সানা উল্লাহ সানু | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর 

পহেলা বৈশাখ বা নতুন বছর এলেই সবার জন্য উৎসব হয় না। মাথায় আসে খরচ বাড়ার চিন্তা। পহেলা বৈশাখ মানে উৎসব না, খরচ বাড়ার আনুষ্ঠানিক দিন। কারণ এদিন বাংলাদেশের শহর এবং গ্রামগঞ্জের সব খানে হাটবাজার, নদীর ঘাটে নতুন ইজারাদার বসে। নতুন করে টোল ও খাজনা নেয়। বাসা বাড়ির মালিকরা দোকানঘর ও বাসাবাড়ির ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই তাদের পুরনো দোকানঘর ব্যবসা বাণিজ্য হারিয়ে ফেলে। পহেলা বৈশাখ থেকেই এমন উলট পালোট শুরু হয়। 

এভাবে পহেলা বৈশাখ নিয়ে সোমবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নিজের নানা অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ক্ষুদ্র দোকানদার মোঃ আবুল হাসেম। আবুল হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। তিনি জানিয়েছেন প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এলেই তার জীবনে নেমে আসে নতুন নতুন দুঃচিন্তা। তিনি বিভিন্ন বাজারে ফুঠপাতে ও দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি বছরই কখনো কখনো এ দিন ফুটপাতের জায়গা হারিয়েছেন নতুবা দোকান হারিয়েছেন নতুন ভাড়ার কারণে।

একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, পান ব্যবসায়ী শাহজাহান। তিনি জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাইকারীতে পানের ব্যবসা করেন। কিন্ত পহেলা বৈশাখ এলেই ইজারাদারদের কারণে কয়েকটি বাজার থেকে তিনি দোকান পজিশন হারিয়েছেন। বর্তমানে ব্যবসা করেন মান্দারি বাজারে। পহেলা বৈশাখে নতুন হারে খাজনা দিতে হবে ।

লক্ষ্মীপুর শহরের একটি বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, পহেলা বৈশাখ এলেই সারা বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের সকল হাটবাজার ও ঘাটে ঘাটে নতুন ইজারাদার আসে। কারণ বছরের শুরুতে ইজারা নবায়ন হয় বা নতুন ইজারা দেওয়া হয়। ফলে পূর্বের তুলনায় হাটবাজার ও ঘাটের টোল ও খাজনা বেড়ে যায়। মানুষের খরচ বাড়ে। আর তখন মালিকরা বাসা বাড়ি ও দোকান ঘরের ভাড়া বাড়িয়ে দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে এটা অনেকটা ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় নিয়মিত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই শিক্ষক বলেন, আমার বাসা ভাড়াও পহেলা বৈশাখ থেকে বেড়েছে।

স্থানীয় তোরাবগঞ্জ বাজারের সাবেক ইজারাদার মোঃ বেলাল হোসেন জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন বিভিন্ন হাট বাজার ও ঘাট ইজারা দেয় সরকার। ইজারারা নীতিমালা অনুসারে প্রতি বছরই বিগত বছরের তুলনায় বেশি মূল্যে ইজারা প্রদান করা হয়।  নতুন ইজারাদার বিগত বছরের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে ইজারা নেয়।

ফলে তারা দোকানদার ও ঘাট ব্যবহারকারিদের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে । যেটা পহেলা বৈশাখ থেকে কার্যকর হয়। এ কারণে বৈশাখ এলেই দোকানদারদের খরচ বাড়ে। দোকানদাররা সে খরচ বাড়িয়ে নেয় ক্রেতাদের থেকে।

চাহিদা বেশি থাকার কারণে দোকান বা বাসার মালিকরা এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বাসাবাড়ি ও দোকান ঘরের বাড়তি ভাড়া দাবি করে। আর সেটা কার্যকর হয় পহেলা বৈশাখ থেকে।

মুদি ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন বলেন, পহেলা বৈশাখে আমরা নোয়াখালীর চৌমুহনী আড়তে হালখাতা করতে হয়। এটাও আমাদের জন্য বাড়তি চাপ। তিনি বলেন, তাই বৈশাখ মানেই আমাদের নিকট আতংক। কারণ হালখাতা, দোকান ভাড়া বৃদ্ধি, বাজারে ইজারা বৃদ্ধি সব কিছুই কার্যকর হয় পহেলা বৈশাখে।

কলেজ শিক্ষক মোঃ মহি উদ্দিন মুন্না বলেন, পহেলা বৈশাখ এলেই ভাড়াটিয়াদের ওপর চাপ পড়ে, বিশেষ করে যারা ছোট ব্যবসায়ী বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত। অনেক সময় মালিক তার পূর্বের ভাড়াটিয়া কে দোকানঘর ও বাসা বাড়ি থেকে একেবারে বের করেও দেন। এতে পহেলা বৈশাখে অনেকে  তার বহু দিনের পুরো ব্যবসা ও বাসা বাড়ি হারিয়ে ফেলে। তাই পহেলা বৈশাখ মানেই এখন যেন খরচ বৃদ্ধি ও কার্যকরের দিনে পরিণত হচ্ছে। এ কারণে পহেলা বৈশাখে বাড়তি ভাড়া বাড়তি ইজারার ভয়ে আতংকে থাকে দোকানদার ও ভাড়াটিয়ারা।