সানা উল্লাহ সানু | লক্ষ্মীপুর জেলায় রয়েছে অনেকগুলো খাল এবং ৩টি নদী। তবে এসব খালের প্রকৃত সংখ্যা কত এবং কোন খালের কি নাম তা জানে না প্রশাসন ও খালপাড়ের বাসিন্দারা। মূলত দীর্ঘদিন থেকে খাল ও নদী দখল হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা খালের নাম ভুলে গেছেন। আবার দীর্ঘদিন তদারকি না করায় প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীরাও খালের সংখ্যা বলতে পারছে না এবং খালের নাম জানে না। লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপি মানবসৃষ্ট বন্যায় প্রায় ৩ মাস পানিবন্দি থাকার পর এমন বিষয়গুলো সবার নজরে এসেছে।
সে জন্য লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন নদী খালের সংখ্যা প্রকাশ, নামকরণ, খালে মাছ ধরার জাল বসানোর নিষেধাজ্ঞার গণবিজ্ঞপ্তি জারি এবং দখলমুক্তকরণে সহযোগিতা চেয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ান। সোমবার (১৪ অক্টোবর) তিনি এ আবেদন করেন বলে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর কে নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন,
আমাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত যে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর নদী খাল থাকার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে অতীতে কোন বন্যা হয়নি। কিন্ত গত আগস্টের বন্যায় উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে যে পানি এসেছে তা অক্টোবর মাসের মাঝমাঝিতে ও নামছে না।
তিনি বলেন,
মূলত লক্ষ্মীপুর জেলার সকল খাল ও নদী দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানি আটকে গেছে। এমন অসংখ্য খাল নদীর মধ্যে ভুলুয়া একটি। ভুলুয়া পানি আটকে যাওয়া এর আশপাশের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। বিষয়টি অনুধাবন করে আমি হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করি।
সাত্তার পালোয়ান বলেন,
মহামান্য হাইকোর্ট আমার রিটের প্রেক্ষিতে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভুলুয়া নদী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার সকল নদী খালের দখলমুক্ত করণে জেলা প্রশাসকগণকে আদেশ দেন। আদেশ পাওয়ার কয়েক দিন পরেও আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রশাসন কোন কাজ শুরু করেনি। পরে আমি নিজে সশরীরে লক্ষ্মীপুর জেলার ভুলুয়া নদীসহ বিভিন্ন খাল দখলমুক্ত করণের জন্য চেষ্টা করি। প্রশাসন আমাকে ও আমার সেচ্ছাসেবতদের সহযোগীতা করে। এসময় আমিসহ প্রশাসনের লোকজন দেখতে পায় প্রতিটি খালে রয়েছে হাজারো মাছ ধরার জাল। যেগুলো দিয়ে পানি যাওয়া মোটেও সম্ভব না। খালে খালে রয়েছে শতশত বাঁধ এবং দখল।
অন্যদিকে স্থানীয়রাও জানে না কোন খালের কি নাম ? পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন ইত্যাদি প্রশাসনের শাখা খালের প্রকৃত সংখ্যা আমাদেও ও আপনাদের সাংবাদিকদের জানাতে পারেনি।
তাই এ বিষয়গুলো ক্লিয়ার করা জন্য আমি ভাবছি লক্ষ্মীপুর জেলাকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সবার আগে দরকার নদী খালের সংখ্যা প্রকাশ করা, নামকরণ করা ।
অন্যদিকে খালের পানি প্রবাহ সচল রাখতে প্রতিটি খালে মাছ ধরার সকল জাল বসানো নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা জরুরী। পাশপাশি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে স্থানীয়দের মাধ্যমেও খাল দখলমুক্তকরণ সম্ভব। তাই প্রশাসন যাতে বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখে সে জন্য সোমবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট আবেদন জমা দিয়েছি।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র আমাকে নিশ্চিত করেছে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এ বিষয়ে একটি জরুরী সভা আহবান করবে জেলা প্রশাসক। সেখানে আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমার জরুরী কাজ থাকায় আমি মঙ্গলবারের সভায় উপস্থিত থাকতে পারবো না। কিন্ত আমি চাই খুব দ্রুত লক্ষ্মীপুর জেলা যেন জলাবদ্ধতা মুক্ত হয় এবং হাইকোর্টেও আদেশ যেন বাস্তবায়ন হয়।
0Share