সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর মঙ্গলবার , ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খালে খালে দখলবাজি; অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর মাছের জালের বদ্ধপানিতে লক্ষ্মীপুরের সর্বনাশ

খালে খালে দখলবাজি; অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর মাছের জালের বদ্ধপানিতে লক্ষ্মীপুরের সর্বনাশ

158
Share

খালে খালে দখলবাজি; অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর মাছের জালের বদ্ধপানিতে লক্ষ্মীপুরের সর্বনাশ

সানা উল্লাহ সানু | দেশ বিদেশে আলোচিত ফেনীর বন্যা যেন ধাক্কা খেয়ে দাড়িঁয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরে। প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত জেলার ঘরবাড়িতে গলাসমান পানি। দিশেহারা জেলাবাসী। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা যেন পানির সাগর। রামগঞ্জ, রায়পুরে পানিতে টইটম্বুর । রামগতি ও কমলনগরের পাঁচটি ইউনিয়নসহ নোয়াখালী সদর উপজেলায় ৪০ দিনেও যেন একফোটা পানি নড়ছে না। অবর্ননীয় দূর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ। দূর্যোগের জেলায় এমন বন্যা আর পানিকে নজিরবিহীন বলছে স্থানীয়রা।

লক্ষ্মীপুরে এসে বন্যা কেন দাঁড়িয়ে গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে গভীর ভাবে তা জানার চেষ্টা করছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ বিষয়ে জানার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা প্রতিটি আতংকের গল্প। বিষয়টি জানার জন্য গত ৫-৬ দিনে বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৪০-৫০ জন মানুষের সাথে কথা বলে তাদের অভিজ্ঞতা জানতে চাই। ভুক্তভোগীদের সকলেই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

রায়পুর উপজেলার বাসিন্দা তাহসিন হাওলাদার, সদর উপজেলার বাসিন্দা সেকান্তর, কমলনগরের আবদুর রহমান বিশ্বাস এবং রামগতি উপজেলার বাসিন্দা মিশু সাহা নিক্কন জানিয়েছেন, উপকূলীয় জেলাগুলোতে বন্যা হয় না। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুর জেলার দক্ষিণ এবং পশ্চিমে চারটি উপজেলার রয়েছে মেঘনা নদীর প্রায় ৭৬ কিলোমিটার সীমানা। জেলার ভেতরে রয়েছে অসংখ্য খাল । লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত পানি খুবই দ্রুত খাল হয়ে নদীতে পড়ার কথা ছিল। তাই লক্ষ্মীপুর জেলায় বন্যা হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্ত এবার বন্যায় হয়েছে এবং তা গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোগান্তির বন্যা।

স্থানীয় অধিবাসীদের অভিজ্ঞতার সাথে পুরো একমত, জলাবায়ু বিষয়ক আর্ন্তজাতিক খ্যাতিমান ও উপকূল বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু। তিনি বলেন, “ নদ-নদী খাল বেষ্টিত উপকূল হচ্ছে সারাদেশের পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র পথ উপকূল। উপকূলে ঘূর্নিঝড় হয়, নদীর জোয়ারে মাঝে মধ্যে কয়েক ঘন্টার জন্য উপকূল প্লাবিত হয়। আবার ৫-৬ ঘন্টা কিংবা তার একটু বেশি সময়ের মধ্যে সে পানি নেমে যায়। ঢল কিংবা বৃষ্টি যেভাবেই হোক বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের মতো উপকূলীয় জেলায় এসে এখানে প্রায় দুই সপ্তাহ আটকে থাকা পুরোপুরি অস্বাভাবিক। দীর্ঘ সময় ধরে দখলবাজি, জলাশয় আটকে দেয়াই একমাত্র কারণ বলে জানান তিনি’’।

 

বাঁধে বাঁধে আটকা পানি
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টুর মন্তব্যের সাথে পুরোপুরি মিল পাওয়া গেছে লক্ষ্মীপুরের পথে পথে। মেঘনা নদীর নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা গেছে নদীর পানি পাড় থেকে ৮-১০ ফুট নিচে। মেঘনাপাড়ের বহু এলাকায় ফসলি জমিতে পানি নেই। এর পুরো বিপরীত চিত্র একটু দূরে শুধু পানি আর পানি। মেঘনা নদী থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদর এবং নোয়াখালীর সুর্বনচর ও সদর উপজেলা হয়ে ছুটে আসা ভুলুয়া নদ ছুটে মিশেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ওয়াপদা খালে। অন্য অংশ ছুটে গেছে নোয়াখালীর ভেতরে। ৭৬ কিলোমিটার এ নদের প্রতি ১শ ফুটে রয়েছে মাছ ধরার একটি করে জাল কিংবা একটি ডুবন্ত বাঁধ, বাড়ির পথ, ইটভাটার রাস্তা।

নানা প্রজাতির এ জাল ও বাঁধে পানি কোন ভাবেই নড়ছে না। রামগতির চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের কোডেক বাজার থেকে আজাদনগর এলাকায় কয়েকজন ভূমি ডাকাত ভুলুয়া দখল করে বসতি স্থাপনকারীদের নিকট বিক্রি করেছে। তারা নদীতে মাছের ঘের, মুরগীর খামার করেছে। ৫শ মিটার চওড়া ভুলুয়া এখানে এসে হয়ে গেছে ৩০ ফুট। ফলে ৭৬ কিলোমিটার দূরের পানি এ ৩০ ফুট অগভীর পথ দিয়ে বের হচ্ছে না। যার কারণে জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আগষ্ট জুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা থেকে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে আছে ভুলুয়া পাড়ের অন্তত ৩ লাখ মানুষ। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে সে এলাকার বাসিন্দাদেও সাথে কথা বলে জানা গেছে বৃষ্টি না হলেও তারা আগামী ১৫দিনেও বাড়ি ফিরতে পারবে না।

লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পূর্ব পাশের ভবানীগঞ্জ থেকে তোরাবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়ক পাশ দিয়ে মুছার খালের এক মাথা গেছে ওয়াপদা খালে অন্য মাথা মেঘনায় । প্রায় ১শ ফুট চওড়া খালটির ওপর চর মনসা এলাকায় আশপাশের কয়েকটি ইটভাটা বড় বড় রাস্তা তৈরি করে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে খাল। ফলে পূর্বপাড়ের কয়েক হাজার একর জমিতে ফসল ডুবে গেছে। হাজার হাজার মানুষ গত প্রায় ৪০ দিন যাবত পানি বন্দি। এখন বন্যার পানিতে বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে। জেলার অন্তত ১০টি খালের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবগুলো খালে রয়েছে স্থানীয় দখলদারদের বড় বড় বাঁধ।

ছোট নদী ডাকাতিয়া । কুমিল্লা থেকে আঁকাবাঁকা পথে চাঁদপুর ও নোয়াখালী হয়ে এসে পৌঁছেছে লক্ষ্মীপুর। স্থানীয় বাসিন্দা আজম খাঁন ও আবদুর রহমান সুমন জানায়, রায়পুর বাজার থেকে ডুবন্ত ও দৃশ্যমান শতশত বাঁধে আটকে গেছে ডাকাতিয়া। রায়পুর সরকারি মহিলা কলেজ করা হয়েছে ডাকাতিয়া নদীর বুকে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীটি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে মোটা জাল আর কচরিপানার বাঁধ দিয়ে করছে মাছ চাষ। ডাকাতিয়ার কয়েক কিলোমিটারে এখন স্রোত চলে না। ফলে ডুবছে রায়পুরের মানুষ। রায়পুরের বাসিন্দা তাহসিন হাওলাদার জানিয়েছেন ডাকাতিয়ার বুকে গত ৪০ বছরে কোন ড্রেজিং হয়নি।

খালে খালে আবর্জনা
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি হয়ে পশ্চিমের ডাকাতিয়া নদীতে পানি প্রবাহের একমাত্র খালের নাম বিরেন্দ্র খাল। রামগঞ্জ উপজেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিরেন্দ্র খালে শতশত টন আর্বজনায় সোনাইমুড়ির পানি ডাকাতিয়ায় যেতে পারছে না। এ খাল এখন কার্যত বন্ধ। ফলে এক মাসের বেশি সময় জলাবদ্ধতা থেকে এখন বন্যায় ভাসছে পুরো উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।

লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের মান্দারি একটি বড় বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে রহমতখালী খালের সাথে মিলেছে মান্দারি-মোল্লারহাট খাল। খালটির মুখ থেকে বাজারের প্রায় ৫শ মিটারের মধ্যে এক ইঞ্চি জায়গা খালি নেই। ময়লা আবর্জনাতে ভরে আছে পুরো খাল। পানি নামার কোন পথই নেই। খালের দুপাড়ে গত ১০ হাজার বাসিন্দা প্রায় একমাসের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি। জলাবদ্ধতা থেকে সৃষ্ট বন্যার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ । খাল দিয়ে পানি নড়ছে না। লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রহমত খালী খাল পাড়ে যতগুলো বাজার রয়েছে, সকল বাজারের শতশত টন ময়লায় খালগুলো ভর্তি। স্থানীয় বাসিন্দা জুনায়েদ আহমেদ জানিয়েছেন এ খাল হয়েই নোয়াখালীর বন্যার কিছু পানি নামছে মেঘনা নদীতে। কিন্ত ময়লা ভর্তি খাল এখন পানি নিতে পারছেনা। তাই রহমতখালীর দুপাড়ে কয়েকটি ইউনিয়নে দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা থেকে এখন বন্যা।

জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানা গেছে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপি ১শ ৭৯টি ইজারাপ্রাপ্ত হাট বাজার রয়েছে। এর বাহিরে আরো শতাধিক ছোট ছোট বাজার রয়েছে। গ্রামের সকল বাজার থেকে উৎপন্ন ময়লা আবর্জনার বেশির ভাগই ফেলা হয় নিকটবর্তী খালে। এতে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে খাল মরে গেছে।

অপরিকল্পিত উন্নয়ন
ভুলুয়া নদীর চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে ভুলুয়া নদীর ওপর একটি সুরু সেতু । সেতুটির স্প্যান (বীম) পানির লেভেল থেকে প্রায় ৬ফুট নিচে। সেখান থেকে ৩-৪ নিচে মাটি। ফলে এসেতুটি নিজেই ভুলুয়া নদীর পানি নেমে যেতে বাঁধা দিচ্ছে। সদর উপজেলার মুছা খাল থেকে সরু একটি খাল ছুটে গেছে মেঘনা নদীতে। এক মাথার নাম ছরিখাল এবং অন্য মাথার নাম ভুট্টোরখাল। চর লরেঞ্চ গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় দেখা গেছে বিভিন্ন বাড়ির পথের জন্য অনেকেই কালভার্ট তৈরি করেছেন। ৩০ ফুট চওড়া খালটিতে প্রতিটি কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে ৩ফুট চওড়া করে। স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ জাবেদ জানিয়েছেন, তাহলে ৩০ ফুট খালের আর কি প্রয়োজন। এ কালভার্ট গুলোর কারণে প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার সব ফসল পঁচে গেছে। সকল বাড়িতে পানি। অথচ এ খাল থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে গিয়ে দেখা গেছে জমিগুলো শুকনো। স্থানীয় যুবক সবুজ জানিয়েছেন ছরিখালের কালভার্টের মতো জেলাব্যপি হাজার হাজার কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে যেগুলো খালের চেয়ে ৯০ গুণ ছোট। এসব উন্নয়নকে অপরিকল্পিত এবং অপউন্নয়ন বলে অভিহিত করেছেন ওই যুবক।

খালে খালে মরা গাছ, কচরিফেনা
জেলার পানি নামার প্রধান ওয়াপদা খাল, ডাকাতিয়ায় রয়েছে শতশত টন কচুরিপানা। এসব আগাছার কারণে পানি যেতে পারছে না। সদর উপজেলার হোড়াখালী খালের প্রায় ১ কিলোমিটার যেতে পড়েছে অন্তত ২০টি মরা গাছ। পাড়ের এসব গাছ পানিতে পড়ে আছে দিনের পর দিন। এসকল গাছে ময়লা আবর্জনা আটকিয়ে পানি বাঁধা গ্রস্থ করছে।

স্লুইচ গেট দখল
নদীর জোয়ার ও সেচের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃটিশ আমলেই লক্ষ্মীপুরে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য রেগুলেটর এবং স্লুইচগেট। ভুলুয়া নদের শাখা রাতাচূড়া খালের স্লুইচগেচটটি দখল করে স্থানীয়রা বাজার বসিয়েছে। এতে ৬টি গেটের মধ্যে ৪টি গেট বন্ধ হয়ে গেছে। একই ভাবে একই বেঁড়ির মৌলভীরহাট বাজার স্লুইচগেট, চৌধুরীবাজা স্লুইচগেট এবং তোরাবগঞ্জ পূর্ব বাজারের স্লুইচগেট টি স্থানীয়রা দখল করে বাজার বানিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এ স্লুইচগেট গুলো দিয়ে ভুলুয়ার পানি বিভিন্ন খাল হয়ে মেঘনায় পড়তো। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানিয়েছে জেলার প্রায় ৮০ ভাগ স্লুইচগেচ দখল করে স্থানীয়রা বাজার তৈরি করেছে। এতে ওই খালগুলো দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন খালে ৮টি রেগুলেটর এবং ২৩টি স্লুইচগেট রয়েছে। প্রায় সবগুলো স্লুইচগেট দখল হয়ে গেছে।

খালের কতৃপক্ষ কারা ?
এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) মূলত বিভিন্ন নতুন খাল তৈরি করে এবং সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে প্রধান তিনটি নদী ছাড়াও ৯৯টি ছোট বড় খাল এবং এদের শাখা রয়েছে। যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৪শ ৯৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে ৭৬ কিলোমিটার লম্বা ভুলুয়া এবং ২৩ কিলোমিটার ডাকাতিয়া এবং মেঘনানদীর ৫০ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে লক্ষ্মীপুরে। সবগুলো খালের পানি ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্বে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্ত খাল সংস্কার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।

লক্ষ্মীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইকরামুল হক জানান, লক্ষ্মীপুরের প্রায় সবগুলো খাল বিভিন্ন ভাবে দখল হয়ে গেছে। গত অর্থ বছরে লক্ষ্মীপুরে মাত্র ৩টি খালে প্রায় ৭ কিলোমিটার সংস্কারের আদেশ দেয়া হয়। এ সামান্য খাল সংস্কার করতে গেলে বনবিভাগের গাছ, খালের সীমানা নির্ধারণ এবং প্রভাবশালীদের বাঁধায় খাল সংস্কারে বড় সমস্যা তৈরি হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) লক্ষ্মীপুর সেচ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিএডিসি লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন খালে ১শ ৪০ কিলোমিটার সংস্কার করেছে।

কাগজ কলমে খাল সংস্কার

লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যাপি দখল ও দূষণে খালগুলো মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ এসব খাল সংস্কার না করা এবং দখলে বাঁধা না দেয়া। জেলার বিভিন্ন ছোট বড় খালপাড়ের অন্তত ২০ জন এলাকাবাসীকে সরাসরি ও মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের এলাকার খালগুলো কখনো সংস্কার করতে তারা কেউ দেখেছে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে ২০ জন ব্যক্তিই বলেছিলেন গত ২০ বছরের মধ্যে কখনোই খাল কাটতে দেখেন নি তারা । সওদাগর কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার আবদুল গনি জানিয়েছেন, গত প্রায় ২৫ বছর আগে তার এলাকার একটি খাল কাটা হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। তবে কাগজে কলমে খাল কাটা হলেও বাস্তবে তিনি দেখেননি।

খালের কারণেই কি লক্ষ্মীপুরে বন্যা ?

খালের কারণেই লক্ষ্মীপুরে দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থেকে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে এমনটি বিশ্বাস করেন, জেলার প্রায় সকল অধিবাসী। চরপোড়াগাছার শেখের কেল্লা এলাকার গৃহবধূ নাছিমা (৪৫), বকুলি বেগম (৪০) এবং নোমান লস্কর (৬০) জানান, জুলাই মাসের ২২ তারিখ থেকে তাদের বাড়ির ওঠানে পানি। বাড়ির পাশে খাল দিয়ে পানি নামছে না। সদর উপজেলার মান্দারি ইউনিয়নের জামির তলীর বাসিন্দা তাজল ইসলাম (৫০) তিনি জানিয়েছেন ৩১ জুলাই থেকে তাদের পুরো গ্রাম ডুবে গেছে। সদর উপজেলার মধ্য চর মনসা গ্রামের আজিম (৩৪)সহ তাদের পুরো গ্রাম ৩০ জুলাই থেকে পানিবন্দি। বাসিন্দাদের অভিযোগ অতিবৃষ্টিতে নিকটস্থ এলাকার খালগুলো দিয়ে পানি নামতে না পারার কারণে তারা পানিবন্দি দীর্ঘদিন।

অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই আগষ্টের ভারী বৃষ্টির মাঝে ২০ আগষ্ট তারিখে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডম্বুর বাঁধ ছেড়ে দেয়ায় বাংলাদেশের ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়। তবে ২৪ আগষ্ট তারিখে লক্ষ্মীপুর ব্যাপী ভারী বৃষ্টি এবং নোয়াখালীর বন্যার পানি যোগ হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়। এতে জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌরসভার অন্তত ৩শ গ্রাম পানিতে ডুবে যায়। জেলাপ্রশাসকের তথ্যমেত ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়। এতে কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণীসম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালে খালে দখলবাজি; অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর মাছের জালের বদ্ধপানিতে লক্ষ্মীপুরের সর্বনাশ হয়েছে।

 

প্রকৃতি | পরিবেশ আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুরে ভুলুয়া নদীর অবৈধ বাঁধ অপসারণে কার্যক্রম শুরু

খালে খালে দখলবাজি; অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর মাছের জালের বদ্ধপানিতে লক্ষ্মীপুরের সর্বনাশ

লক্ষ্মীপুরের তেওয়ারীগঞ্জে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়েছে বহুবাড়ির গাছপালা; হুমকিতে গ্রাম

দেশ রক্ষায় নদী বাঁচানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জলবায়ু পরিবর্তনে ৫লক্ষ বৃক্ষরোপণ করবে সবুজ বাংলাদেশ

মেঘনায় কেন নেই ইলিশ, তা জানতে ইলিশ গবেষণা দল রামগতিতে

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com