রাখবেন কোন প্রাণীকে দর্শনার্থীরা কতটুকু খাবার সরবরাহ করলেন, সেই অনুপাতে তার দৈনিক খাবার তালিকার প্রয়োজনীয় অবশিষ্টটুকু কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেন।
বাংলাদেশে সাফারি পার্ক
১। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক-গাজীপুর, আয়তন ১৪৯৩.৯৩ হেক্টর।
২। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, কক্সবাজার, আয়তন, ৬০০ হেক্টর।
(ডুলাহাজারা সাফারি পার্ককে কেউ কেউ সাফারি পার্ক বলতে রাজি নন, কারণ এখানে প্রাকৃতিক অবকাঠামোর বদলে অত্যাধুনিক ও কৃত্রিম অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বেশি )
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং উইকিপিডিয়া
13Share