বয়স্ক, নারী, পুরুষ, শিশু মিলে বাড়িতে ১০-১২ জন মানুষ। এরা সবাই সোমবার পুরো দিনের উপবাস। সারাদিনে কিছুই খেতে পারেন নি। এদের মধ্যে নুর নাহার বেগম, কহিনুর বেগম এবং জোবেদা এদের সবার বয়স ৬০ বছরের বেশি। শরীরের অবস্থা দেখে কিছু খেয়েছেন কিনা এমন জিজ্ঞাসা করলে হাউমাউ করে কেঁদে জানালো বাড়ি ঘর নদীতে চলে গেছে। গত দুই দিন থেকে রান্না করার মতো কোন উপায় নেই। খাবার নেই। হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। সে কারণে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে সোমবার (১৫ আগষ্ট) বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা কিছুই খেতে পারেনি। বিকেলে পাউরুটি এনে খাবেন এমনটা জানালো কহিনুর। অন্যদিকে বৃদ্ধা নুর নাহার জানিয়েছিল উপবাসের মধ্যে গত ২ রাত তিনি ঘুমানোর কোন জায়গা খুঁজে পায়নি। এখন না ঘুমাতে পেরে তিনি অসুস্থবোধ করছেন।
রবিবার (১৫ আগষ্ট) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফলকন উপজেলার লুধুয়া এলাকার জমাদার বাড়ি ও সফি উল্লাহ মেম্বার বাড়িতে গিয়ে এমন করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। এসময় দেখা যায় আশপাশের ৩টি বাড়ির বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে। বাড়ির নারী পুরুষ অনেকেই চোখের পানি মুছতে মুছতে কেউ গাছ কাটছে, কেউ ঘর ভাঙ্গছে। এ ২-৩দিন বাড়িতে দেখা গেছে যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দৃশ্য।
এসময় সফি উল্লাহ মেম্বার বাড়ির ইকবাল জানায়, গত ২ দিনের মধ্যে তাদের বিশাল একটি বাড়ি পুরো ভেঙ্গে গেছে। ওই বাড়িতে ১০টি পরিবারের বসতি ছিল। যাদের মধ্যে ফলকন ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের নারী প্রতিনিধি শাহিনুরের একটি ঘরও একরাতে ভেঙ্গে গেছে। আশপাশের আরো ৩টি বাড়িও একরাতে ভেঙ্গে গেছে। এখন তারা সব অসহায়। বাড়ির কেউই সারাদিন কিছু খেতে পারেনি। আশাপাশের কেউ এগিয়েও আসেনি। প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধি কারো থেকে অন্তত শুকনো খাবারও তারা পায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন বাঘা জানিয়েছেন, গত ২-৩ দিনে তার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি বাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। তবে উপবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা না বলে ফোন রেখে দেন। পরে আবার ফোন করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে সন্ধ্যায় কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পীর নিকট জানতে চাইলে, রাতের মধ্যেই তিনি ওই অসহায় পরিবার গুলোর খাবারের ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের প্রবল নদী ভাঙ্গন কবলিত কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে মাত্র পাচঁটি ইউনিয়ন বাদে বাকি সবগুলো ইউনিয়নে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন চলছে। কিন্ত গত ৪-৫ বছর থেকে বর্ষা সময় নদীর জোয়ার সরাসরি লোকালয়ে চলে আসে। এতে নতুন এক সমস্যায় পড়েছে এ দু উপজেলার বাসিন্দারা। কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য ২০২০ সালে প্রায় ৩১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২১ সালের জানুয়াতি প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন হয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এমতাবস্থায় এ প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করছে স্থানীয় লোকজন। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত মেঘনার জোয়ার ও টেউয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এ দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।
0Share