লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তারিখে। সে হিসেবে আজ ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল সোমবার লক্ষ্মীপুরে করোনা ভাইরাস প্রাপ্তির একবছর পূর্ন হয়েছে। জেলায় প্রথম রোগির সন্ধান মিলে রামগঞ্জে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক পোশাক শ্রমিকের মাধ্যমে। এরপর ঘটে নানা ঘটনা। কিন্ত এক বছর পর সেগুলো যেন এক অন্যরকম ইতিহাস। প্রকৃতির কি খেলা । এক বছর পর একই সময় আবার একই ভাবে আতংক নিয়ে দেখা দিয়েছে করোনা।
এক বছর আগে যা ঘটেছিল: মূলত ১১ এপ্রিল রাত প্রায় ১০টার পর জেলার রামগঞ্জে করোনা প্রাপ্তির বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো উপজেলার লোকজনদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মূর্হুতেই রামগঞ্জের রাস্তাঘাট অনেকটা ফাকাঁ হয়ে যায়। মানুষ যে যেভাবে পেরেছে বাসা-বাড়িতে নিজে নিজে বন্ধি হয়ে গিয়েছিল। শুরু হয়ে গেল অঘোষিত লকডাউন। মিডিয়া খবর আসে পরে দিন ১২ এপ্রিল রবিবার। ১৩ এপ্রিল থেকে জেলা প্রশাসন জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে ।
আক্রান্ত ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি ছিল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে। সে ব্যক্তি ভয়ে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে দরবেশপুর ইউনিয়নের মাঝিরগাঁও গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিল। কিন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ, সিভিল প্রশাসন আর পুলিশ প্রশাসন তাকে অনেকটা অভিযান করে ধরে নিয়ে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে।
ওই ব্যক্তির বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িসহ ১০টি বাড়ি অবরুদ্ধ বা লকডাউন করে দেয় পুলিশ। শুধু সেখানেও শেষ ছিল না, ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ থেকে আসার পর যত লোকের সাথে মিশেছে এবং যত জায়গায় গেছে সবার মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রামগঞ্জের আতংক ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলায় । সবার মাঝে ছিল টানাটন উত্তেজনা। কি যেন হয় ! উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে যখন ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা আরও ১২ জনের দেহে করোনা পাওয়া যায়।
এরপর তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার দ্বিতীয় করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলে রামগতিতে। তিনিও নারায়ণগঞ্জের তাবলিগ জামাত থেকে এসেছিলেন। শুরু হয় নতুন মোড়। তাবলিগ জামাতিদের কে লোকজন ভয় করতে থাকে। এরপর আরো কত কি ? তারপরে প্রতিদিনই একজন ২ জন করে করোনা রোগি বাড়তে থাকে।
প্রথম মৃত্যু: ২৩ এপ্রিল তারিখে জেলা সিভিল অফিস লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ দেয়। তবে ওই ব্যক্তি এর ১১দিন আগে ১২ এপ্রিল তারিখে রামগঞ্জে করোনা সদৃশ উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাঠানো হলে সেখান থেকে করোনা পজেটিভ ফলাফল আসে। ছড়িয়ে পড়ে আরো আতংক।
মোট মৃত্যু: আজ ১২ এপ্রিল পর্যন্ত পুরো এক বছরে লক্ষ্মীপুরে করোনায় মারা গিয়েছে ৪৪ ব্যক্তি। যার মধ্যে ১৫ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছিল। ২৯ জনের মৃত্যুর পর জানা গিয়েছিল যে, তাদের মৃত্যু হয় করোনায়। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫, রায়পুরে ৩, রামগঞ্জে ১৩, কমলনগরে ১ এবং রামগতিতে ২ জন। এর বাহিরে আরো ৩৪ ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গিয়েছিল। সে নিয়ে মৃত্যের মোট সংখ্যা ৭৮জন।
করোনায় বিশ্ব মিডিয়ায় লক্ষ্মীপুর: এর আগে ১৮ মার্চ তারিখে রায়পুরে করোনামুক্তির একটি দোয়া মাহফিল নিয়ে বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক মিডিয়ায়ও নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল। ৭১ টেলিভিশনে রায়পুরের সে মাহিফিলের আলোচনা চলেছিল বহু দিন। কিন্ত করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করা হলেও রায়পুরে করোনা শনাক্ত হয় জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে বহু পরে।
মোট করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি: ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় ২ হাজার ৫শ ৮৩ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬শ ৮১ রায়পুরে ১শ ৮৮, রামগঞ্জে ৩শ ২৬, কমলনগরে ২শ ৩৫ এবং রামগতিতে ১ম ৫৩ ব্যক্তির দেহে কেরোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়।
মৃতদেহ কবর ও সৎকার করে সেচ্ছাসেবি সংগঠন: করোনা কিংবা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তার কাছে যাচ্ছে না মানুষ। এমনকি নিকট আত্মীয়রাও এগিয়ে আসছে না। লাশ ধরছে না কেউ। ঠিক সেই সময় লক্ষ্মীপুরে করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে একের পর এক মরদেহ দাফন করে যাচ্ছেন কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তাদের কাছে ফোন আসলেই ছুটে যান মৃত ব্যক্তির বাড়িতে। মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর যত রাতই হোক না কেন তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ বুঝে নেন। হোক তা করোনায় কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত। মৃতের গোসল থেকে শুরু করে জানাজা দাফন-কাফন সবই করেন তারা।
এ সকল সংগঠনগুলোর মধ্যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সবুজ বাংলাদেশ, নন্দন ফাউন্ডেশন, মেঘ ফাউন্ডেশনসহ আছে আরো কিছু সংগঠন।
কিন্ত করোনায় লক্ষ্মীপুরে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সুপরিচিত বা প্রখ্যাত ব্যক্তিরও মৃত্যু হয়। যাদের মধ্যে আছেন,,,
0Share