লকডাউনের কারণে শুধুমাত্র দূরপাল্লার গণ পরিবহন বাস বন্ধ থাকায় লক্ষ্মীপুরে এ খাতের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য বিধিমেনে বাস চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
রোববার (২ মে) সকালে জেলা বাস ও মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে শহরের উত্তর তেমুহনী মুজিব চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে বাস শ্রমিকরা। এসময় আগামী মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন বক্তারা।
আয়োজিত সমাবেশে শ্রমিকরা জানায়, জেলায় কয়েক হাজার পরিহন শ্রমিক এবং কাউন্টারগুলোর মালিক- শ্রমিকরা অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদেরকে দেখার কেউ নেই।
শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানায়, লকডাউনে শুধুমাত্র বাস বন্ধ রেখে সব ধরনের অফিস আদালত, মার্কেট, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, কার, মাইক্রোবাস চালু রাখা হয়েছে। এতে গন্তব্যস্থলে যেতে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি অর্থ। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা, দূর্ভোগে থাকছে সাধারণ মানুষ। শ্রমিকদের দাবী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করলে এ খাতের শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীরাও হয়রানি মুক্তি থাকবেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বাস ও মিনিবাস সড়ক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ শাহজাহান, সহঃ সাধারণ সম্পাদক, মোঃ আল মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের, রায়পুর উপজেলা সভাপতি খোরশেদ আলমসহ প্রায় শতাধিক শ্রমিক।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হাজী শাহজাহান , স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান, খাদ্য সহায়তা এবং শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় চাল বিক্রির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
অন্যদিকে শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানিয়েছন, সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে পরিবহন খাতের ড্রাইভার, পরিদর্শক, হেলপার, কাউন্টার ম্যানেজার, সহকারীসহ এ খাতের সাথে জড়িতরা অভাব অনটনের থাকলেও দুঃসময়ে তারা পাশে পাচ্ছেন না পরিবহন মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারকে।
কয়েকজন শ্রমিক জানালেন, ধার-দেনা করে দিন কাটছে তাদের। সামনে ঈদ আসছে। এখন তিন বেলা কোনোমতে খেতে পারাটাও কষ্টের। সেখানে ঈদের খরচের কথা ভাবতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।
সমাবেশের বাহিরে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রুটের বাস চালক ইউসুফ মিয়া। বাস চলাচল করলে প্রতিদিন তিনি যে টাকা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চলতো। গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রীর নামে এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা এনে সংসার চালাচ্ছেন। আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছেন।
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের কাপড় ব্যবসায়ী জামাল মিয়া জানান, লকডাউনও বুঝি না, শুধুমাত্র যাত্রীবাহী বাস চলে না। লক্ষ্মীপুর থেকে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্তেই যাওয়া যায়। শুধু দরকার টাকা। তাহলে বাস বন্ধ রেখে কি লাভ হচ্ছে ?
সদর উপজেলার বটতলী এলাকার কাউন্টার ম্যানেজার সোহাগ জানায়, প্রতিদিন কমিশন ভিত্তিতে তিনি যাত্রী দিতেন বাসগুলোতে। তার কাউন্টারে চারজন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। লকডাউনের কারণে কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন চা বিক্রি করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছেন। আর শ্রমিকরা মাটি কেটে কোনভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে।
ঢাকা এক্সপ্রেসের মালিক ফারুক আহম্মেদ জানালেন, তিনি ব্যাংক ঋণ ও ধার দেনা করে লক্ষ্মীপুর- ঢাকা ও লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম রুটে পাঁচটি যাত্রীবাহী গাড়ী নামিয়েছেন। এ থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন গাড়ী না চলাচল করায় গাড়ীর ইঞ্জিনসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এতে করে তিনি আর্থিক লোকসানের মধ্যেও পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ শাহজাহান জানান, এ জেলায় কার্ডধারী পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা ৫৮০ জন। তবে কার্ডবিহীন পরিবহন শ্রমিক সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রসাশক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের মাঝে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।
0Share