ঢাকা : বুধবার (২৬ এপ্রিল ২০১৭) রাজধানী ঢাকায় দৃক গ্যালারিতে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী ‘উপকূল বাংলাদেশ আলোকচিত্র প্রদর্শনী’। জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন উপকূলের চিত্র তুলে ধরতে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীতে বদলে যাওয়া উপকূলের গল্প তুলে ধরা হবে ছবির ভাষায়।
প্রদর্শনীতে প্রধানত তিনজন আলোচিত্রী-সাংবাদিকের তোলা ছবি তুলে ধরা হবে। এরা হলেন, দীন মোহাম্মদ শিবলী, রফিকুল ইসলাম মন্টু ও হাবিব তরিকুল। এরা উপকূলের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে জলবায়ু পরিবর্তনের চিত্রগুলো তুলে এনেছেন।
বুধবার শুরুর দিন বিকেল ৩টায় প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও সূচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বিকাল ৫টায়। এতে উন্নয়ন সংস্থা সমূহের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ পেশাজীবী নাগরিকগণ উপস্থিত থাকবেন।
দৃক গ্যালারি। প্রদর্শনীর স্থল দৃক গ্যালারি। ঠিকানা : বাড়ি-৫৮, রোড-১৫/এ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। প্রদর্শনী প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। ২৮ এপ্রিল শুক্রবার রাত ৮টায় প্রদর্শনীর সমাপ্তি ঘটবে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুগুলোকে উন্নয়নধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য সামনে রেখে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অনেক ইস্যু সবার অগোচরে থেকে যাচ্ছে। সেগুলোকে সামনে এনে উন্নয়নধারায় সম্পৃক্ত করতে সহায়তা করবে এই প্রদর্শনী। উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, এভাবেই উপকূলে ফিরে আসবে একটি সুন্দর আগামী।
প্রদর্শনীতে যাদের ছবি যাচ্ছে, পেশাগতভাবে তারা প্রত্যেকেই অনেক মূল্যবাণ কাজ করেছেন। পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি। এরা হলেন :
দীন মোহাম্মদ শিবলী। তিনি মূলত ঢাকাবেইজড পেশাদার আলোকচিত্রী। ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফিতেও বিশেষ আগ্রহ রয়েছে তার। কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক ভিন্ন ইস্যুর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জীবনব্যাপী কাজের অংশ হিসাবে ২০০৩ সাল থেকে তিনি ডকুমেন্টেশন সংরক্ষণ করছেন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য দুর্লভ ছবি তুলেছেন তিনি। তৈরি করেছেন ডকুমেন্টারি। একটি ফটোগ্রাফি স্কুলের অধ্যক্ষ তিনি।
রফিকুল ইসলাম মন্টু। উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক হিসাবে পরিচিতি রয়েছে তার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। সমগ্র উপকূল ঘুরে অসংখ্য প্রতিবেদন লিখছেন, ছবি তুলছেন। কাজ করেছেন প্রথম আলো, সমকাল, কালের কণ্ঠ, সংবাদ, ভোরের কাগজ, মানবজমিন, বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। জীবনব্যাপী কাজের ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন উপকূলকে। সাংবাদিকতায় তিনিই বাংলাদেশে প্রথম উপকূল নিয়ে এতটা নিবিড়ভাবে কাজ শুরু করেছেন।
সাংবাদিকতায় অর্জন করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ২০১৫ সালে পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম অ্যাওয়ার্ড, ইউনিসেফ-মীনা অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে ডিআরইউ-গ্রামীণফোন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৮ সালে পটুয়াখালীর চরাঞ্চলের সরেজমিন সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার’, ২০০০ সালে বরগুনার প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘এফপিএবি পুরস্কার’, ২০০১ সালে ভোলার শিশুদের নিয়ে ফিচারের জন্য ‘পিআইবি-ইউনিসেফ ফিচার পুরস্কার’, ২০০৬ সালে দুবলার চরের শিশুদের ওপর অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য ‘ইউনিসেফ-মীনা অ্যাওয়ার্ড’, একই বছর দক্ষিণাঞ্চলের নদী ভাঙনের ওপর সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘ইউএনডিপি-বাংলাদেশ সরকার পুরস্কার’, ২০১০ সালে জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন উপকূল বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ‘কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ড’। এছাড়াও ১৯৮৮ সালে বরগুনা জেলা পর্যায়ে ‘একুশে সাহিত্য পুরস্কার’ ও ‘জাতীয় তরুণ সংঘ পুরস্কার’ অর্জন করেন তিনি।
তরিকুল হাবিব। মাল্টিমিডিয়া ভিজ্যুয়াল আর্টষ্ট হিসাবে পরিচিত। ২০০৭ সালে ফিল্যান্স ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তিনি পেশায় প্রবেশ করেন। তার তোলা অসংখ্য ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন প্রকাশনায় স্থান পেয়েছে। পত্রিকাগুলোর মধ্যে ঢাকা ট্রিবিউন, ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট, নিউএজ, ডেইলি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। তার তোলা ছবি বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। তিনি সিসিডিবি’র কমিউনিকেশন বিভাগে কর্মরত।
সিসিডিবি। আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মানবিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৩ সালে। তবে ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী সাইক্লোন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তীকালে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সহায়তা নিয়ে। দেশের অধিকাংশ স্থানে কাজ করছে সিসিডিবি। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের কেন্দ্রে রয়েছে গ্রামামাঞ্চলে কমিউনিটি ও মানবিক উন্নয়ন।
চিত্র প্রদর্শনী প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘‘আমার তোলা ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে, এটা তো নি:সন্দেহে আমার জন্য আনন্দের খবর। তবে আমি মনে করি, শুধু আমার জন্য নয়, গোটা উপকূলবাসীর জন্য এটি সুসংবাদ। কারণ এর মধ্যদিয়ে উপকূলের সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘উপকূলের হাজারো সংকটের খবর সবার অন্তরালেই থেকে যায়। প্রান্তিকে কী ঘটছে, তা কেন্দ্রে পৌঁছাচ্ছে না যথাযথভাবে। ফলে সমস্যা সমাধানে ধীরগতি। প্রদর্শনীর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন উপকূলের চিত্র এবার রাজধানীর চশমা অাঁটা মানুষগুলোর চোখের সামনে উঠে আসবে। এর মাধ্যমে উপকূলের বহুমূখী সংকটের চিত্র একসঙ্গে সবাইকে দেখানো সম্ভব হবে। উপকূলের এই বিপন্নতার দৃশ্য আমরা কেউই দেখতে চাই না। আমাদের কাম্য সংকটবিহিন বসবাসযোগ্য উপকূল। এই প্রদর্শনীর মধ্যদিয়ে হয়তো সেদিকেই এগোবে উপকূল।’’
0Share