সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর সোমবার , ৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সবাইকে ‘খুশি’ করে চলছে অবৈধ ৪৯ ইটভাটা ! তিন বছরে বেড়েছে ১১টি!

সবাইকে ‘খুশি’ করে চলছে অবৈধ ৪৯ ইটভাটা ! তিন বছরে বেড়েছে ১১টি!

সবাইকে ‘খুশি’ করে চলছে অবৈধ ৪৯ ইটভাটা ! তিন বছরে বেড়েছে ১১টি! চর আফজল গ্রামেই রয়েছে ২৭টি

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ইটভাটা রয়েছে ৫১টি। এর মধ্যে ৪৯টিরই কোনো ছাড়পত্র নেই। ফসলি জমির মাঠে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ভাটার বিরুদ্ধে নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। প্রশাসনকে ‘খুশি’ করেই চলছে এগুলো।

গত মৌসুমে রামগতিতে ইটভাটা ছিল ৪৯টি, এর মধ্যে বৈধ ছিল মাত্র দুটি। মৌসুম শেষে নতুন করে প্রস্তুত হচ্ছে আরও দুটি ইটভাটা। এ নিয়ে এই উপকূলীয় উপজেলায় মোট ইটভাটা ৫১টি। চর আফজল গ্রামেই রয়েছে ২৭টি। এ ছাড়া চর আলগী গ্রামে ৮টি, চর মেহার গ্রামে ১৩টি, চর কলাকোপা গ্রামে একটি ও চর পোড়াগাছায় রয়েছে দুটি।  রামগতিতে ২০২৩ সালে ইটভাটা ছিল ৪০টি, ২০২৪ সালে এসে তা বেড়ে হয় ৪৯টি এবং ২০২৫ সালে অর্থাৎ চলতি মৌসুমে প্রস্তুত হচ্ছে আরও দুটি ইটভাটা। গত তিন বছরে অবৈধ ইটভাটা বেড়েছে ১১টি। লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবী- চলতি বছর আরো ছয়টি ইটভাটা হওয়ার কথা ছিল, চারটি প্রস্তুত হতে দেওয়া হয়নি।

লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫১টি ইটভাটার মধ্যে বনলতা ও সরকার ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েছে। বাকি ৪৯টির জন্য কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রাখার আদেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

অবৈধ ইটভাটার ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বলেন, অবৈধ এ ভাটাগুলো পরিবেশ, স্বাস্থ্য, জমি, মাটিসহ সবকিছুর জন্যই ক্ষতিকর। এর কোনো উপকারিতা নেই, এরপরেও রামগতির মানুষ এর সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। দিন দিন কীভাবে ইটভাটা বাড়ছে, ছাড়পত্র ছাড়া কীভাবে চলছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ আবেদনই করেন না, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চালান এ কার্যক্রম।

অবৈধ ইটভাটার কারণে স্বাস্থ্যগত কী কী ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামনাশিস মজুমদার বলেন, ইটভাটা পরিবেশসম্মত না হলে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়াবেটিস, প্রেশার, এমনকি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন কঠিক রোগ হতে পারে।

চর মেহার গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী সাবিদ বলেন, অবৈধ ইটভাটার কারণে নিয়মিত শ্বাসকষ্টে ভুগি। এ ছাড়া চোখের ও চর্মরোগসহ নানান রোগ তো আছেই। আমার ঘরের পাশে ফসলি জমিতে ভাটা। ধুলো-বালিতে ঘরে বসবাসের পরিবেশ থাকে না।

নতুন মৌসুমের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ভাটাগুলো:
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার অবৈধ ইটভাটাগুলো ইট উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কোনো কোনো ভাটায় কাঁচা ইট প্রস্তুত শেষ পর্যায়ে, এখন শুধু আগুন জ্বালানোর বাকি, আবার কোনো কোনো ভাটা শুধু তৈরি করছে কাঁচা ইট। কেউ কেউ ইট পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে, কেউ ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। সব ভাটায় কাজ করছেন শত শত শ্রমিক। ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ভাটাগুলোতে অনেক শিশুকেও কাজ করতে দেখা গেছে।

ভাটাগুলো আশপাশের ফসলি জমির ফসল ও বিভিন্ন রবিশস্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট তৈরিতে ব্যবহার মাটির পুরোটাই আসছে ফসলি মাঠ থেকে। কৃষিজমি রক্ষায় কৃষি বিভাগের নেই কোনো পদক্ষেপ। প্রতিটি ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে কাঠ, এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই বন বিভাগের। নজরদারি নেই পরিবেশ অধিদপ্তরেরও।

উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজল গ্রামের বাসিন্দা ফারহাজ আহম্মেদ ও মো. মামুন জানান, ইটভাটা বৃদ্ধির কারণে এ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক ও নদীভাঙন কবলিত এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলো এক বছরও টিকছে না। ভাটার বিভিন্ন উপকরণ আনা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মিত গ্রামীণ সড়ক দিয়ে। ভারী যানবাহনে মাটি পরিবহনে নষ্ট হচ্ছে এসব সড়ক। গত বছরও অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধ হবে বলা হলেও একটিও বন্ধ হয়নি, এ বছরও অবৈধভাবে চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ।

একই গ্রামের বাসিন্দা মিলন মিয়া জানান, এক গ্রামে এতগুলো ইটভাটা ভাবতেই অবাক লাগে। ভাটার পাশেই স্কুল, সড়ক, বসতবাড়ি, কৃষিজমি, হাটবাজার ও গাছপালার বাগান। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ইট উৎপাদন। প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠলে এ গ্রামে আর বসবাস করার পরিবেশই থাকবে না। ইট উৎপাদন মৌসুম চলাকালে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তিনি আরও জানান, মৌসুম চলাকালে বছরে একদিন হয়তো হঠাৎ অভিযানে আসে প্রশাসন। ভাটার চিমনি ফেলে দেয়। হয়তো কিছু টাকাও জরিমানা করে। কিন্তু সকালে ভাটার চিমনি ফেলে দিলে আবার বিকেলে তা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ফের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় ভাটার।

সড়ক, পরিবেশ সবই ক্ষতিগ্রস্ত:
উপজেলার চর আলগী গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, সবগুলো ভাটা গড়ে উঠেছে ফসলি জমির মাঠে। একটি ইটভাটা থেকে অন্যটি খুবই কাছে। এভাবে চলতে থাকলে জমিতে ফসল ফলাব কী করে? ফসল উৎপাদন নিয়ে আমরা শঙ্কিত। কৃষি অফিসও আমাদের দিকে দেখে না। আমরা এলাকার লোক, কিছু বললে আমাদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখায় ভাটার মালিকরা। প্রশাসন বন্ধ ঘোষণা দিলেও সবগুলো ইটভাটা স্বাভাবিকভাবেই চলছে।

চর আফজলের কৃষক রফিক উদ্দিন বলেন, এ গ্রামের আশপাশে ২৭টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় আশপাশের ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করা হয়। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও একটিও বন্ধ হয়নি এত বছরে। তিনি বলেন, ভাটাগুলোতে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টর-ট্রলির মাধ্যমে। ভারী ট্রাক্টরের চাকায় ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে।

মাইকিং আর সভায় ব্যস্ত প্রশাসন:
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি ইটভাটার মালিক জানান, এ বছরও চলবে বাংলা এই ভাটা। পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে আগামী বছর হাওয়াই (পরিবেশবান্ধব) ইটভাটা প্রস্তুত করার ইচ্ছা আছে। ছাড়পত্র ছাড়া কীভাবে চালান এ অবৈধ ইটভাটা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সবাইকে খুশি করেই চালিয়ে আসছি। তিশা ব্রিকস লিমিটেডের (টিবিএল) মালিক এবং উপজেলা ব্রিকস ফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছানাউল্যা বলেন, তাদের সংগঠনের ৪৯ সদস্যের মধ্যে অনেকে বৈধ কাগজপত্রের জন্য আবেদন করেছেন।

সংগঠনের সভাপতি খলিল উল্যাহ বলেন, কিছু ভাটার মালিক বৈধ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। তবে বৈধ চিমনি স্থাপন, ফসলি জমি রক্ষা, সড়ক নষ্ট করা, কাঠ পোড়ানো এবং অবৈধ ভাটা বন্ধের বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

রামগতির ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর করতে ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রাখতে গত আগস্ট মাসে যেসব এলাকায় ইটভাটা রয়েছে ওইসব এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও প্রচার চালানো হয়েছে। অনুমোদনহীন এসব ইটভাটা বন্ধে সম্প্রতি এক সভা হয়। এতে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন ও সরকারি আদেশ নিয়ে আলোচনা হয়।

স্বাস্থ্য আরও সংবাদ

ছদ্মবেশে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান করলো দুদক 

রামগতিতে কোডেক’র ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

অবৈধ ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলে ক্ষতবিক্ষত সড়ক, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স | অর্ধেকেরও কম জনবল দিয়ে চলছে কার্যক্রম

লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়ায় বন্যার্তদের মাঝে বিন্যামূল্যে চিকিৎসা সেবা

রামগতিতে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সম্পর্কিত সভা

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com