আবদুর রহমান বিশ্বাস: লক্ষ্মীপুরের গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে চোখ ওঠা রোগ, প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, নারী পুরুষ হঠাৎ করে লক্ষ্মীপুরের গ্রাম গঞ্চে বাড়ছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা। জেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের চক্ষু বিভাগেও দেখা গেছে রোগীদের ভিড়। এ রোগে আক্রান্ত হয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল/মাদরাসায় যেতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া হাসপাতালেও বেড়েছে এ রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে। একে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস বা চোখের আবরণ কনজাংটিভার প্রদাহ। সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে। ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ হলো চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা, খচখচ করা বা অস্বস্তি। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখের নিচের অংশ ফুলে ও লাল হয়ে যায়। চোখ জ্বলে ও চুলকাতে থাকে। আলোয় চোখে আরও অস্বস্তি হয়। কনজাংটিভাইটিস রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়। রোগীর ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ অন্যরা ব্যবহার করলে এতে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া কনজাংটিভাইটিসের জন্য দায়ী ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে যারা থাকে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হয়। জেলার বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, স্কুল ও মাদরাসায় আক্রান্ত শিক্ষার্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছুুটি দেয়া হচ্ছে।
জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি এবং কমলনগর উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যে কারণে ফার্মেসি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে এ রোগে আক্রান্তদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানা গেছে, সাধারণত গরম ও বর্ষার এ সময়ে চোখ ওঠা রোগটি দেখা যায়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ রোগের প্রকোপ খুবই বেশি। গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার সর্বত্রই এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় তারা চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ফার্মেসি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভিড় করছেন।
আরাফাত হোসেন বলেন, চোখ উঠলে চোখ লাল হয়ে যায়, কিছুটা ব্যথা ও খচখচ ভাব থাকে। এর সঙ্গে থাকে চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা। চোখ ওঠা হতে পারে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এ ছাড়া ভাইরাস আক্রমণের কারণেও চোখ ওঠার সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ সময়ই ভাইরাসে চোখ ওঠে।
পল্লী চিকিৎসক মেহেদী হাসান জানান, জীবনে একবারও চোখ ওঠেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। আর পরিবারে কারো চোখ ওঠেছে কিন্তু অন্য কেউ আক্রান্ত হয়নি এমন ঘটনা কম ঘটে। কিন্তু চোখ উঠলে চিন্তার কিছু নেই। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে চোখ ওঠা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশে শীতকালীন আবহাওয়ায় চোখ ওঠার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে চোখ ওঠার পরে অবশ্যই চোখের বাড়তি যত্ন নিতে হয়।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আমীনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন,
‘এই রোগটি ভাইরাসজনিত। ছোঁয়াচে হওয়ায় এটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। একজন আক্রান্ত হলে বাড়ির ও আশপাশের সবাই আক্রান্ত হয়ে যায়। তবে একটু সতর্ক থাকলে ও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে সহজেই রোগটি সেরে যায়।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের জানান,
যেহেতু এটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই আক্রান্তরা নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত চোখে নোংরা পানি, ধুলাবালি, দূষিত বাতাস যেন চোখে প্রবেশ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া সকালে ওঠার পর চোখে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অনেকে চোখে ওঠলে বারবার পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন বা চোখে পানির ঝাপটা দেন। এটি মোটেই ঠিক নয়।এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ নিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় সানগ্লাস পরতে হবে। তাহলে রোদে চোখ জ্বলা কমাবে।
0Share