সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বুধবার , ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কমলনগরে জমি বিক্রির আশ্বাসে নদী ভাঙা পরিবারের ১২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারক নাসির মাঝি চক্র

কমলনগরে জমি বিক্রির আশ্বাসে নদী ভাঙা পরিবারের ১২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারক নাসির মাঝি চক্র

কমলনগরে জমি বিক্রির আশ্বাসে নদী ভাঙা পরিবারের ১২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারক নাসির মাঝি চক্র

নিজস্ব প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর 

সালমা আক্তারের (২৮) জীবনে যেন কষ্টের শেষ নেই। মেঘনার প্রবল ভাঙ্গনে স্বামীর ভিটে মাটি হারিয়ে ৩ সন্তানসহ আশ্রয় নিয়েছিলেন বাবার বাড়িতে। স্বপ্ন দেখেছিলেন আবার নিজের একটা বাড়ি হবে , সুন্দর একটা ঘর হবে। তাই  বাবার বাড়িতে  আশ্রিতা সালমা কঠোর পরিশ্রম আর এনজিওর কিস্তি নিয়ে ৫ বছরে সঞ্চয় করেন কিছু টাকা । সন্ধান করেন একটি জমি। জমি কিনতে গিয়ে প্রতারক নাসির মাঝি গ্রুপের খপ্পরে পড়ে তার সব আশা এখন ধূলোমাটি। জমি বিক্রির আশ্বাস লিখিত স্ট্যাম্প চুক্তিতে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা নাসির মাঝিরা । এখন টাকা কিংবা জমি পেতে মানুষের ধারে ধারে ঘুরছে সালমা।

প্রতারক নাছির উদ্দিন ওরপে নাসির মাঝি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড এর ছৈয়দ আহাম্মদের ছেলে । 

ভুক্তভোগী সালমা আক্তার একই উপজেলার চর ফলকন গ্রামের জেলে শাকিলের স্ত্রী এবং চর ফলকন গ্রামের জেলে শাকিলের স্ত্রী এবং চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের কৃষক নুরুল হকের মেয়ে। 

ভুক্তভোগী সালমা ও তার বাবা নুরুল হক জানায়, বিগত ৫ বছর আগে মেঘনা নদীর প্রবল ভাঙ্গনে তার ঘরবাড়ি হারিয়ে যায়। একই বাড়ির ৬ পরিবার গৃহহীন হয়। চরম বাস্তবতার মুখে পড়ে পরিবারের ৫ সদস্যসহ সালমার ঠাঁই হয় বৃদ্ধ কৃষক বাবা নুরুল হকের বাড়িতে।

গৃহহীন সালাম বলেন, আশ্রয়ের জমি কেনার জন্য বাবা মা সহ প্রতিবেশিদের সহযোগিতায়  এবং ঋণ নিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করি। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা মৌজার আরএস ৮৪৩ নং খতিয়ান এবং ৬২৪ নং দলিলের ১৩৯০ নং দাগে আড়াই (২.৫ ) একর জমি বিক্রি হবে মর্মে সন্ধান পাই। জমিটি আমাদের পছন্দ হয়। জমির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে  নাসির মাঝি ও তার সহযোগীদের সাথে দেখা হয়। তখন নাসির মাঝি জানায় ২০ লাখ টাকা হলে তারা জমিটি ক্রয় করিয়ে দিবেন। আমি ১৫ লাখ টাকায় কিনতে রাজি হই ।  

এরপর আমরা বিভিন্ন বিষয় আলাপের পর স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে জমি ক্রয়ের জন্য মোট ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করি।  নাসির মাঝি, তার প্রধান সহযোগী কামাল, কামালের স্ত্রী স্বপনা বেগম,  কামালের শ্বশুর বশির মাঝিসহ সবাই মিলে আমাদের থেকে কয়েক ধাপে ১২ লাখ টাকা  নেন । ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুযারি তারিখে আমাদের সাথে লিখিত চুক্তি হয়। কয়েক দিন পর জমিও মেপে দেন। আমরা জমিতে নতুন আইল তৈরি করি এবং বাড়ির জন্য আড়া তৈরি করি। জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য প্রস্তুতি নিই। 

সালমা বলেন,  এরই মধ্যে নাসিরের সহযোগী মোঃ কামাল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে। কামালের মৃত্যুর পরপরই পুরোপুরো উল্টে যায় নাসির মাঝি। ২-৩ দিনের মধ্যে আমাকে জমি থেকে বিতাড়িত করে। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।  বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে এবং থানা পুলিশের উপস্থিতিতে একাধিকবার বৈঠক হয়। বৈঠকে নাসির মাঝি স্বীকার করে তারা আমার জমি রেজিষ্ট্রি করে দিবেন অথবা টাকা ফেরত দিবেন। কিন্ত বৈঠক শেষ হলে সব অস্বীকার করে। গত কয়েক বছর যাবত আমি তাদের পেছনে হাটঁতে হাটঁতে এখন ক্লান্ত ও অসহায় হয়ে গেছি। 

সালমার বাবা কৃষক নুরুল হক জানান, নাসিরের প্রতারণার পর থেকে  আমার মেয়ের জামাই রাগে ক্ষোভে আমার মেয়েকে ৩ নাতিসহ আমার বাড়িতে ফেলে গেছে। তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না। এখন আমি একদিকে ১২ টাকার চিন্তায় অন্যদিকে মেয়ের পরিবারের চিন্তায় প্রায় অসুস্থ হয়ে গেছি। 

নাসির মাঝির বাড়ির আশপাশের অন্তত ১০-১২জন ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তারা প্রত্যেকেই জানান, খুবই সাদাসিদে চলা নাসির মাঝি আগাগোড়া  একজন বড় প্রতারক। পেশায় ইটভাটার লেবার সরদার। কথা আর কাজে বড় এক প্রতারক। নদী ভাঙ্গা অসহায় পরিবারের মানুষ তার প্রধান টার্গেট। প্রতারণার ফাঁদ পেতে জমি বিক্রির আশা দিয়ে হাতিয়ে নেন মানুষের লাখ লাখ টাকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকার কারণে সব সময়ই আইনশৃঙ্কলা বাহিনীর চোখ ফাকিঁ দিয়ে চলেন। কোন আইনের জালেই পড়ে না এ প্রতারক।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে শুধু স্বপ্নাই না। একই ভাবে প্রতারণা করেছে আরো অন্তত ১০-১৫ জন ব্যক্তির সাথে। এ কাজে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বড় সিন্ডিকেট। তারা সবাই একত্রে মিথ্যা তথ্য সত্য আকারে মানুষের মাঝে তুলে ধরে জমি বিক্রি করবে বলে কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়ে পরে লাপাত্তা।

স্বপনার বাবা কৃষক নুরুল হক জানায়,  এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে প্রতারক নাসির মাঝিসহ ৪ জনের  বিরুদ্ধে  একটি মামলা দায়ের করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির মাঝি নদী ভাঙা অসহায় সালমার নিকট আমরা জমি বিক্রির কথা বলে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ১২ লাখ টাকা আমি একা গ্রহন করিনি। আমি কিছু টাকা নিয়েছি। বাকি টাকা আমার সহযোগী মৃত কামাল নিয়ে ছিল। কামাল মারা যাওয়ার পর ওই জমি নদী ভাঙা সালমার নামে রেজিষ্ট্রি না করে দিয়ে মৃত কামালের বাবা বশির মাঝি তার মেয়ে এবং মৃত কামালের স্ত্রী স্বপনার নামে রেজিষ্ট্রি করিয়ে দেন। এতে আমি নিজেও বাঁধা দিই। কিন্ত বশির মাঝি আমার কথা শোনেননি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানার এসআই হাফেজ আহাম্মদ খান বলেন, মামলাটি তদন্ত করে আমি জমি বিক্রির কথা বলে ১২ টাকা গ্রহনের  সত্যতা পেয়েছি এবং আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন বিষয়টি আদালত দেখবে। তবে নদী ভাঙ্গা অসহায় নারী সালমা এত বিপুল টাকা হারিয়ে এখন পাগলের মতো বিলাপ করছেন

 

কমলনগর সংবাদ আরও সংবাদ

কমলনগরে ভুয়া দলিল ও দখল মিথ্যা দাবী করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ভগ্নিপতির

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষাবিদ মাহমুদ উল্লাহর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল

কমলনগরে ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে ভুয়া দলিল ও জমি দখলে অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ‎

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বই বিক্রির অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবী, চাইলেন বিচার

ঢাকাস্থ কমলনগর ফোরামের সভাপতি ড. মাকসুদুর, সম্পাদক ফয়সাল

কমলনগরে ৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে প্রশাসন; ৪টিতে স্থগিতাদেশ

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com