আব্দুর রহমান বিশ্বাস | সম্প্রতি পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ার শুরু হলে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে মেঘনা নদীর পানি। এতে পানিতে তলিয়ে যায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওইসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক। বসত ঘরের ভিটে মাটি। একইসঙ্গে বীজতলায় পানি জমে থাকায় আমনের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ।
কমলনগরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানায়, গত ২২-২৮ জুলাই পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যার টানা মেঘনার জোয়ারের পানিতে উপকূল সংলগ্ন লোকালয়গুলো প্লাবিত হয়েছে।
নীচু এলাকা এবং ফসলি জমিতে পানি জমে থাকায় বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। পাকা ও কাঁচা সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসত বাড়ির উঠান ও ভিটের মাটি সরে গেছে।
নদীর তীররক্ষা বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বেশ কয়েকবার তারা এ ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। যদিও নদীতে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সময়মতো কাজ শেষ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
কমলনগর ও রামগতির স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার চরকালকিনি, চরমার্টিন, চর লরেন্স, চর ফলকন, সাহেবের হাট, পাটোয়ারীর হাট এলাকার কিছু কিছু অংশ প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব এলাকার বেশিরভাগ পুকুর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে।
মতিরহাট এলাকার বাসিন্দা আবু ছিদ্দিক বলেন, জোয়ারের পানির তোড়ে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট পাকা সড়কের বলিরপোল এলাকা থেকে শুরু করে স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কের পিচ ঢালাই উঠে কনক্রিট সরে গেছে। বেশ কয়েক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কের বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে।
মার্টিন এলাকার বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ আবুল খায়ের জানান, চৌধুরী বাজার থেকে নাছিরগঞ্জ পাকা সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা এবং নবীগঞ্জ থেকে চর লরেন্স সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে।
একই এলাকার বাবুল নামে একজন বলেন, উপজেলার মিয়া মার্কেট থেকে কালকিনি বোর্ড অফিস পর্যন্ত কাঁচা সড়কের মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে।
চরমার্টিন এলাকার কৃষকরা জানান, তিনি আমন আবাদের লক্ষ্যে বীজতলা তৈরি করেছেন। ক্ষেতে জোয়ারের পানি জমে বীজতলার চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আবারও তিনি বীজতলা তৈরি করবেন। কিন্তু এ মৌসুমে আরও কয়েকবার জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকবে। ফলে বীজতলা তৈরি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তিনি জানান তার মতো বেশ কয়েকজন কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমন আবাদ নিয়ে চিন্তিত তারা।
কমলনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শহীন রানা বলেন, উপজেলাতে ১৫৫০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ১৪২০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ২৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। এতে ৮০ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে।
0Share