নিজেস্ব প্রতিবেদক || লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর:
গত চার দিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের উপকূলের চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩-৪ ফুটের বেশি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেঘমা নদীর পাশ্ববর্তী এলাকাসহ অন্যান্য ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া তিব্র বৃষ্টি হওয়াতে বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
রামগতি আবহাওয়া সতর্কীকরণ অফিসের কর্মকর্তা মো: সৌরভ হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুরে আজ থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা এই মৌসুমে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টির রেকর্ড।
রামগতি উপজেলার চর রমিজের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, মেঘনার জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা ও নিচু ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়ে ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে আছি আমরা। অতিরিক্ত পানিতে আউস ধান, আমনের বীজতলা ও পানের বরজ নষ্টসহ ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন গৃহস্থ ও চাষিরা।
মাটিন ইউনিয়নের বাসিন্দা মাইন উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশপাশের খাল দখল, ছোট ছোট কালভার্ট তৈরি ও জাল বসানোর কারণে পানি ঠিক মতো নামতে পারছে না। এই সব বন্ধ না করা হলে আরোও বড় ধরণের দুর্ভোগে পড়তে হবে সবাইকে।
চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল বলেন, গত বছর ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। তখন ভেসাল জালের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। এরা কাউকে তোয়াক্কা করে না। খালের মুখে ও ভুলুয়া নদীতে অবৈধভাবে ভেসাল জাল বসিয়ে রাখেন। পানি নামতে পারে না। প্রশাসন শুধু দেখে কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেঘনা নদীর মতিরহাট থেকে রামগতি পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের কাজের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় প্রতি বছর জোয়ারের পানি ঢুকে কমলনগর সব-কটি ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। এর জন্য লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন অনেকে। তাদের দাবি কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনার কারণে কাজের ধীরগতির হওয়ায় বর্তমানে অরক্ষিত রয়েছে রামগতি- কমলনগর।
২০২৪ সালের আগস্টের মাঝামাঝি ফেনী,লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী অঞ্চলের সাথে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমলনগরের বিস্তৃর্ণ জনপদ। তখনকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমলনগরের প্রায় ৬০℅ মানুষ। সেই ক্ষত মুচতে না মুচতে আবার জনমনে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে । গত বছরের বন্যা মোকাবেলায় সরকারের নেয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে খাল খনন শুরু হলে সেখানে কোন অগ্রগতি হয়নি। অবৈধ দখলের কারণে সকল খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
চরকালকিনি ইউনিয়নের এক নাম্বার ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য আবুল বাশার বলেন, জোয়ারের পানি ও অতিবৃষ্টির কারনে তার ইউনিয়নের সব এলাকা পানির নিচে। বর্তমান সাধারণ মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে মানুষেরও খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইউছুফ আলী মিঠু বলেন, বেড়িবাঁধের কাজ ধীরগতির কারণে বর্ষা মৌসুমে লোকালয়ে অতিদ্রুত পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া কমলনগরের সব খাল অবৈধ দখলে। দীর্ঘদিন থেকে দখল ও খাল খনন না হওয়ায় এখন খালগুলো মৃতপ্রায়। যার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ ছাড়াও অপরিকল্পিত বসতবাড়ি নির্মানের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সব বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত দেখা দিতে পারে বলে তিনি দাবি করছেন।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাহাত উজ জামান বলেন, অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চরকাদিরা ইউনিয়নের কিছু এলাকার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় আমরা আশ্রায়ন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করছি। এ বিষয়ে আমাদের আজ বিকেলে জরুরি মিটিং হচ্ছে।
0Share