আবুল কালাম আজাদ : উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এতে চরাঞ্চলসহ এ জেলার সর্বত্র বিষ্ফোরণ ঘটছে জনসংখ্যার। সরকার এ বিভাগের জন্য জনবল নিয়োগ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিলেও অসাধু কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবে তা কোন কাজেই আসছে না। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে চিকিৎসা বান্ধব এ সরকারের পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগকে ঘিরে হাতে নেয়া সব কার্যক্রম। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় লোকজনের মাঝে।
সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এ বিভাগের বেহাল অবস্থার কারনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন জেলা পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুন। এ বিভাগের কার্যালয় কোথায় তাও জানা নেই জেলাবাসীর। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করার পাশাপাশি রয়েছে সরকারি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগও। সংশ্লিষ্ট, দায়িত্বশীল ও একাধিক ব্যাক্তি সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নে পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় জেলার পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম এবং জনসংখ্যা রোধে বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক সংস্থা আরটিএম বাংলাদেশ’র এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে লক্ষ্মীপুর ও হবিগঞ্জ জন্ম নিয়ন্ত্রণহীন। তাদের জরিপে অসাধু কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারনে জনসংখ্যার বিষ্ফোরণ ঘটছে বলেও মাঠ পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে।
জেলা পরিবার-পরিকল্পনা কার্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলার জনবল রয়েছে ৩৭৫ জন। তম্মধ্যে পরিবার কল্যাণ সহকারী ২৬৫জন, ভিজিটর ৬৩ জন এবং এফপিআই ৪৭ জন রয়েছে। এরা নবজাতকের স্বাস্থ্য, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, পরিবার ছোট রাখা এবং মহিলা ও পুরুষদের নানা পদ্ধতি গ্রহণ বিষয়ে কাজ করে। বছরের পর বছরে কাজ তারা কাজ করলেও লক্ষ্মীপুরে জনসংখ্যা রোধ সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একজন করে ভিজিটর ও নির্ধারিত কেন্দ্র। সরকারিভাবে প্রতিমাসে ওষুধ বিতরনসহ পরিবার-পরিকল্পনা খাতে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু গ্রামীন মানুষ পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে আদৌ অবগত নন। বিভিন্ন স্তরের দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, রিকশা ও ঠেলাগাড়ির চালকসহ গ্রামের সহজ সরল মানুষের মাঝে পরিবার পরিকল্পনা কি এ সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান নেই। গ্রামের সাধারন মানুষ অভিযোগ করে বলেন, পরিবার-পরিকল্পনার বিষয় নিয়ে কখনও কেউ তাদের কাছে আসেনি। তাহলে কি তারা কোন কাজ না করেই সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করছেন ?
সরেজমিনে দেখা গেছে, একই পরিবারে ৭-৮ জন সন্তান, প্রায় লোকেরই একাধিক স্ত্রী, কেউ কেউ ৫০-৬০ বছর বয়সে বিয়ে করে ও সন্তান জন্ম দিচ্ছে। বাল্যবিবাহ অবাধে হওয়ায় অনেকের ২০-২৫ বছর বয়সে ৪-৫ জন সন্তান রয়েছে। এদেরকে পরামর্শ দেয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের লোকজন মাঠে নেই বললেই চলে। প্রতিটি ইউনিয়নে ভিজিটর, পরিবার-পরিকল্পনা মাঠকর্মী থাকলেও নিয়মিত হাজির কিংবা কাজ না করার বহু অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ প্রাইভেট ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। সরকারি ওষুধ অহরহ বিক্রি করে থাকলেও এর হিসেব কাউকেও দিতে হয় না। গ্রামের সহজ-সরল লোকজন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম নিয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রচার অভিযানে মন্থর গতি ও দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজনের অবহেলায় কারনে উপজেলায় সরকারি পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম। এ বিভাগের মাঠকর্মী ও ভিজিটরদের মাসিক নির্ধাতি অপারেশন (লাইগেশন) রোগী দেয়ার শর্ত থাকলেও সেক্ষেত্রে হচ্ছে ভিন্নরুপ। কেউ কেউ চাকরী জিইয়ে রাখার জন্য ৫-৬ সন্তানের মাকে লাইগেশন করাচ্ছে।এতে সরকারের ‘সুখী পরিবার’ কার্যক্রম সফলতার মুখ দেখছে না। ভিজিটরদের বেশিরভাগ সময়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে এমআরসহ অন্যান্য রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এরা বিনামূল্যে বিতরনকৃত জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িগুলো সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সগুলো থেকে গ্রহণ করে স্থানীয় ফার্মেসীতে বিক্রি করে দেয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ ভিজিটররা অপারেশনের নামে গ্রামের সহজ-সরল বধূদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থও হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১২ এপ্রিল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: মাসুদুল আলম অন্যত্র বদলি হন। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বিএমএ সভাপতি ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুন। তিনি মা ও শিশু কেন্দ্রসহ একাধিক দায়িত্ব পালন, বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগদান এবং প্রাইভেট প্যাকটিস করার কারণে এ দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সুযোগে ওই অফিসে কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিয়মিত অফিসে আসেন না। এবং সরকারি টাকা ভাউচার দিয়ে আত্মসাত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
0Share