সুরঞ্জনা
মুজতবা আল-মামুন
কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন
“সুরঞ্জনা তুমি যেও নাকো ওই যুবকের সাথে
বলো নাকো কথা”।
আমি বলি, সুরঞ্জনা তুমি যেতে চাও তো যাও
ওই যুবকের সাথে – যদিও বিপন্ন সময় এখন,
ফিরে এসো ইচ্ছে হলে হঠাৎ কখনো
শীতের কুহেলী ঢাকা
সেই শুক্লা তিথীর-তারা ভরা রাতে।
হঠাৎ পেঁচা কিংবা শিয়ালের ডাকে
ভয় পেও নাকো
ফিরে যেও আর’বার যদি যেতে চাও
সেই ছেলেটিরই সাথে।
ফিরে এসো ইচ্ছে হলে কখনো আবার
যেখানে তারার ভীড়ে জোনাকীরা নাচে
যেখানে দোয়েল ফিঙ্গেরা শুধু ডাকে
ভরা যেথা ঘাঁসফুল আর মৌমাছিতে
সেখানে লাবন্য তোমার
মাটির গন্ধে ভেসে আসে।
সমুদ্রসফেন সেই ঢেউয়ের দোলায়
মরালীর গ্রীবা সম
নীল আকাশের নীচে জাহাজের নাবিকেরা
মিটি মিটি তারা জ্বেলে
অথৈ সাগর বক্ষে ভাসে ।
সুরঞ্জনা ! তুমি যেতে চাও তো যাও
সাগর বক্ষে ওই যুবকেরই সাথে,
যেথা অর্নবপোত সবে
নীঝুম নীরব রাতে
মরালীর মতো স্রোতে ভাসে ।
হয়তো জলের ফেনা সুমসৃণ
কাশফুলের মতো ভেসে যাবে।
হয়তো আসবে ফিরে
শ্বেত-পারাবত হয়ে
স্নিগ্ধ কোমল পাখায়
আমার এ বুকের সাগর নীরে ।
সুরঞ্জনা, শুধু একবার এসে
চুপি চুপি বলে যেও ‘ভালোবাসি’
কোন এক তারা ভরা রাতে;
তারপর হংস-মিথুন সম
জলে ভেসে যেও তুমি
ওই যুবকের সাথে ।
সুরঞ্জনা একটি লাবণ্যময় প্রেমের কবিতা । এখানে কবি প্রেমিকাকে কোন বাঁধনে বাঁধতে চাননি উপরন্তু স্বাধীনতা দিয়েছেন যুবকের সাথে যাওয়ার জন্য এবং অন্তিমে কবি আহবান করেছেন শুধু একবার ফিরে আসার । সুরঞ্জনা কবিতাটির রচনাকাল ৩০ জুলাই ১৯৯৯ খ্রীস্টাব্দ, উক্ত কবিতাটি ২০২১ খ্রীস্টাব্দে কবির মনিহার নামক কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।
0Share