এমআর সুমন, রায়পুর ॥ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সদস্য কহিনুর বেগম (৪৮)। গত ৪০ বছর আগে মেঘনার ভাঙ্গনে ভিটে-মাটি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন খাসেরহাট ও মোল্লারহাট সড়কের বেরিবাঁধের পাশে। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় স্থানীয় ভূমিহীন রফিক মিয়ার সাথে। বিয়ের পর এক এক করে বাবা ও মা মারা যায়। প্রায় ১০ বছর আগে শেষ সম্বল স্বামীকেও হারাতে হয় কহিনুরের। পরে স্বামী হারা কহিনুর এক মেয়ে-নাতনি নিয়ে তার মানবেতর জীবন-যাপন। কেও কখনো খোঁজ নেয়নি তাদের। জায়গা-জমি না থাকায় জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয় ৪৮ বছর বয়সেও।
অবশেষে ৪০ বছরের স্বপ্নপূরন করে দিলেন প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমানে সেই মেঘনার পাড়েই ঘর পেয়ে তিনি মহাখুশি। তার মতই অনেকই নদীভাঙ্গা অসহায় অন্য পরিবারগুলোকেও হাঁসতে দেখা গেছে উপজেলার দক্ষিন চরবংশি ইউপির মেঘনা নদীর পাশে মিয়ারহাট নামক এলাকায়।
কহিনুর বেগম বলেন, আমার জায়গা-জমি ছিল না। নদীর পাড়ে থাকতাম। বাবা,মা ও স্বামী মারা যাওয়ায় জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। প্রধানমন্ত্রী জায়গা দিয়েছে, ঘর দিয়েছে আমি তাতে অনেক খুশি। যে মেঘনা সব হারিয়েছি। সেই মেঘনার বুকেই সব ফিরে পেয়েছি। এক কথায় বললে চলে পূর্বের নিজেদের ভিটা-মাটি মনে হচ্ছে আছি। তার জন্য নামাজ পড়ে মোনাজাত করব। আমাদের মতো গরিবদের পাশে যেন তিনি সারাজীবন থাকতে পারেন। আমাদের চোখের পানিটা যেন মুছে যায়। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীর কাছে সম্মান পায়।
আরেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সদস্য হাজেরা বেগম বলেন, আমাদের সংসারে পাঁচজন লোক। মাঠে ঘাটে কাজ করে খাই। ছেলে-মেয়েসহ নিজের জন্ম অন্যের ঘরে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর নিজের নামে তিনিই কিনা পেলেন জমির দলিল ও ঘরের কাগজ! তাই উচ্ছ্বাস যেন কমছে না হাজেরাও। বিনামূল্যে জমি-ঘর পাব কোনোদিন ভাবিনি।
হাজেরা নতুন পাওয়া ঘর ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে বললেন, আধা পাকা ঘরটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে। পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবেন।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের মধ্যে ৪৫ টি ভূমিহীন পরিবারের মাঝে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন ও তাদের শিশুদের জন্য শিশুপার্ক উদ্ধোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। এর আগে গত তিন মাস ধরে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিন চৌধুরীর পরিচালনায় আশ্রায়ন প্রকল্প ‘স্বপ্নকুটির’ ও শিশুপার্ক করা হয়। জমি কিনে ঘর করার স্বপ্নও তিনি কখনও দেখেননি এরা। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া আধাপাকা ঘরে কষ্ট দূর হলো এসব পরিবারগুলোর। জীবনের বাকি সময়টুকু মাথা গোঁজার ঠাই হলো সেই ভেঙ্গে নেওয়া মেঘনা নদীর পাড়েই।
প্রধানমন্ত্রীর সেরা উপহার “ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদান” আশ্রয়ণ প্রকল্প “স্বপ্নকুটির শিশুপার্ক” (মিয়ারহাট সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প)।”জলপদ্ম” (স্বপ্নকুটির আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুরের নবনির্মিত ঘাটলা)। “গার্লস ফ্যাসিলিটিজ রুম” (রচিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়)।”পাবলিক লাইব্রেরি, ফিটনেস ক্লাব এবং অডিটোরিয়াম”এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন (সরকারি মার্চ্চেন্টস একাডেমী সংলগ্ন খাস জমি)। পৌরসভার মধ্যবাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের শুভ সূচনা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্লাব (রায়পুর সরকারি মার্চ্চেন্টস একাডেমী)। চরআবাবিল ইউপির উদমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য “হাইজেনিক কর্ণার” স্থাপনসহ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে ইনোভেটিভ কার্যক্রম ও নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।
রায়পুরের ইউএনও সাবরীন চৌধুরী বলেন, স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা ও কর্মসংস্থানের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। এছাড়াও তাঁরা সাবাই বেশি আনন্দীত নদী ভেঙ্গে নেওয়া সেই মেঘনা নদীর পাড়েই নতুন ঠিকনা খুজে পেয়েছেন।
প্রকাশকাল ॥ ২৯ অক্টোবর ২০২১ ॥
0Share