সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘চেয়ারম্যান-মেম্বার আইসা দেইখা গেছে, কোনো সহযোগিতা দেয়নি’

‘চেয়ারম্যান-মেম্বার আইসা দেইখা গেছে, কোনো সহযোগিতা দেয়নি’

‘চেয়ারম্যান-মেম্বার আইসা দেইখা গেছে, কোনো সহযোগিতা দেয়নি’

নিজাম উদ্দিন: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের মাতব্বর হাট এলাকার বাসিন্দা বাধন হোসেন। পেশায় তিনি জেলে। মেঘনা নদীর ঠিক কিনারায় তার বসতি। মাতব্বর হাট সংলগ্ন সালামত উল্যা হাওলাদার রাস্তার দক্ষিণ মাথার এলাকার শাহাবুদ্দিন বাড়িতে তার টিনের তৈরি ঘর ছিল। সম্প্রতি (২৬ ও ২৭ জুন) ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মেঘনা নদীর সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস তার ঘরটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

রিমালের তাণ্ডবলীলা যখন চলছিল, তখন জেলে বাধন তার স্ত্রী পাখি বেগম ও তিন মাস বয়সী শিশুকন্যাকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। বাড়ি এসে দেখেন ঘর তো নেই, সেই ঘরের কোনো মালামালও নেই। শুধু পরনের কাপড়টুকুই ছিল।

বসতঘর ও মালামাল হারিয়ে বাধন হোসেন এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মাথা গোঁজার একটু ঠাঁয় পেতে তাই দিশেহারা তিনি। নতুন করে ঘর তোলার মতো কোনো অবস্থা নেই তার। তাই স্ত্রী এবং ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে।

৬৫ বছরের বৃদ্ধা বিবি কহিনুর। ছেলে, ছেলের বৌ, মেয়ে এবং নাতিসহ পাঁচজন মিলে যে ঘরে থাকতেন, সেই ঘরটি লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ফলে আশ্রয়হীন এ পরিবারটিও। শূন্য ভিটায় এখন কোনো ভাবে অস্থায়ীভাবে দুটো টিন দাঁড় করিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। কিন্তু ঘর তৈরি করার মতো সামর্থ্য নেই এ পরিবারটির।

গৃহবধূ শামসুন নাহারের ঘরটিও ভেঙে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে গেছে রিমাল। সে ঘরটি তিনি ধারদেনা করে মেরামত করে নিচ্ছেন। কারণ ঘরে থাকা বিবাহ উপযুক্ত দুই মেয়েকে নিয়ে তো অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই ঘরে খুব কাছে নদী থাকায় জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে ঘরের নিচের অংশে মাচা তৈরি করে সংস্কার করে নিচ্ছেন তিনি।

একই বাড়ির মো. জাহাঙ্গীরের ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। একাংশ মেরামত করে কোনো ভাবে বসবাস করছেন, বাকী অংশ মেরামতের মতো অর্থ তার কাছে নেই।

ওই বাড়ির এক বিধবা নারীর বসতভিটাসহ ঘরটিই নদীতে তলিয়ে গেছে। তিনি এখন আশ্রয়হীন হয়ে বাড়িই ছেড়েছেন। কারণ বসতভিটা যে স্থানে ছিল, ওই স্থানটি এখন উত্তাল নদীর অংশ।

কমলনগরের মাতাব্বর হাট সংলগ্ন এসব বাসিন্দা তাদের ঘর হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মেঘনা নদীর সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে। মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত নদী ভাঙন, অতিরিক্ত জোয়ারের প্লাবিত এবং বসতি হারানোর মধ্যে দিয়ে বসবাস করে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায়।

নদীর সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস কারো বসতভিটেসহ ঘর কেড়ে নিয়েছে, কারো বসতঘর ভাসিয়ে নিয়েছে। আবার কারও ঘর ভেঙে দিয়েছে।  বসতঘর হারিয়ে এখন অনেকেই আশ্রয়হীন। আর ভিটে হারিয়ে কেউ ভূমিহীন। ঘরের ভেতর থাকা মালামাল হারিয়ে কেউবা আবার সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রেমালের আঘাতে জেলাতে মোট ৪০৩টি বসতঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৪ হাজার ৩৯৯টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা রামগতি, এরপর কমলনগর উপজেলা।

রামগতি উপজেলাতে ২৫৩টি বসতঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮৪টি। কমলনগরে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪৫টি, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮০টি। রায়পুরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ২৭টি এবং রামগঞ্জে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি ও আংশিক সাতটি ঘর।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এদের অনেকেই কৃষক কিংবা জেলে। প্রতিনিয়ত এরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য পড়ে সর্বহারা হচ্ছেন। যাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরাই’ অবস্থা, তাদের পক্ষে এসব দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আর ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাসিন্দাদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা করা হয় না।

জনপ্রতিনিধিরা কোনো কোনো এলাকা পরিদর্শন করে গেলেও সহযোগিতার আশ্বাস দেননি। আর অর্থকড়ি না থাকায় নতুন বসতি স্থাপন বা ঘর মেরামতের উদ্যোগ নিতে পারছেন না উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারছেন না কেউ কেউ।

যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসেনি, তাই সহায়তা করা যাচ্ছে না।

কমলনগরের চর ফলকন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত শামছুন নাহার, বিবি কহিনুর, বাধন হোসেন, পাখি বেগম, ফাতেমা আক্তার, মো. জাহাঙ্গীর, বিবি আয়েশা  বলেন, আমাদের থাকার ব্যবস্থা নেই। রান্না করার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। চেয়ারম্যান-মেম্বার এসে দেখে গেছেন, লণ্ডভণ্ড বাড়িঘরের ছবিও তুলে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কোনো খাদ্য সহায়তা বা আর্থিক সহায়তা করেননি। ঘর নির্মাণ তো দূরে থাক, দুই বেলা ভাত জোগাড় করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।

তারা বলেন, শুনেছি দুর্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি সহায়তা আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় না। নদী আমাদের খুব কাছেই, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নদীর পাড়েই থাকতে হয়। জলোচ্ছ্বাসে ঘর নিয়ে গেছে, বসতভিটাও নিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশারেফ হোসেনের মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ না করা কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ঘর মেরামত বা নির্মাণের জন্য নগদ অর্থ কিংবা টিন বরাদ্দ আসেনি। তাই সহযোগিতা করা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে আশা করি ঈদের আগেই খাদ্য সহায়তা করা যাবে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বরাদ্দ এলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।

নদীভাঙন | জলবায়ু আরও সংবাদ

স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ করছে ছাত্ররা

জোয়ারের পানিতে কমলনগর-রামগতিতে বীজতলা ও কাঁচা-পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি

টানা জোয়ারের পানিতে ডুবেছে মেঘনার উপকূল

‘চেয়ারম্যান-মেম্বার আইসা দেইখা গেছে, কোনো সহযোগিতা দেয়নি’

১৯৭০ সালের পর থেকে লক্ষ্মীপুরে ১৫২ ভূমিকম্প অনুভূত

মিধিলি: মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব মেঘনার ৪০ বেদে পরিবার

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com