ঝড়-ঝঞ্ঝায় বিক্ষুব্ধ এক জনপদের নাম বাংলাদেশের উপকূল। জলোচ্ছ্বাস, নদী-ভাঙন, প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফেরে এখানকার মানুষ গুলোকে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলের ওপর দিয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’ বয়ে যায়। সে দিনের ঘটনায় ১০ লাখের মতো মানুষ মারা গেলেও ঝড়ের ৩দিন পর পাকিস্তান সরকার বিশ্বের দরবারে ঘূর্ণিঝড়টিকে তুচ্ছ প্রমাণের জন্য ৫ লাখ মৃত বলে প্রচার করেছিল।
১৯৭০ সালের নিহতদের স্মরণে এ বছর উপকূলের ১৬ জেলার ৫৫ স্থানে তৃতীয়বারের মত পালিত হচ্ছে ‘উপকূল দিবস’।
“১২ই নভেম্বর হোক উপকূল দিবস” শিরোনামে উপকূল দিবসের প্রস্তাব তুলে প্রথমবার গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন “উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ও উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমবার ২০১৭ সালে দেশের ৩২ উপজেলার ৩৪টি স্থানে পালিত হয়েছিল উপকূল দিবস। এরপর থেকে প্রতি বছর ১২ নভেম্বর এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দেশের নাগরিক সমাজের বিখ্যাত বহু ব্যক্তিও এ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে দিবসটি পালনের সুপারিশ করেছেন তারা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রথম উপকূল দিবস পালনের খবর নজর কাড়ে বিবিসি ও ভয়েস অব অ্যামেরিকার মতো আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমসহ দেশীয় গণমাধ্যমের। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর স্মরণে “উপকূল বাংলাদেশ” নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডাকে ও স্থানীয় নানা সহযোগি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এ দিবস পালিত হয়ে আসছে।
এ বছর দেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিও এ দিবসের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে দিবসের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। এ বছর (২০১৯) ৯ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ’কোষ্টাল জর্নালিজম নেটওয়ার্ক’ এর উদ্দ্যোগে এবং ’চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’ এর সার্বিক সহযোগীতায় ”১২ নভেম্বরকে ’উপকূল দিবস’ হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে” একটি গোল টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
গুসি আর্ন্তজাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এ এইচ এম নোমানের সভাপতিত্ত্বে এতে অতিথি আলোচক ছিলেন, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য শাহাজাদা সাজু, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, সংবিধান বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ, জল পরিবেশ ইনষ্টিটিউটের চেয়ারম্যান ম. ইনামুল হক, পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম,উন্নয়ন বিশ্লেষক গওহার নঈম ওয়ারাসহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।
উপকূলের জন্য আবার দিবস কেন ?
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, উপকূলের জন্যও একটা দিবস প্রয়োজন আছে।
উপকূলবাসীর দিকে বছরে অন্তত একটি দিনে বিশেষভাবে নজর ফেলার জন্য, উপকূলের সংকট-সম্ভাবনার কথা বছরে অন্তত একটিবার সবাই মিলে বলার জন্যে একটি বিশেষ দিন দরকার। যেদিন সবাই মিলে একযোগে উপকূলের কথা বলবে। সেজন্য বাংলাদেশের উপকূলবাসীর জন্য সবচেয়ে শোকের দিন হিসাবে পরিচিত ১২ নভেম্বর হতে পারে ‘উপকূল দিবস’।
শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এই দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড কোষ্ট ডে’ হওয়া উচিত।
সেদিন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা। ওই সময়ে সেখানকার ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। একটি এলাকার প্রায় ৪৬ শতাংশ প্রাণ হারানোর ঘটনা ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ওই ঘূর্ণিঝড়ে তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দ্বীপচরসহ বহু এলাকার ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। উপকূল অঞ্চলের বহু এলাকা বিরাণ জনপদে পরিণত হয়।
২০১৭ সালের ১৮ মে জাতিসংঘ ওই দিনে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়টিকে পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঝড় হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই উপকূল সুরক্ষার তাগিদে ওই দিনটিকেই “উপকূল দিবস” হিসেবে পালনের জন্য দাবি উঠেছে সমগ্র উপকূলে।
উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টুর আহবানে সাড়া দিয়ে ২০১৭ সালে “উপকূল বাংলাদেশ” নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে স্থানীয় নানা সহযোগি প্র্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় একযোগে উপকূল জুড়ে প্রতি বছর উপকূল দিবস পালিত হয়ে আসছে।
দিনটিকে “উপকূল দিবস” হিসেবে পালন করা হলে ‘৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণ করা হবে। একযোগে সবার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হবে প্রান্তজনের কথা। ওই দিন একসঙ্গে আলোচনায় উঠে আসবে উপকূলের সমস্যা আর সম্ভাবনার গল্প। তাই উপকূলের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য ১২ নভেম্বর চাই উপকূল দিবস।
0Share