লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ডাক্তার বাড়ির মজিবুল হকের ছেলে মনির হোসেন ওরফে শঙ্কর অধিকারী ও তার শিশুসন্তান এবং স্ত্রীসহ ১১ জন ব্যক্তি হিন্দু ধর্ম হতে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহন করে। গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) লক্ষ্মীপুরে এক ওয়াজ মাহফিলে ধর্মান্তরিত হন তারা।
এরপর তাদের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বির্তক ওঠায় লক্ষ্মীপুর পুলিশ প্রশাসন তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন যে, তারা ভারতীয় নাগরিক। ওই ১১ ব্যক্তিসহ আরো একজনের কাছে ভারতীয় বৈধ পাসপোর্ট পায় পুলিশ। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদেরকে আটক করে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতে ফেরত পাঠায়।
পুলিশ জানায়, ধর্মান্তরিত ১২ জনের কাছ থেকে ভারতের বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তারা ভারতের নাগরিক। দুই মাসের ভিসা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে আসে তারা। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা ভারত ফিরে যায়নি। গত ডিসেম্বরে তারা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে বাংলাদেশি জন্মসনদ তৈরি করেছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে দ্রুত ভারত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া এলাকার ওয়াজ মাহফিলে শঙ্কর অধিকারী নামের মনির হোসেনসহ এবং তার পরিবারের ১১ জন সদস্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং নানা বির্তক তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশ তাদেরকে ভারতীয় পাসপোর্টসহ আটক করে।
মনির হোসেন ওরফে শঙ্কর অধিকারীর মা সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ফাতেমা জানান, ৩৫ বছর আগে তার ছেলে মনির হোসেনের বয়স যখন ১২/১৪ বছর ছিল তখন ঢাকার টঙ্গী এলাকায় তার খালার (ফাতেমার বোন হালিমা) কাছে থাকতো। ওইসময় সে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো। বিশ্ব ইজতেমায় একদিন মুড়ি বিক্রির সময় মনির হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বহু বছর পর পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে ফাতেমার পরিবার জানতে পারে মনির হোসেন কলকাতায় থাকেন, এবং শঙ্কর অধিকারী নাম গ্রহণ করেছেন। এরপর কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন মনির এবং জানান তিনি ভারতে বিয়ে করেছেন তার সন্তানও আছে। তবে ২৪ জানুয়ারী ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন বলে স্বীকার করেন মা ফাতেমা মেম্বার।
এ বিষয়ে ফাতেমা মেম্বারের ছেলে ও মনিরের ছোট ভাই জহির উদ্দিন জানান, মনিরের সন্ধান পাওয়া যায় ২০১৬ সালে। তখন তিনি একা বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং চেষ্টা করছিলেন কলকাতায় থাকা তার সন্তানসহ পরিবারকে নিয়ে একেবারে বাংলাদেশে চলে আসতে।
জহির আরো বলেন, “আমরা তখন জানতে পারি সে হিন্দু হয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়ার পর ও বাড়ি ঘরের ঠিকানা কাউকে বলতে পারেনি। বাংলাদেশ থেকে কারো মাধ্যমে ভারতে চলে গিয়েছিল। প্রথমে কলকাতায় একটি বন্দীখানায় ছিলো। তারপর সেখান থেকে ছাড়া পেলেও দেশে আসতে পারেনি। কলকাতায় থাকতে গিয়ে লোকজনের কাছে হিন্দু পরিচয় দেয়। এরপর হিন্দু মেয়েক বিয়ে করে। তার ঘরে সন্তানও হয়। পরে আরেক হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে সে দু ঘরে তার ছেলে মেয়ে আছে ৮ জন। আমরা যখন (২০১৬ সালে মনির বাড়িতে আসার পর) জানলাম সে হিন্দু হয়ে গেছে তখন দুইদিনের বেশি আমাদের বাড়িতে তাকে থাকতে দেইনি। ও চলে গেছিল আবার কলকাতায়।”
“৬/৭ মাস আগে (২০১৯ সালে) পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার ভাই দেশে চলে আসে। রামগঞ্জ উপজেলায় আসার পর মনিরসহ ধর্মান্তরিতরা গত কয়েক মাস ধরে উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের হাফেজ আয়াত উল্যাহর ঘরে ভাড়া থাকতো। অন্যদিকে তারা আত্মীয়দেরকে জানায় তার স্ত্রী-সন্তানদের সবাইকে নিয়ে মুসলমান হয়ে যাবে। এতে আমরা খুশি হই এবং তাদেরকে মেনে নিই।”
এরপরই গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা এর আগে ইসলাম গ্রহন করেনি। তাদের নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ছড়িয়ে অপ্রপচার চালাচ্ছেন এক শ্রেনি কিছু অসাধু সুবিদাবাদী।
এব্যাপারে পুলিশের হেফাজতের আগে মনির হোসেন বলেন, আমি ভারতে থাকাবস্থায় শঙ্ককর অধিকারী পরিচয় দিতাম। দেশে ফিরে পুর্বের পরিচয় দিয়ে একটি অটোরিক্সা চালিয়ে দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে জীবন-যাপন করছি। তবে কালেশা পড়েনি এবং কাউকে কালেমা পড়াইনি। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে তওবা করে পুনরায় কালেমা পড়ে মুসলিম হলাম।
স্থানীয়রা জানান, মনিরসহ তার পরিবার ইতিপূর্বে মুসলিম বলে পরিচয় দিলেও ইসলামী রীতিনীতি মেনে ধর্মান্তর হয়নি। পরবর্তীতে মনির ওরফে শঙ্কর অধীকারী মাহফিল কমিটির সাথে যোগাযোগসহ সহযোগিতা চাইলে তারা আদালতের মাধ্যমে আইনী প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধর্মান্তর করে নেয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ধর্মান্তরিত মনিরসহ ১২ জনের কাছ থেকে ভারতের পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। পাসপোর্টে মনিরের নাম শঙ্কর অধিকারী। তারা ভারতের নাগরিক। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদেরকে গ্রেফতার করে থানায় রেখে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
0Share