উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি মাঝে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বন্যার্তদের মাঝে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ করেছে সেচ্ছাসেবি সংস্থা ‘স্বপ্ন নিয়ে’। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট জেলা সদরসহ ১০টি উপজেলায় ঢুকেছে বন্যার পানি। এতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
জাতীয় সেচ্ছাসেবি সংস্থা ‘স্বপ্ন নিয়ে’ এর ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা দেয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৫ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট জালালাবাদ সেনানিবাস । উক্ত সেনানিবাসের তত্বাবধানে ১ হাজার ৯শ পরিবারে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’। ‘স্বপ্ন নিয়ে’ প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ফেঞ্চুগঞ্জের বন্যা কবলিত বুড়ি কিয়ারী বাঁধ, উজান গঙ্গাপুর, ভেলকোনা, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন, মাইজগাঁও ইউনিয়ন, ফরিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রের কয়েকটি দুর্গম এলাকার পানিবন্দি ১ হাজার ৯শ পরিবারের মধ্যে চিড়া, মুড়ি, গুড়, পানি, খাবার স্যালাইন, বিস্কুট, মোমবাতি, দিয়াসালাই, বিতরণ করা হয়।
ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ সেনানিবাসের মেজর ফখরুল ইসলাম খান, ওয়ারেন্ট অফিসার মুজিবুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী বদরুদ্দোজা, উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের চেয়াম্যান আহমেদ জিলু, ‘স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান, পরিচালক মীর তানভীর আহমেদ, স্বপ্ন নিয়ে ব্লাড ব্যাংকের সমন্বয়ক নোমান সিদ্দিক, সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম আরিফ, সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম আরিফ, সহকারী পরিচালক ইলিয়াস হোসেন, সহকারী পরিচালক ইফতেখার হৃদয়সহ অন্যরা।
জানা যায়, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’ এর যাত্রা শুরু। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার উদ্যমী তরুণ ব্যাংকার আশরাফুল আলম হান্নান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পেশায় ব্যাংকার হলেও সামাজিক কাজ করার মাধ্যমেই চিত্তের আনন্দ অনুভব করেন। প্রতিনিয়ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এসব মহতী উদ্যোগ দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ৫৫০-৬০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে এই সংগঠনে।
এতে দেশ-বিদেশের বিভিন্নজন নানাভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। শুরুতে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম চললেও বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় এর পরিধি বিস্তৃত। করোনাকালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, নোয়াখালী জেলা ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানের মানুষকে খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে অক্সিজেন, মাস্ক, পিপিইসহ নানা সহায়তা দিয়েছে সংগঠনটি।
‘স্বপ্ন নিয়ে’ : প্রায় ৪০ এর অধিক ছাত্র-ছাত্রীকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং করপোরেট অফিসে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পডুয়া শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে করে দেওয়া হয়েছে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা। চাকরিরও ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে অনেককে। হাজার হাজার মানুষকে করে দিয়েছে রক্তের ব্যবস্থা। ৪২ জনের কৃত্রিম পা লাগানো, মাদকবিরোধী প্রচারণা, রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়া, তিনটি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ, অসহায়দের হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা, প্রবীণদের জন্য স্বপ্ন নিয়ের নির্ভরতার লাঠি উপহার, গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুক কর্নারের জন্য বই দেওয়া, দরিদ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দরিদ্র, মেধাবী ও দূর থেকে আসা ছাত্রদের সাইকেল উপহার, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাতা বিতরণ, স্কুলে বৈদ্যুতিক পাখা উপহার, দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মধ্যে পোশাক বিতরণ, রিকশাচালক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রেইনকোট বিতরণ, বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা চালানো, দুরারোগ্য ব্যাধিতে যারা ভুগছেন- তাদের অপারেশনের ব্যবস্থা করা সংগঠনটির কাজের মধ্যে অন্যতম।
ঢাকায় এবং নোয়াখালীতে চিকিৎসার জন্য আগত, চাকরি পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আগতদের জরুরিভাবে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এই মানবিক কাজে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছে স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান।
0Share