আব্দুর রহমান বিশ্বাস: ঠিক মতো হাটতে পারে না। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। শেষ বয়সে চলাফেরার শক্তির অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন। দুমুঠো অন্নের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় মানবিক মানুষের দিকে। নেই মাথাগোঁজার ঠাইটুকুও। বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম (৭০) শেষ বয়সে বসবাস করছেন অন্যের জায়গায়। ছোট একটি খুপড়ি ঘরে।
তাও আবার দুর্বিষহ অবস্থা। তবুও নিরুপায় হয়ে সেখাইনেই বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। বৃদ্ধা ফিরোজা বেগমের বাড়ি কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালীয়া গ্রামে। কিন্তু সেখানে তার ভিটেবাড়ি কিছুই নেই। নিকটাত্মীয় বলতে ৩ ছেলে আর ২ মেয়ে থাকলে ও তার তাকে ছেড়ে ২০ বছর আগে অন্যত্রে চলে যান। বাকি এক জন মারা যান।
এখন পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান নেই। সন্তানেরা ফিরে আসবে সেই আশায় ২০ বছর ধরে স্বামীর মুখ চেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মণ পরিহাস চার বছর আগে সকল বন্ধন ছেড়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তিনি। বয়সের ভারে হাঁটাচলা তার পক্ষে কষ্টকর। এভাবেই কষ্টে দিন পার করছেন ভূমিহীন বৃদ্ধা ফিরোজা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের হাফেজিয়া মাদ্রাসার উত্তর পাশে আব্দুল কাদেরর বাগানে কলা পাতা, নারিকেল পাতা, সুপারির পাতায়ায় মোড়ানো একটি খুপড়ি ঘর।
দিনের বেলায় বাতি ছাড়া দেখা যায় না। সেখানে এলোমেলো পুরনো কাপড়-চোপড়। এককোণে চুলা, আর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাড়ি-পাতিল। এসব নিয়েই তার একাকি সংসার। কষ্টের জীবনের কথা জানতে চাইলে অশ্রুভেজা চোখে বৃদ্ধা হাফেজা বলেন, ‘বাবারে খুব কষ্ট করি। প্রতিবেশির জায়গায় লতা পাতা দিয়ে কোন রকমে থাকি। রাইতে (রাতে) বাতাসে গাও, আত (হাঁত) ও পাও ঠান্ডা ওইয়া যায়। থড়থড় কইর্যা কাঁপি। অসুখ-বিসুখ লইয়া বাড়ি বাড়ি যাইতে পারি না। টেকার (টাকা) অভাবে ওষুধ (ঔষধ) কিনতে পারি না।
এই জীবন আর ভাল লাগে নারে বাবা। একটা সরকারি ঘর যদি পাইতাম হেই ঘরে শান্তি তে মরতে পারতাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবেশীদের সহানুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে হাফেজাকে? ২০ বছর ধরে কাদিরের বাগানের জঙ্গলের ভিতরে আছে হাফেজা বেগম। স্থানীয় বাসিন্দা আরাফাত বলেন, ‘আসলেই হাফেজা বেগমের কোন জায়গা নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি হাফেজা বেগম কে যেন জায়গা সহ একটা ঘর উপহার দেয়া হয়।
0Share