স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গায়ে ২৪ ঘণ্টার সেবার কথা বলা হলেও নামমাত্র হাজিরা দিয়েই ডাক্তার তুলে নিচ্ছেন প্রতি মাসের বেতন-ভাতা। পদ থাকলেও সবগুলোই রয়েছে খালি। এভাবেই চলছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। ঢিলেঢালাভাবে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) দিয়ে চলছে বড়খেরী ও চর আলগী ইউনিয়নের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
সরেজমিনে চর রমিজ ইউনিয়ন ও চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় আরেক চিত্র। উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) পদটি থাকা সত্বেও দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে অবহেলার কারণে নূন্যতম স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না ওই ইউনিয়নের খেটেখাওয়া মানুষগুলো।
চর রমিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) রাসেল আমিন বাবু এবং চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) সোহরাব হোসেন সুজন কর্মস্থলে না এসে মাসে দুই-একদিন নামমাত্র উপস্থিত হয়ে বেতন-ভাতা তুলছেন। কয়েক বছর ধরে এভাবে দায়িত্বে অবহেলা করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নামমাত্র চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষিপ্ত ওই ইউনিয়নের রোগীরা। রোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, তারা নাকি ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসার সময় নেই তাদের। তবে, মাঝেমধ্যে আসেন কিন্তু তা রোগীদের সেবা দিতে নয়, আসেন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে।
এলাকাবাসী জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেল আমিন বাবু ও সোহরাব হোসেন সুজনের টাকার নেশা থাকলে তারা এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবে। তাহলে নতুনরা কাজের সুযোগ পাবে, না হয় তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। তাদের সময় নেই বা দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাধারণ রোগীরা কষ্ট করবে এটা কেমন কথা?
সাধারণ মানুষের জন্য স্থাপিত চরগাজী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ও সেকমো পদটি শুন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা বঞ্ছিত চরগাজী ইউনিয়নের ৪২,৮৯০ জন মানুষ। এছাড়া নূন্যতম স্বাস্থ্য সেবাও পাচ্ছে না চর রমিজ ইউনিয়নের ৪২,৭৩৯ জন, চর বাদাম ইউনিয়নের ২১,২৬৬ জন মেহনতি মানুষগুলো।
৭নং চর রমিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছারওয়ার বলেন, চর রমিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) রাসেল আমিন বাবু দীর্ঘ তিন বছর ধরে দায়িত্বে অবহেলা করছেন। প্রতিদিন কর্মস্থলে না এসে মাসের ঊনত্রিশ তারিখে নামমাত্র উপস্থিত হয়ে বেতন-ভাতা তুলে নিয়ে যান। এবিষয়ে উপজেলা ও জেলা মিটিংয়ে কয়েকবার বলেছি এবং সিভিন সার্জন মহোদয়কেও অবহতি করেও এখন পর্যন্ত সুফল পাইনি।
চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) সোহরাব হোসেন সুজনের বিষয়ে একই কথা বলেছেন ২নং চর বাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম। তবে, এবিষয়ে চর রমিজ ও চর বাদাম ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে রামগতি ৩১ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবিদা সুলতানা কর্মস্থলে না এসে বেতন-ভাতা তুলছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল অত্র কমপ্লেক্সে নিয়োগের পর দুই-তিন এসেছিলেন বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে রামগতি ৩১ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুর রহিম বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে এখন পর্যন্ত দায়িত্বে অবহেলা করায় তাকে শোকজ করলেও এখনো কোন জবাব পাইনি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেন জানান, চর রমিজ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) রাসেল আমিন বাবু এবং চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) সোহরাব হোসেন সুজন কর্মস্থলে সব সময় না থাকলেও মাসিক মিটিংগুলোতে উপস্থিত থাকেন।
দুই সেকমো’র দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, বহুবার তাদের শোকজ করা হয়েছে। কয়েকবার তাদের বেতন বন্ধ করা হয়েছিল, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
0Share