এমআর সুমন, রায়পুর | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে অনেক জরুরি রোগীর সেবা নিচ্ছেন প্রশাসনের ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্সেগুলো। উপজেলা প্রশাসনের নিঃস্ব তহবিল থেকে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে মাত্র ৩০০ টাকায় এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বল্প খরচে অ্যাপভিত্তিক এ অ্যাম্বুলেন্স সেবায় বেশি উপকৃত হচ্ছেন দরিদ্র মানুষেরা। অটোরিকশা বা ইজিবাইকের বদলে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত ও নিরাপদে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন তাঁরা।
মোবালের প্লে স্টোর থেকে প্রথমে স্বপ্নযাত্রা নামের অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। সেখান থেকে বিস্তারিত তথ্য ও সেবা পাওয়া যায় অ্যাম্বুলেন্সের। পরে প্রশিক্ষিত চালকই রোগীকে নিয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে। গর্ভবতী মহিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অগ্নিকান্ড সহ দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জন্য এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা রয়েছে বিশেষ ছাড়।
জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে রায়পুর উপজেলায় শুরু হয় ‘স্বপ্নযাত্রা’ সার্ভিসের। উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে রোগীদের সেবায় কাজ করছে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। গত এক বছরে ‘স্বপ্নযাত্রা’র অ্যাম্বুলেন্স প্রায় ১৫’শ রোগীকে অল্প ভাড়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ও জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে “স্বপ্নযাত্রা’ নামের অ্যাম্বুলেন্সসেবা চালু করেছে উপজেলা প্রশাসন। প্রশাসনের তরফ থেকে স্বল্প খরচে উন্নত সেবাতে সবার নজর কেড়েছে “স্বপ্নযাত্রা’। তাই চাহিদার কথা বিবেচনা করে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যাও বৃদ্ধি করেছে জেলা প্রশাসন।
সস্প্রতি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বামনী ইউনিয়নের সংবাদকর্মী মুকুল পাটোয়ারী। দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাপের সাহায্যে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন তিনি। কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যেই বাসায় পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্স। দ্রুত গতির সেবা পেয়ে স্বস্তি পান ওই সংবাদকর্মী। তার মতো উপজেলার অনেক রোগীই সেবা নিচ্ছেন ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্সের।
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিউল আজম জানান, স্বপ্নযাত্রা অ্যাম্বুলেন্স সেবার মাধ্যমে আমার এলাকার কম আয়ের মানুষের যথেষ্ট স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। পাবলিক অ্যাম্বুলেন্সের মতো এতো ভাড়াও দেয়া লাগে না। গ্রামের রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে জেলা ও উপজেলা শহরের হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দেড়-দুই হাজার টাকা ভাড়া লাগে। অনেক স্বজন সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইকে করে রোগীদের নিয়ে যান। কিন্তু এতে রোগীরা অনেক কষ্ট পান। এখন কম খরে “স্বপ্নযাত্রা’র অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে।
অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল বলেন,
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে চলছে এ কার্যক্রম। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর জন্য ৩ চালক নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাম্বুলেন্সগুলোর তত্ত্বাবধান করছে। অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও তেল খরচ রোগী পরিবহনের আয় থেকেই মেটানো হয়।
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ উল্লোখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্জন দাশ বলেন,
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ স্যার নির্দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া। সেবা কার্যক্রমটি চালু গুগল স্টোর থেকে যাত্রা নামের অ্যাপটি করার পরপরই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সারা দেশে এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃত্যুহার কমবে। এটি অ্যাপভিত্তিক সেবা। এ উদ্যোগ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউএনও।
0Share